সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই কাজ করতে হয়। তবে সেটি সবচেয়ে বেশি মোকাবিলা করতে হয় মাঠের সাংবাদিকদের। সর্বশেষ উদাহরণ রোজিনা ইসলাম। সম্প্রতি তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি নিগৃহীত হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জেলও খেটেছেন। মামলা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টাব্যাপী যে ঘটনাগুলো তার সঙ্গে ঘটেছে তা অনুচিত, অন্যায়।

একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে এভাবেই কাজ করতে হয়। তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা রকমের কৌশলও অবলম্বন করতে হয়। সংবাদ সংগ্রহের কাজে আমার সোর্স আমাকে সহযোগিতা করবেন। সোর্স এর ওপরই নির্ভর করতে হবে আমাকে। তথ্য ও প্রমাণ পেয়ে গেলেই সফল আমি। এর পরের কাজগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতা। সংবাদের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নিলেই মোটামুটি ভাবে কাজ শেষ।

পুরো একটি সংবাদ তৈরির কাজে সহযোগিতা করবেন আমার সোর্স ও ভুক্তভোগীরা (যদি থাকেন)। আর আমার প্রতিপক্ষ থাকবেন অনেকেই। তাদের এড়িয়ে কাজটি শেষ করা নির্ভর করে সাংবাদিকের দক্ষতার ওপর।

একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিককে এভাবেই কাজ করতে হয়। তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা রকমের কৌশলও অবলম্বন করতে হয়।

আমি এ ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে সোর্স এর ওপর ভরসা করি। সরাসরি কোনো দপ্তরের ফাইল দেখার চেষ্টা কখনো করিনি। যদিও সেই মানের কাজ আমার খুব একটা নেই। আমার কাজের ধরন কিছুটা অন্য রকম বলেই হয়তো তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি কখনো। তাই বলে সামনে এমন সংকটে আমি পড়ব না, তা বলা যাবে না।

আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সুন্দরবনের জলদস্যু-বনদস্যুদের নিয়ে করা কাজটি। লম্বা সময় ধরে লেগে থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে ঘরে বাইরে। তবে নিজের মতো করে সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছি।

বিপক্ষে যায় এমন সংবাদ কেউই সংগ্রহ করতে দিতে চান না, প্রচারও করতে দিতে চান না। আর তারা যদি ক্ষমতাবান হন তাহলে তো কথাই নেই। নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হবে।

বনদস্যুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাকে সব সময় লুকিয়ে চলা ফেরা করতে হয়েছে। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া বনে প্রবেশ আইনসম্মত নয়। তবুও আমি বনে ঢুকে বনদস্যুদের সঙ্গে দেখা করেছি, সংবাদ সংগ্রহ করেছি, আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতা করেছি। এমন নয় যে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি জানতেন না। তবে তারা আমার কাজ সম্পর্কে জানতেন বলে হয়তো বাধা দেননি।

কখনো পার্বত্য এলাকার সশস্ত্র গ্রুপের ডেরায় গিয়েছি। তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সীমান্তে লুকিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের আস্তানায় গিয়েছি। কাজটি করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হলেও সামলে নিয়েছি। কখনো কাজে সফল হয়েছি, কখনো হইনি। সংগ্রহ করা সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রেও কৌশলী হতে হয়েছে।

বিপক্ষে যায় এমন সংবাদ কেউই সংগ্রহ করতে দিতে চান না, প্রচারও করতে দিতে চান না। আর তারা যদি ক্ষমতাবান হন তাহলে তো কথাই নেই। নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হবে। সাংবাদিকতার এই চ্যালেঞ্জ নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েই কাজ করতে হয়।

সাংবাদিকের কাজ কৌশলে সংবাদটি সংগ্রহ ও প্রচার করা। সময়ের সাথে সাথে সাংবাদিকতায় নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেকগুলো সংবাদমাধ্যমে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তার মধ্যে একটি। আর নিউ মিডিয়ার আবির্ভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার নিয়ে মূলধারাকে পড়তে হয়েছে চাপের মধ্যে।

জনমানুষের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা আর তীব্র প্রতিযোগিতা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। আমি মনে করি মূলধারাকে আরও সুসংহত হতে হবে। বহুমুখী চাপ থাকবেই। সেই চাপ মোকাবিলা করেই সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাংবাদিককে কৌশলী হতে হবে, অর্জন করতে হবে দক্ষতা।

মোহসীন-উল হাকিম ।। সাংবাদিক