ছবি : সংগৃহীত

সায়মন ড্রিং’কে কখনো কখনো আশ্চর্য মানুষ মনে হতো। কী করে বাংলাদেশকে আমাদের চেয়ে বেশি চিনতেন? কী করে বাংলাদেশ সম্পর্কে এতো জানতেন? সেটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি হোক, ঢাকা শহর কিংবা চিলমারী। সবই তিনি আমাদের চেয়ে বেশি চেনেন।

তথ্য, দৃশ্য কোনোকিছু দিয়েই তাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হতো না। বার্তা সম্পাদক থেকে প্রতিবেদক আমরা সবাই মিলে তাকে অনেককিছুই হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করতাম, কিন্তু প্রতিবার হেরে যেতাম তার কাছে। তাঁর জ্ঞানের কাছে। এই হেরে যাওয়াটাই পরে আমাদের শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সায়মন ড্রিং’কে জানা যায় ইতিহাসের পাতায়। একাত্তরে বাংলাদেশের ক্র্যাকডাউনের খবর বিশ্ব জেনেছিল তার করা টেলিগ্রাফের রিপোর্ট থেকে।

আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে শিখেছি, নিজের দেশকে। নিজেকে কীভাবে জানতে হয় তা জেনেছি। জেনে গেছি সহকর্মীদের ফাঁকি ধরতে পারার মন্ত্র। যা ছিল সায়মনের শেখানো।

সায়মন ড্রিং’কে জানা যায় ইতিহাসের পাতায়। একাত্তরে বাংলাদেশের ক্র্যাকডাউনের খবর বিশ্ব জেনেছিল তার করা টেলিগ্রাফের রিপোর্ট থেকে।

তিনি বিবিসি টেলিভিশনেরও দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন। সেই সায়মন ড্রিং যখন এলেন, একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে, তার নেতৃত্বে টেলিভিশন সাংবাদিকতা শেখার সুযোগ ছিল আমাদের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।

সায়মনের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কাজ শুরু হয় ১৯৯৯ সালে অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডিওতে প্রশিক্ষণ শেষে। প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বিবিসির প্রশিক্ষকেরা। পরবর্তীতে ঐ মানের প্রশিক্ষণ আর আমাদের নেওয়া হয়নি।

সায়মনের কাছ থেকে শেখার বড় দিকটি হলো, তিনি আমাদের খবরের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি করে দিয়েছিলেন।

সায়মনের সঙ্গে অনেকটা সময় পর্যন্ত আমার এবং আমাদের বেশ কয়েকজনের সম্পর্ক ছিল ঝাল টকের। সেজন্য আমাদের কতিপয় সহকর্মীর প্রচারণা ছিল। তারা সায়মনকে ঘিরে থাকতেন এবং সুবিধা আদায় করে নিতেন।

বার্তাকক্ষের সুবিধা হলো ভালো অ্যাসাইনমেন্ট, বিদেশ যাত্রা, ইনক্রিমেন্ট। কিন্তু একসময় সায়মন বুঝতে পেরেছিলেন তাদের ভরসাই রাখলে একুশের টেলিভিশনের সংবাদের মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সায়মন তাদের দূরে সরাতে শুরু করলেন।

সায়মনের কাছ থেকে শেখার বড় দিকটি হলো, তিনি আমাদের খবরের সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই সময় একুশে টেলিভিশনে সপ্তাহে ছুটি ছিল তিনদিন। কিন্তু সায়মনের ধরিয়ে দেওয়া কাজের নেশায় সেই ছুটি আমরা খুব কমই কাটিয়েছি।

সায়মন বলতেন, দৃশ্যমাধ্যমের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, টিভি পর্দা যতো বেশি সম্ভব দখলে রাখা। সেই লক্ষ্য থেকে এখনো সরতে পারিনি। আর পারবো না। অনুজদের কাছেও এখন সেই টিপস পৌঁছে দেই।

সায়মন বলতেন, নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চড়িয়ে দেবে না। এটা গণমাধ্যমকর্মীদের রোগ। সেই রোগ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। এটা সায়মনের শিষ্যদের বড় ব্যর্থতা।

সায়মনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, তার শিষ্যরা এখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সায়মনের ক্যারিয়ারের চেয়ে উজ্জ্বল পালক হয়তো আর যুক্ত হয়নি।

তুষার আবদুল্লাহ ।। গণমাধ্যমকর্মী