ছবি : সংগৃহীত

স্বর্ণ শিল্প দেশের প্রাচীনতম একটি শিল্প। আমাদের দেশের স্বর্ণের কারিগরদের সুনাম আছে। শ্রম নির্ভর (Labour intensive) দেশে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ স্বর্ণের কারিগর আছে। এছাড়া অনেক খুচরা বিক্রেতা ও বিক্রয় কর্মী আছে।

যদিও এটি প্রাচীনতম একটি শিল্প তথাপিও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে এই শিল্পের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। বিভিন্ন সমস্যা যেমন—স্বর্ণের অপর্যাপ্ততা, আর্থিক সহযোগিতা ও নিয়ম-নীতি ইত্যাদি।

কাজেই বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এই শিল্পের তেমন উন্নতি হয়নি। এই শিল্পে স্বর্ণের জোগান হলো বড় সমস্যা। প্রযুক্তি ছাড়াও উৎপাদন প্রক্রিয়া, যন্ত্রপাতি, ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপ্রতুলতার কারণে এই শিল্পের বিকাশ আশানুরূপ হচ্ছে না।

আমাদের বিদ্যমান প্রযুক্তি অনেক আগেই অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ জুয়েলারি পণ্য দেশের কারিগররা নিজে হাতে তৈরি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জুয়েলারি শ্রমিকগণ ৩ থেকে ৩০ বছর কাজ করার পরে তারা নিজেরাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুন >>> বৈশ্বিক মন্দা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি 

গয়নার  ডিজাইন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ গয়না কারিগর তাদের নিজস্ব কল্পনা থেকে তৈরি করে থাকেন। বাংলাদেশের জুয়েলারি পণ্য এখনো বিদেশে রপ্তানি হয় না।

সরকারের নীতির অভাবে জুয়েলারি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এই শিল্পে ব্যাংক তেমন আর্থিক সহায়তা প্রদান করে না। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ নিজস্ব বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে অর্থের জোগান দিয়ে থাকে।

২০১৯ সালের ১৩ জুন জারিকৃত এস.আর.ও অনুযায়ী বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার, রৌপ্য বা রৌপ্যালংকার ও ডায়মন্ডের অলংকারের বিক্রয় মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।

স্বর্ণ, স্বর্ণের গয়না, ডায়মন্ড ও রৌপ্যের গয়নার ওপর সরকারের আরোপিত ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় আমাদের দেশে অনেক বেশি। এই পার্থক্যের হার ৫ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যমান আছে যা এই ব্যবসার প্রসারে বিরাট চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন >>> বাজেটে কর্মসংস্থানের সংস্থান কতটুকু! 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) দেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ  বাণিজ্য সংগঠন। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাজুস নেতৃত্ব বদ্ধপরিকর।

বাজুস নেতৃত্ব মনে করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে আগামী দিনের অর্থনীতিতে জাগরণ তুলবে জুয়েলারি শিল্প। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে সোনার চাহিদা ছিল ৪৭৪০ টন।

এর মধ্যে অলংকারের চাহিদা ২১৮৯ দশমিক ৮ টন বা ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ (প্রায়)। বাংলাদেশে বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। বর্তমানে স্বর্ণের বাজার খুবই অস্থিতিশীল (Volatile)। এর ফলে স্বর্ণের দাম বেড়েছে অপর দিকে বিক্রি কমেছে ২৫ শতাংশ থেকে  ৩০ শতাংশ।

বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চমূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ আমদানি শুল্ক।

বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০-৬০ শতাংশ। পাশাপাশি ৫ শতাংশ ভ্যাট ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন >>> বাজেট ২০২২-২৩ : কতটা জনবান্ধব? 

বাজুসের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের সমস্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর মনে করে, বাংলাদেশ হবে বিশ্ব বাজারে জুয়েলারি ব্যবসার একটি রোল মডেল। এই শিল্প অতি নিকটে তার পুরাতন ঐতিহ্য ও সম্মান ফিরে পাবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে এই প্রথম সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন হয়েছে। বিশ্ব বাজারে আর  কিছুদিন পর রপ্তানি হবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা সোনার বার ও অলংকার। কিন্তু এই পরিশোধনাগারের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি শুল্কও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

বাজুস মনে করে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হলে সরকারের ভ্যাট শুল্ক কমাতে হবে। আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করলে, ১০ বছর ট্যাক্স হলিডে ঘোষণা করলে দেশে রপ্তানিমুখী আরেকটি খাতের সৃষ্টি হবে একই সাথে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

এই লক্ষ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বাজুসের প্রস্তাব সমূহ পূর্বেই লিখিত আকারে প্রদান করা হয়।

পবন কুমার আগরওয়াল ।। সদস্য সচিব, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন