ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহির প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য হোয়াইট বেলুন (The White Balloon)’। চলচ্চিত্রটি শুরুই হচ্ছে পার্সি দিনপঞ্জি অনুযায়ী নববর্ষ বা ‘ঈদ-ঈ-নওরোজ’ পালনের আগের সন্ধ্যায় একটি মধ্যবিত্ত ইরানি পরিবারের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ব্যস্ততার দৃশ্য দিয়ে। গোটা সিনেমাতে পার্সি বা অগ্নি-উপাসক বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নববর্ষ উদযাপন মূল আবহ হিসেবে উপস্থাপিত।

ইরানি চলচ্চিত্রে ‘ঈদ-ই-নওরোজ’ পালনের প্রসঙ্গ একারণেই তুললাম যে, এবারের বৈশাখে বাংলাদেশের নেটিজেন সমাজ পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে প্রচণ্ড দ্বিধা-বিভক্ত ছিল। এমনকি অনেক তরুণ কবি, লেখক বা চিন্তককেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছে।

বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি। গত বছর, চলতি বছরসহ আগামী আরও দু’বছর হিজরি বা চান্দ্রেয় বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী রোজার মাসেই নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে এবং স্বাভাবিকভাবেই রোজা বা উপবাসের এই মাসে অন্যান্য বছরের মতো দিনের বেলায় নববর্ষের খাওয়া-দাওয়া বা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে খাবারের উন্মুক্ত নানা স্টল রাখা সম্ভব হয়নি বা হবে না, তাই বলে গোটা বৈশাখই কি অপালনীয় হয়ে গেল? নিন্দিত হয়ে উঠল?

মঙ্গল শোভাযাত্রা তার ‘মঙ্গল’ শব্দটির জন্য যেখানে বাংলা ভাষায় আমাদের সপ্তাহের সাতটি দিনের ভেতর ‘মঙ্গলবার’ আছে বা আমাদের বারোটি মাসের নাম বৈশাখ থেকে চৈত্র কেন বা সেই নামগুলোতেও হিন্দুয়ানি আছে কি না এমন সব অদ্ভুত প্রশ্নও আছে? খুব বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছি যে, বহু ‘বামপন্থী’ তরুণ বুদ্ধিজীবীও নববর্ষের সাথে এদেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের ধর্মবোধ সাংঘর্ষিক কি না এমন সব পোস্ট অকাতরে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন।

এমনকি অতি বুদ্ধিমান বা চতুর কেউ কেউ পহেলা বৈশাখ নয়, চৈত্র সংক্রান্তিই আসল লোকজ পার্বণ, এমন কথাও তুলছেন। সেকথা অস্বীকার না করেও বলা যায় যে, ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন আরবি হরফে বাংলা লেখা, বাংলার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা থেকে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার মতো নানা পদক্ষেপ নিতে থাকে, তখন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’ বাঙালি জাতিসত্তার পরিচায়ক চিহ্ন হিসেবে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ পালন করা শুরু করে।

২০১২ সালে বরগুনায় বাংলা নববর্ষের আগে আগে একটি কাজে গিয়ে আমি হতবাক হয়ে দেখেছিলাম যে, মাইলের পর মাইল নদীপথে অসংখ্য নৌকায় সবুজ তরমুজ ও বাঙ্গির সারি। স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানলাম সবই চৈত্র সংক্রান্তিতে গ্রামে গ্রামে বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা ও বড় শহরগুলোর বাজারে যাবে নববর্ষে বিক্রির জন্য। এই হচ্ছে বৈশাখের অর্থনীতি, যা চাইলেও থামানো যাবে না।

পরবর্তী সময়ে এরশাদের দশকব্যাপী দুঃশাসনের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ দেশীয় অনুষঙ্গের নানা মুখোশ যেমন—পেঁচা, হাতি বা পুতুল তৈরি করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ আয়োজন করা শুরু করে। এবং প্রতিবছরই এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বিরুদ্ধেও কিছু মহল উঠে-পড়ে লাগে।

তবে এতকিছুর পরও কোভিডের গত দুই বছর এবং গত বছর, চলতি বছর ও সামনের আরও দুই বছর রোজার মাসে পহেলা বৈশাখ পড়লেও নাগরিক মধ্যবিত্ত এখন ঈদ বা পূজার পরেই বিপুল উদ্যমে নববর্ষ পালন করে।

