ছবি : সংগৃহীত

জনপ্রিয়তার মানদণ্ড বা তার সংজ্ঞা কী? কারো প্রতি অগণিত মানুষের যদি দুর্নিবার আকর্ষণ থাকে এটি তার জনপ্রিয়তা। প্রিয় মানুষের চলন, বলন এবং নিত্য কর্মযজ্ঞ নিয়ে মানুষ হুলস্থূল বাঁধিয়ে দেয়। হিরো আলমের জীবন নিয়েও যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আলমকে কারা জিইয়ে রাখছেন? অনবরত নাড়া দিয়ে আলমের হিরোগিরিতে কারা প্রাণ জোগাচ্ছেন? কিছুদিন তিনি চুপসেই ছিলেন। কী এমন প্রয়োজন হলো তাকে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আবারও বিপুল আলোচনার জন্ম দেওয়া?

প্রান্তিক পর্যায় থেকে আরাধনা করে উঠে আসা একজন আলম জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নিজেকেও সচ্ছল করেছেন। শিক্ষিত তরুণেরা যখন চাকরির পেছনে ছোটে তখন আলম সৃষ্টি করছেন নিজ থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার উদাহরণ।

আরও পড়ুন >>> বিয়েই কি নায়িকাদের জীবিকা?

এই আলম পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন মন্দার এই সময়ে। একাধারে তিনি প্রযোজনাও করেন। সরকারি অনুদানের আশায় বসে থাকেননি। নিজের উপার্জিত টাকা অকাতরে ঢেলেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণে।  মানতে হবে এটা কোনো সহজ কাজ নয়।

কেবল দেশে নয়, তাকে নিয়ে দেশের বাইরেও লঙ্কাকাণ্ড। তিনি যখন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। সেই ছবি ও প্রতিবেদনের জের ধরে বিবিসি হিন্দি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিরো আলমকে নিয়ে।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি একে একে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমগুলোতেও তিনি খবরের শিরোনাম হন। জিনিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড ডের মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে। সেখানে অনেকেই হিরো আলমকে বাংলাদেশের বিনোদন জগতের অন্যতম তারকা বলে অভিহিত করেন। 

আরও পড়ুন >>> হানিফ সংকেতের মৃত্যুর গুজব : ‘লাইক’ যুদ্ধ, এরপর কে?

এরপরও কেন তাকে নিয়ে এত ট্রল, এত সমালোচনা? প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক আসলেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? সর্বশেষ সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, হিরো আলমকে তুলে নিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে নিষেধ করেছে ডিবি।

শুধু তা-ই নয়, নামের আগে ‘হিরো' ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাকে। ডিবির নির্দেশ এবং আচরণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে হিরো আলম বলেছেন, ‘আমার সম্মানবোধ বলতে কিছু আছে। কিন্তু তারা সেই সম্মানবোধ দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেনি। নাগরিক হিসেবে আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করার কথা ছিল তা করেনি। বাংলাদেশের কোনো আইনে নেই যে আমার নাম পরিবর্তন করতে হবে, এমন আইন নেই যে আমি নির্দিষ্ট কোনো গান গাইতে পারব না, অভিনয় করতে পারব না।’

আলমের কথাগুলো ছুঁড়ে ফেলার কোনো যুক্ত আছে কি? কণ্ঠ বা চেহারা যেমনই হোক সবার যেমন অভিনয় এবং গান গাওয়ার অধিকার আছে ঠিক তেমনি নাগরিক হিসেবে একজন হিরো আলমও সেই অধিকার সংরক্ষণ করেন।

আরও পড়ুন >>> শিল্পী সমিতির নির্বাচন : ঘটি ডোবে না নামে তালপুকুর 

শোবিজ জগতের রঙিন দুনিয়ায় সুঠাম চেহারা হলেই আসা যায় না। কথা জানলেই টিকে থাকা যায় না। নাটক, সিনেমায় এমন বহু মানুষই আছেন ‘হিরো’ বলতে যা বোঝায় তারা ঠিক তেমন নন। কিন্তু দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তারা।

হিরো আলম যথার্থই বলেছেন, ‘আমি গরিব ও দুর্বল বলে আমাকে মুচলেকা দিতে হলো। আরও এমন অনেকেইতো আছেন তাদেরতো ধরা হচ্ছে না।’

