ছবি : সংগৃহীত

প্রতিদিনের মতো সেদিনেও ছিল রাঙা সকাল। নাস্তা শেষে কর্মস্থলে যাত্রায় অনেকের হাতে ছিল দুপুরের খাবার। কেউ কেউ মধ্য দুপরের ছুটিতে ঘরে ফেরার তাড়া নিয়েই হাসিমুখে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কে জানতো এ দিনটিই ছিল অনেকের জীবনে শেষ দিন। অল্প সময় পরেই চোখের সামনে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ভেঙে পড়বে ভবন। শুনতে হবে মৃত্যুর আর্তনাদ। বাঁচার আকুতি জানাতে জানাতে নিজেকেও চলে যেতে হবে অন্তিম যাত্রায়।

২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। শিল্প এলাকা সাভারের নয়তলা ভবন রানা প্লাজা। নিচে বিপণিবিতান। উপরে দুটি গার্মেন্টস কারখানা। শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অনিশ্চয়তা। ভবনে ফাটল দেখা গেছে, সবাই অনিরাপদ। তা সত্ত্বেও ২৪ তারিখ এই ভবনে কারখানার কাজ শুরু হয়। মালিক পক্ষ নিয়ে সুপারভাইজার ঘোষণা করেন ভবন নিরাপদ। আতঙ্কের মধ্যে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সেদিন কাজে যোগ দিয়েছিলেন পোশাক শ্রমিকরা! এরপর সকাল ৯টার মধ্যেই ধসে পড়ে নয় তলা ভবন। শুরু হয় ‘রানা প্লাজা ট্রাজেডি’ নামে দীর্ঘ এক দুর্দশার গল্প। যা গোটা বিশ্ব বিবেককে চরমভাবে নাড়া দিয়েছিল।

নয় বছর আগে আজকের দিনে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় সেই ঘটনার পর আশা করেছিলাম দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হবে। তেমনি বাড়বে শ্রমিক নিরাপত্তা, অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হবে। আহতদের সুচিকিৎসা হবে। পাশাপাশি যে কাজটি সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল আহত ও পঙ্গু শ্রমিকদের স্থায়ী আর্থিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো প্রত্যাশা কখনোই প্রাপ্তিকে পরিপূর্ণভাবে ছুঁতে পারে না। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় এত মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও দুনিয়া নাড়া দেওয়া ঘটনায় প্রাপ্তি যা মিলেছে, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং আফসোস রয়েই গেছে। এটি অন্ততকালের আফসোস কি না জানি না। তবে চলমান এইটুকু বলতে পারি।

প্রতি বছরের ২৪ এপ্রিল এলেই ঘটনাস্থলে স্বজনহারা মানুষের কান্না দেখা যায়। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করা মানুষের আর্তনাদ ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। কারো সুচিকিৎসার অভাব। কেউ অভাবের তাড়নায় মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করেন। কেউ বিচারের আশায় প্রহর গুনছেন বছরের পর বছর। স্বজনহারা অনেক পরিবার পথে বসেছে। তাদের মধ্যে কারো কারো হয়তো দেখার আর কেউ নেই। জানি না এসব কিছুর সমাধান মিলবে কি না?

প্রতি বছরের ২৪ এপ্রিল এলেই ঘটনাস্থলে স্বজনহারা মানুষের কান্না দেখা যায়। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করা মানুষের আর্তনাদ ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। কারো সুচিকিৎসার অভাব। কেউ অভাবের তাড়নায় মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করেন...

কারখানার আহত আড়াই হাজার শ্রমিক পরিবারের প্রায় সবারই নাকি করুণ অবস্থা। ভবন ভেঙে সেদিন এক হাজার ১৩৮ শ্রমিক প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। ওই দুর্ঘটনার পর নিরাপদ কর্মপরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করে। তা আর পুনর্বহাল হয়নি। অনেক দেশ বাংলাদেশে থেকে কাজের মুখ ফিরিয়ে নেয়। যার খেসারত কিন্তু এখনো টানতে হচ্ছে।

মাত্র কয়েকজনের অবহেলায় এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ গেল, পঙ্গু হলো অনেকে। পথে নামল বহু পরিবার। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো দেশ। অথচ অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেল না। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক। আহত অনেকেই হয়তো অপরাধীদের বিচার না দেখেই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন, অনেকে হয়তো বিদায় নেওয়ার পথে।

