কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আরফানুল হক রিফাত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটা শুরু করেছেন। শহরে জরুরি মাইকিং হয়েছে। প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের নির্দিষ্ট এলাকায় সব ধরনের অটো- ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, মিশুক, ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রচার করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার জল ও যানজটমুক্ত নগরী। আপাতত কান্দিরপাড় এলাকাকে যানজটমুক্ত রাখাই প্রথম লক্ষ্য। এরই মধ্যে জলজট নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সভা চলছে।

কান্দিরপাড় যানজটমুক্ত রাখতে একই সিদ্ধান্ত সময়ে সময়ে কার্যকর হয়েছিল। তবে নিয়মিত কেউই করেননি বা রাখেননি। এবার নিয়মিত হবে হয়তো। তবে নতুন করে এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন নাগরিকরা। অনেকেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।

চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে শুধুমাত্র কান্দিরপাড় এলাকায়। শহরের প্রধান চারদিকের পাঁচ সড়ক দিয়ে কান্দিরপাড় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। উত্তরে জিলাস্কুল, পূর্বে রাজগঞ্জ, পশ্চিমে রাণীবাজার সড়কের কাত্যায়নী কালীবাড়ি ও পুলিশ লাইন, দক্ষিণে সালাউদ্দিনের মোড় পর্যন্ত এর ভেতরের পুরো এলাকাই কান্দিরপাড় এলাকা হিসেবে ধরা হয়। ছোট নগরীর এই পাঁচটিই প্রধান সড়ক যা কান্দিরপাড়ে এসে মিলিত হয়। এতটুকু এলাকা যানজটমুক্ত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। চাহিদার তুলনায় সরু প্রধান এসব সড়কে যানবাহনের চাপ কমাতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ প্যাডেল চালিত রিকশা ও গাড়ি চলাচল করবে আগের মতোই। সহসাই শুরু হবে এই নিয়ম।

সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়ন করে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। নিয়ন্ত্রণ ও তদারকিও করে পুলিশ। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে পুলিশ। কতো অটো শহরের সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই সিটি করপোরেশন বা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে। তবে ধারণাগত একটা হিসাব আছে। কারণ প্যাডেল চালিত রিকশার লাইসেন্স হয়, কিন্তু অটো যান্ত্রিক না অযান্ত্রিক এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় আজও না দিতে পারায় অবৈধভাবেই চলছে। তবে সড়কে চাহিদার তুলনায় চলাচলকারী অটোর সংখ্যা অনেক বেশি নিঃসন্দেহে বলা যায়। এর সঙ্গে খেটে খাওয়া সাধারণের সহজ জীবিকা জড়িত হওয়ায় অবৈধ হলেও এর মানবিক দিক রয়েছে, যে সুবাদে চলাচল করছে। এতে নাগরিকদেরও চলাচল সহজ হয়, সাশ্রয়ীও বটে।

ট্রাফিক পুলিশে লোকবল পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নিজ ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি পুলিশিং কর্মী দিয়ে সহায়তা করবে। এটা ভালো দিক। তারা পুলিশের অধীনেই কাজ করবে। কারণ যে পাঁচটি পয়েন্টে গিয়ে অটো থেমে যাবে সেখানে অটো স্ট্যান্ড গড়ে উঠবে আবার যাত্রী নিতে। ফলে সড়কের মুখগুলোতে তৈরি হবে যানজট। তাই প্রতিটি পয়েন্টে কর্মী লাগবে। পশ্চিমাংশের রাণীবাজার সড়ক কান্দিড়পাড় সংলগ্ন কাত্যায়নী কালীবাড়িতে এসে শেষ
হবে নাকি আড়ং পয়েন্টে হবে শুরু হলেই তা বুঝা যাবে, ভাবনাটা থাকুক। এসবই সম্পূরক কাজ। লক্ষ্য বাস্তবায়নে ও ফলপ্রসূ করতে এগুলো লাগবেই।

সিটি করপোরেশনের শহরের ব্যস্ততম সড়কে সিসি ক্যামেরা প্রকল্প চালু হয়েছিল। যানজট মনিটরে বেশ কার্যকর হয়েছিল। পুলিশ বিভাগ এটি মনিটর করতো। স্বয়ং পুলিশ সুপার অফিসে বসে পুরো শহরের যানচলাচল দেখতে পেতেন, নিতে পারতেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। তিনি ওয়্যারলেস সেটে আদেশ দিলে নিমিষেই ট্রাফিক কন্ট্রোল হয়ে পড়তো, এর সুফল নাগরিকরা পেয়েছিল। ওই প্রকল্পও চালু হচ্ছে, এমনটাই জানা। তবে এবার পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়া প্রয়োজন। কারণ অপরাধ দমনেও এর ভূমিকা ব্যাপক।

অটো শহরে চলাচল করবে। অন্যান্য সড়কে। বন্ধ হচ্ছে না। ভুল বার্তা যেন না ছড়ায়। সব কাজেরই দুটো পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়।

নিষেধ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এটাই নিয়ম। তবে শাস্তি সাময়িক ও সংক্ষিপ্ত থাকুক। দ্রব্যমূল্যের উচ্চ সময়ে খাবার কিনতেই হিমসিম অবস্থা ৬৮ ভাগ মানুষের। যাদের একটা বড় অংশ অটো চালিয়ে সংসার চালায়। 

নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধা একটু হতে পারে। নির্দিষ্ট পয়েন্টে এসে অটো ছেড়ে দিতে হবে। তারপর সাধারণ রিকশায় বা পায়ে হেঁটে কান্দিরপাড় এলাকায় ঢুকতে হবে। নতুবা শুরুতেই সাধারণ রিকশায় চড়ে আসতে হবে। সাধারণ রিকশা অটোর দাপটে প্রায় শহর ছেড়েছে অনেক দিন। এই সুযোগে হয়তো তাদের সংখ্যা বাড়বে, সহজে মিলবে। কাজটা শুরু হোক। সুবিধা-অসুবিধা তখনই বুঝা যাবে। সুবিধা সবাই নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। অসুবিধা হলে প্রতিবাদ চলবে। সিটি করপোরেশন নাগরিক সুবিধাকেই প্রাধান্য দেবে। আর নিয়ম হয়ে গেলে সবাই মানবে। কোনো কাজ শুরু থেকে মানিয়ে নিয়মে পরিণত করা পর্যন্ত পৌঁছানো সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ।

লেখক: সাংবাদিক, সাবেক সভাপতি, কুমিল্লা প্রেসক্লাব