ঢাকার যে বিপণিবিতান রাত আটটায় বন্ধ হয়, বাংলা নববর্ষের আগের রাতে সেই বিপণিবিতান রাত দশটা পর্যন্তও খোলা থাকে আর কেনাকাটা হতেই থাকে। ২০১৯ সালের নববর্ষেও দেখেছি যে, ধর্মভীরু বোরকা পরা মা কিন্তু মেয়ের জন্য লাল-সাদা শাড়ি বা লাল-সাদা কাচের চুড়ি, ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনছেন। এইখানেই উৎসব আর অর্থনীতি এক বিন্দুতে মিলেছে।

এটা নিয়েও ডান-বাম অনেকেরই গাত্রদাহ দেখছি এবং বলা হচ্ছে যে, এখানে তবে জাতিসত্তার চেয়ে ‘কনজ্যুমারিজম’ বেশি এবং এটি কৃত্রিমভাবে চাপিয়ে দেওয়া মধ্যবিত্তের অনুষ্ঠান। কিন্তু ওভাবে ‘মধ্যবিত্ত’ অনুষ্ঠান বলে প্রত্যাখ্যান করতে হলে ‘পথের পাঁচালী’র বদলে ‘বাবা কেন চাকর’ দেখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে জীবনানন্দ সবাইকে বাদ দিতে হবে এবং আরও অনেক কিছুই বাদ দিতে হবে। ভার্সিটিতেই বা আমরা পড়তে যাব কেন? হোয়াইট কলার চাকরিই বা সবাই কেন করতে চাই?

আস্থা এই যে, ২০১৯ সালেই নববর্ষের দু’দিন আগেও বরিশালের যে পালপাড়ায় আমি একটি গবেষণার কাজে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি যে, হালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত নানা গ্রামে এমনকি ফেসবুকে মিথ্যা খবর দিয়ে সংখ্যালঘু পল্লীতে হামলা হওয়ার মতো নানা ঘটনা ঘটলেও কুমার পাড়ার কুমারদের হাতে চৈত্র সংক্রান্তি বা নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার জন্য যে নীল ময়ূর, টেপা পুতুল বা ঘোড়া বানানো হয়, সেই মাটির কাজগুলো দেখতে মাদ্রাসা থেকে টুপি পরা শিশুরা এসে স্তব্ধ বিস্ময়ে, ধ্যানস্থের মতো দাঁড়িয়ে সেই পুতুলগুলো দেখছে।

ওদের চোখে শৈশবের মুগ্ধতার মায়াঞ্জন। সেই দৃশ্যটি এই ২০২২ সালে স্মরণ করে আমার মনে হলো, বাংলাদেশ তো শুধুই ফেসবুকে বসা কিছু চতুর বাম বা উগ্র ডানের নানা কুযুক্তির আখড়া নয়। সংক্রান্তি বা নববর্ষের গ্রামীণ মেলায় বাড়ির শিশু পুত্রকে নাগরদোলায় চাপানো বা কন্যা শিশুটিকে হাতপাখা বা কাচের চুড়ি কিনে দেয় সব সম্প্রদায়ের পিতা। হ্যাঁ, এখানেই পহেলা বৈশাখের অর্থনীতির প্রশ্ন আসে।

ঠিক যে অর্থনৈতিক কারণেই বা কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা হিসাবে ফসল নেওয়ার প্রশ্নে হিজরি বা চান্দ্র বর্ষপঞ্জিতে সমস্যা দেখার কারণে মোঘল সম্রাট আকবরকে তার রাজসভার গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতুল্লা সিরাজিকে আদেশ দিতে হয়েছিল স্থানীয় গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাথে আলাপ করে ভারত তথা বাংলার প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জির সাথে মিলিয়ে খাজনা আদায়ে সুবিধাজনক একটি বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের জন্য। হ্যাঁ, বাংলা বা গৌড়ের প্রথম নৃপতি শশাঙ্কের সময়ে এই বঙ্গাব্দের সূচনা হওয়ার  দাবিটিও খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সত্যি বলতে বাংলাদেশ থেকে আরও পূর্বে মিয়ানমার বা থাইল্যান্ড থেকে কাম্পুচিয়া, লাওস অবধি বা গোটা ভারতেই আসাম-ত্রিপুরা থেকে পাঞ্জাব বা তামিলনাড়ু–অবধি এই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হয়।