আলমের প্রতি কী এমন আকর্ষণ যে তাকে বারবার মিডিয়ায় আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। তাচ্ছিল্যভরা এসব ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হিরো আলম অংশগ্রহণ করেছিলেন।

সেই নির্বাচনে তার প্রার্থিতার কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশন সমস্যা করেছিল। তারপর হিরো আলম হাইকোর্টে যান এবং প্রমাণিত হন তিনি ঠিক ছিলেন।

আরও পড়ুন >>> পরীমণি : অন্যায়ের প্রতিবাদে আত্মমর্যাদাবোধ যেন না হারায় 

প্রেস ব্রিফিংয়ে তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, ‘হিরো আলম পর্যন্ত হাইকোর্ট দেখায়। সেও বলে যে “নির্বাচন কমিশনকে আমরা হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ছি।” বোঝেন অবস্থা! সে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী।

জনাব হেলালুদ্দীন হিরো আলমকে ‘সে’ সম্বোধন করছে এবং বলছেন ‘হিরো আলম পর্যন্ত’। প্রশ্ন হচ্ছে, হিরো আলমকে কি নির্বাচন কমিশনের সব কথা একবাক্যে নতশিরে মেনে নিতে হবে?

নির্বাচন কমিশনের কোনো আচরণে কি হিরো আলম সংক্ষুব্ধ হতে পারেন না? সংক্ষুব্ধ হলে হিরো আলম কি হাইকোর্টে যেতে পারেন না?  উচ্চ মধ্যবিত্তদের অতি বিলাসিতার এসব মননশীলতার সম্পূর্ণ বিপরীত। হিংসা করেই একজন মানুষকে উপরে তোলা যায় এর জ্বলন্ত উদাহরণ হিরো আলম।

আমি হিরো আলমকে নিয়ে কখনো চিন্তা করিনি কিন্তু তিনবার তার সাথে দেখা হয়ে যায়। পা বাড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেও সহজেই কাছাকাছি পৌঁছানো যায় না। দেখেছি যেদিকে তাকায় মানুষ সেদিকেই মুভ করে।

আরও পড়ুন >>> রাতের রানী, দিনের রাজা শব্দগুলো নষ্ট সমাজের উপমা

ক্যামেরার এলোপাতাড়ি ফ্ল্যাশ আর সেলফির হিড়িক পড়ে যায়। তখন এই সব মানুষের আনন্দ দেখেছি, অট্ট হাসিতে তারা ফেটে পড়েন। রোগে শোকে চিন্তামগ্নে ক্লান্ত মানুষেরা যে তাকে নিয়ে এত আনন্দ করে তাতেও বা কম কিসে?

যদি কর্মই মানুষের পরিচয় হয় থাকে তাহলে কি এমন করেছে হিরো আলম? যারা তাকে স্ব স্ব সমাজ, ক্লাব, সমিতি মেনে নিতে পারে না- প্রশ্ন হলো কেন তারা পারে না? এফডিসির এক পরিচালক বলেছেন, হিরো আলম ‘বানর’ তাই মানুষ খেলা দেখতে আসে। এরপরও কিন্তু আলম থেমে থাকেনি।

হিরো আলম এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করছেন, হিরো আলম শোবিজের দামি তারকাদের সাথে হাঁটছেন। দেশের গণমাধ্যম তাকে নিয়ে স্টোরি ছাপছেন।

সফল এক যুবকের প্রতিচ্ছবি এখন হিরো আলম। যারা তাকে মেনে নিতে পারছেন না, এই মেনে না নেওয়া তাকে এখন আর থামাতে পারবে না। নিজেকে একবার প্রশ্ন করলেই উত্তর বেরিয়ে আসবে—আসলেই আমি কোথায়? এত এত ট্রল সমালোচনার পরও হিরো আলম কোথায় চলছেন?

এই সমাজে অনেকের ঘৃণা নেই কিন্তু হিরো আলমের তা আছে। রাগ করে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন একবার। আমি বলব, চড়াই উৎরাই থাকবেই ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সম্ভবত আলমও তার হিরোগিরি থামাবে না!

আনোয়ার বারী পিন্টু ।। গণমাধ্যমকর্মী