ঘটনার পরপরই মূল অপরাধীকে রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনো রানাসহ অনেকেই জেলে। কিন্তু বিচার কাজ শেষ হয়নি। দেশে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। সামান্য মামলাও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলা দ্রুততার সঙ্গে শেষ হওয়ার প্রত্যাশা আমার মতো অনেকেরই ছিল। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও নির্ধারিত নয়। নিম্ন আদালতে রায়ের পর উচ্চ আদালতের পর্ব তো রয়েই গেছে।

ঘটনার দিনই সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। পরের বছর দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করে আরেকটি মামলা। এরমধ্যে দুদকের মামলায় সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় রানার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এই রায় দেন। অপরদিকে রানার মা মর্জিনা বেগমকে ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার সম্পদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন বিচারক।

হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে ভবন ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাভার মডেল থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। আর রাজউক কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের দায়ের করা অন্য মামলাটিতে ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।

‘অবহেলা ও অবহেলাজনিত হত্যার’ অভিযোগে মামলা দায়ের করার দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে। আসামিদের আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যাওয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।

মামলায় বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়া আরও সহজ। কারণ হলো, ঘটনা একেবারেই ব্যতিক্রম। প্রকাশ্যে এত বড় সর্বনাশ হয়েছে, হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এরচেয়ে বড় প্রমাণ আর কী থাকতে পারে। তাছাড়া ভবন যে ইচ্ছেমতো নির্মাণ করা হয়েছে এতেও কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। কারণ ভবন সংক্রান্ত তথ্যাদি তো রাজউকের কাছেই যথেষ্ট। সেই সঙ্গে রানা প্লাজায় ফাটল দেখা দেওয়ার পরও শ্রমিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এটি যে একেবারেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নিঃস্বন্দেহে বলা যায়। 

মাত্র কয়েকজনের অবহেলায় এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ গেল, পঙ্গু হলো অনেকে। পথে নামল বহু পরিবার। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো দেশ। অথচ অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেল না। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক।

প্রশ্ন হলো, তাহলে বিচারের জন্য এতদিন অপেক্ষা কেন করতে হচ্ছে? তবুও আইন প্রমাণ চায়। নিজস্ব গতিতে চলে। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের কেউ যেন রাজনৈতিক ও আর্থিক দাপটে পার না পেয়ে যায়।

রাজউকের কি এ ঘটনায় কোনো দায় নেই? কিংবা দায়িত্বশীল যাদের দায়িত্ব ছিল ভবন নির্মাণ ত্রুটি, কিংবা অনুমোদনের বিষয় দেখভালের সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কি বিচার হবে না? অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় তাদের দাঁড় করানো উচিত।

সর্বোপরি ঘটনায় নিহতদের পরিবার পরিজনসহ আহতদের সবাই এই বিচারের অপেক্ষায়। তেমনি গোটা জাতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারে সবাই যেন কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। বিচারের প্রত্যাশায় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ১০ বছর পূর্ণ হোক তা আর চাই না।     

ঘটনার পর পরই বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করার বিষয় আলোচনায় আসে। খবর নিয়ে জেনেছি, আহত শ্রমিকদের বেশিরভাগ এখন আর সাভারে নেই। জীবনের তাগিদে তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছেন। অসুস্থতা ও পঙ্গুত্বের কারণে পেশা পরিবর্তন করেছেন কেউ কেউ। যাদের একটি বড় অংশ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর পূর্তিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইড আহত শ্রমিকদের নিয়ে এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে শ্রমিকদের বাস্তব জীবনচিত্র ওঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, আহত শ্রমিকদের ৫৬.৫ শতাংশের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। বর্তমানে ওইসব আহতরা কোমর, মাথা, হাত, পা এবং পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। যা সত্যিই কষ্টদায়ক।

ঘটনার এতদিন পরেও আহতদের সুচিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলো না, এরচেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। তারা কি এইটকু অধিকার পেতে পারে না? হয়তো তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যাদের শত চিকিৎসাতেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব নয়। এতো মানুষ সুস্থ না হওয়ার কারণ নেই।

আহতদের আসলে উন্নত চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। তারা এখন জীবন নিয়ে মহা সংকটের মধ্যে। একদিকে পরিবারের কাছে বেকারত্বের বোঝা, অন্যদিকে সুচিকিৎসার অভাবে শরীরে স্থায়ী যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা কবে নাগাদ শেষ হবে? তারাও জানে না।

তবে বিজিএমইএ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে আরেকবার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেন মানুষগুলো শারীরিক যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পায়। এই সেবা পাওয়া তাদের নাগরিক অধিকারও বটে। 

জরিপের আরেকটি ভয়াবহ তথ্য হলো, ২০২১ সালে যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিল ১২.৫ শতাংশ, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৫ শতাংশে। এ তথ্য প্রকাশের পর তাদের চিকিৎসা দ্রুত করানো উচিত। মূলত অর্থনৈতিক চাপ ও জীবন যন্ত্রণায় মানুষের এ ধরনের পরিস্থিতি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

জরিপে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছে, শারীরিক অক্ষমতার কারণে তারা কাজ করতে পারে না। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা আছে। যার কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

আহত শ্রমিকদের বেশিরভাগ এখন আর সাভারে নেই। জীবনের তাগিদে তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছেন। অসুস্থতা ও পঙ্গুত্বের কারণে পেশা পরিবর্তন করেছেন কেউ কেউ। যাদের একটি বড় অংশ এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জরিপ অনুসারে, ১৪.৫ শতাংশ তাদের আদি পেশা গার্মেন্টসে ফিরে গেছে এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। অনেকেই তাদের পেশা বদলে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, বিক্রি এবং গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছে। ৬৩.৫ শতাংশ বলেছে, মহামারি চলাকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে ছিল না।

এসব শ্রমিকেরা এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তাদের পুনর্বাসন করা জটিল কিছু নয়। আশাকরি সরকার বিজিএমইএ-কে নিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখা এই মানুষগুলোর আয়ের উৎস তৈরি বা উন্নত চিকিৎসা না হলে মানসিক সমস্যা বাড়বে। তেমনি ধুঁকে ধুঁকে তারা মৃত্যু পথে ধাবিত হবে। যা একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য কাম্য হতে পারে না।

একটি বিশেষ অবস্থায় শ্রমিকদের বিশেষভাবে সুবিধা দেওয়া উচিত ছিল। বর্তমান আইনের কারণে মালিক পক্ষ একলাখ টাকার বেশি দিতে বাধ্য নন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এক লাখের অনেক বেশি টাকাই ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। শ্রমিকদের জন্য আইন সংশোধন করে ক্ষতিপূরণ কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করা উচিত। যদি একসঙ্গে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো, তাহলে আহত শ্রমিকদের বর্তমান চিত্রটা হয়তো ভিন্ন হতো।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সবাইকে অন্তত ১৫ লাখ টাকার এফডিআর করে দেওয়া যেতে পারে। যেন এর আয় দিয়ে সবাই চলতে পারেন। এর বাইরেও তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে অনেক উপায় আছে।

শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও বিজিএমইএ-কেই এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক বাস্তবতা, আমলাতন্ত্র ও আগের মতো শ্রমিক নেতৃত্ব না থাকায় শ্রমিকদের অধিকার এমনিতেই প্রতিষ্ঠা হবে এমন ধারণা করে লাভ নেই।

এতবড় দুর্ঘটনার পর গার্মেন্টসে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিয়ে এখন প্রশ্ন আছে। তেমনি তাদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা খুব একটা বাড়েনি। তবে একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক চাপে পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। আরও বেশি শ্রমিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও কোথাও নিয়মিত বেতন বোনাস হয় না। মালিকদের মানসিকতা বদলালে এরকম অভিযোগ হয়তো আর শোনা যাবে না।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের গার্মেন্টস খাতে ধাক্কা আসতে পারে। আবার আরও বেশি ভালোও হতে পারে। পরিস্থিতি যেদিকেই যাক শ্রমিকদের অধিকার ও আন্তর্জাতিক মানের কর্ম পরিবেশ নিয়ে মালিকদের বেশি নজর দেওয়া উচিত। কারণ তাদের হাত দিয়ে ব্যবসার সুনাম ও পরিধি বাড়ছে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে। তাই নাগরিক হিসেবে তাদের প্রতি রাষ্ট্রেরও দায়বদ্ধতাও কম নয়। 

রাজন ভট্টাচার্য ।। সাংবাদিক ও কলাম লেখক