গ্রামে-শহরে-শহরতলিতে বৈশাখী মেলায় সার্কাস খেলা, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, নাগরদোলা বা জাদুকরদের নানা খেলা, নানা কারুপণ্যের বিচিত্র সম্ভারের বেচা-বিক্রি গ্রামের কৃষক, মিষ্টি প্রস্তুতকারী, কামার-কুমার বা কারুশিল্পীদের কিছু বাড়তি আয় তো অবশ্যই এনে দেয়। এ সবই সমৃদ্ধ করে অর্থনীতি।

আর এই নববর্ষ কি শুধুই নাচ-গান, মারমা-রাখাইন-বার্মিজদের ‘সাংগ্রাই’ বা জল খেলা আর মেয়েদের চুলে ফুল? সবটার সাথেই জড়িয়ে আছে অর্থনীতি।

২০১২ সালে বরগুনায় বাংলা নববর্ষের আগে আগে একটি কাজে গিয়ে আমি হতবাক হয়ে দেখেছিলাম যে, মাইলের পর মাইল নদীপথে অসংখ্য নৌকায় সবুজ তরমুজ ও বাঙ্গির সারি। স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানলাম সবই চৈত্র সংক্রান্তিতে গ্রামে গ্রামে বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা ও বড় শহরগুলোর বাজারে যাবে নববর্ষে বিক্রির জন্য। এই হচ্ছে বৈশাখের অর্থনীতি, যা চাইলেও থামানো যাবে না।

ইতিহাস নাকি ভালো মেয়েদের বদলে খারাপ মেয়েদের হাতেই তৈরি হয়েছে। একই যুক্তি মেনে বলা যায় যে, ইতিহাস ছেলেদের ক্ষেত্রে ভালো ছেলেদের বদলে খারাপ ছেলেদের হাতেই তৈরি হয়েছে বেশি। কাজেই অনেক সুশীল বামপন্থী বা অল্প শিক্ষিত লোকজন যখন ফেসবুকে ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলার নববর্ষ বা বাংলার আপন জাতিসত্তার অভিজ্ঞানকেই অস্বীকার করলেন, তখন কি না বাউণ্ডুলে ধাঁচের কবি বা অভিনেতা হিসেবে যাকে আজীবন ভয় পেয়ে চিনলেও খানিকটা দূরে সরে থেকেছি, সেই ‘মন্দ ছেলে’ মারজুক রাসেল একাই হাজার বিরোধিতা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘বৈশাখ আপনি পালন না করলেও নিজেই পালিত হবে। ঝড় দেবে, বাতাস দেবে, বাঙ্গি দেবে, তরমুজ দেবে। আরবি, উর্দু বা ইংরেজি যে ভাষাতেই আপনার নাম রাখা হোক না কেন, নিজের নামের অর্থ আপনি বাংলাতেই খুঁজবেন।’

মূল প্রসঙ্গে ফিরি। আমাদের পহেলা বৈশাখের অর্থনীতি নিয়ে একটু আলাপ করি। শহুরে মধ্যবিত্ত তো এদেশে সম্প্রদায় নির্বিশেষে এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করে। ধর্মীয় নানা পার্বণ ভেদে হিজরি বা বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে বাংলার কৃষক কিন্তু আজও সম্প্রদায় নির্বিশেষে ইংরেজি সন-তারিখ গুলিয়ে ফেললেও বাংলা সন-তারিখ গড়গড় করে বলতে পারেন। সেই কৃষকের কাছে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ নববর্ষ না।

তবে ঐ একদিনের হিসাবের ফের বাদ দিলে মফস্বলে বা গ্রামে নববর্ষে আজও খোলা হয় হালখাতা। ঘরে ঘরে সবার জন্য নতুন পোশাক, তরমুজ বা মিষ্টি থেকে সুখাদ্যের আয়োজন, গ্রামীণ মেলা বা নানা ক্রীড়া-কৌতুকের আয়োজনের সাথে অভ্রান্তভাবে জড়িয়ে থাকে অর্থনীতির প্রশ্ন।

গ্রামে গ্রামে বৈশাখের সকালের দই-চিড়া-মুড়ি-খই-বাতাসা-রসগোল্লা, কাঠ ও মাটির নানা পুতুল বা খেলনা, বাঁশি, চুলের রিবন, মেয়েদের সাজগোজের নানা জিনিস, ইলিশ মাছ, মাটির নানা তৈজসপত্র, বাঁশ ও বেতের নানা সম্ভার তৈরি হয়।

সারা দেশের ফ্যাশন হাউসে সারা বছর ছয় হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তার মধ্যে ৫০ শতাংশই হয় রোজার ঈদে। ২৫ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখে।

গ্রামে-শহরে-শহরতলিতে বৈশাখী মেলায় সার্কাস খেলা, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, নাগরদোলা বা জাদুকরদের নানা খেলা, নানা কারুপণ্যের বিচিত্র সম্ভারের বেচা-বিক্রি গ্রামের কৃষক, মিষ্টি প্রস্তুতকারী, কামার-কুমার বা কারুশিল্পীদের কিছু বাড়তি আয় তো অবশ্যই এনে দেয়। এ সবই সমৃদ্ধ করে অর্থনীতি।

কোভিড এবং রোজার আগে প্রতি বৈশাখে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় শুধু মেয়েদের চুলে পরার জন্য ফুলই কত বিক্রি হয়, সেটা আমরা ভেবে দেখেছি? কোভিডের আগে অবধি আমার কাছে সারা বছরের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত মনে হতো ঠিক নববর্ষের আগের সন্ধ্যায় মধুগন্ধী বাতাসের সাথে ধানমন্ডি-৭-এ আমার প্রিয় বিপণিবিতানে ওঠার সিঁড়ির সামনেই চুড়িওয়ালীদের সাজিয়ে রাখা থরে-বিথরে কাচের চুড়ির দৃশ্য।

একথা এখন সন্দেহাতীত ভাবেই প্রমাণিত যে, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশের জিডিপিতে গতিবেগ বাড়ে। অস্থায়ী কর্মসংস্থান হুট করে বাড়ে। ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ)। ২০১২ সালে তারা একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের ফ্যাশন হাউসে সারা বছর ছয় হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তার মধ্যে ৫০ শতাংশই হয় রোজার ঈদে। ২৫ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখে। (প্রথম আলো, ১৩ এপ্রিল ২০২২)

তবে এবছর রোজার মাসের কারণে পহেলা বৈশাখের সকালে ইলিশের চাহিদা অনেক কমে গেলেও ইলিশের দাম কিন্তু কমেনি। ঢাকার কারওয়ান বাজারে ১২ এপ্রিল এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় আর ৮০০-গ্রাম ইলিশ মাছ বিক্রি হহেয়ছে ৮৫০ থেকে ১১০০ টাকায়। (প্রথম আলো, ১৩ এপ্রিল ২০২২)

এদিকে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ইলিশ মাছ ধরা আইনত নিষিদ্ধ ছিল। বাজারে তাজা ইলিশের বদলে কোল্ড স্টোরেজের ইলিশই বিক্রি হচ্ছিল। নববর্ষে ফার্নিচার বিক্রিরও ধূম বাড়ে। দু’বছর কোভিডের পর এবছর নববর্ষের কেনা-কাটা বাড়লেও রোজার কারণে ২০১৯-এর মতো হয়নি। গরমের কারণে ইলেক্ট্রনিক নানা গ্যাজেট বিশেষত এয়ার কন্ডিশনারের বিক্রি এবছর বেড়েছে।

জসীম উদ্‌দীনের ‘পল্লীজননী’ কবিতায় মৃত্যুপথযাত্রী ছেলের পাশে বসে বিধবা মা ভাবছেন যে ছোট্ট ছেলেটি গ্রামে ‘আড়ঙ’ বা মেলায় যেতে চাইলে গরিব মা মিথ্যে করে বলেছেন যে,

‘আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,
বলেছে আমরা মুসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।
করিম যে গেল? রহিম চলিল?
এমনি প্রশ্ন-মালা; উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।’

জসীম উদ্‌দীনের এই কবিতাই বলে দিচ্ছে পহেলা বৈশাখের অর্থনীতির শক্তি।

অদিতি ফাল্গুনী ।। উন্নয়নকর্মী, কবি, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক