আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ঘর আলো করে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নিয়েছে তাদের প্রথম সন্তান হাসিনা। ভালো নাম শেখ হাসিনা। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন হাসু। কে জানত এই হাসুই হবেন একদিন তার বাবার যোগ্য উত্তরসূরি? বাবার দেখানো পথে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এই দেশ এবং মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন সে স্বপ্নের পথে তিনি হেঁটে চলেছেন দুর্বার গতিতে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া তার দুই কন্যার দেশে আশা ছিল অনিরাপদ। তারপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং তার প্রতি লাখ লাখ মানুষের সেই সংবর্ধনা আমরা নিশ্চয় বিস্মৃত হতে পারি না। পিতার শোকের সান্তনা তিনি সেদিন এই মানুষদের মাঝে দেখেছিলেন এবং মনে মনে স্থির করেছিলেন পিতার অসমাপ্ত কাজ তাকেই সমাপ্ত করতে হবে এবং জীবন দিয়ে হলেও করতে হবে। এ কথা তিনি বারবার উচ্চারণও করেছেন।

শেখ হাসিনা যখন দেশে আসেন তখন স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নেই তিনি ভালো করেই তা জানতেন। দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের যে সংকল্প নিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন তাতে প্রধান বাধা ছিল স্বৈরশাসন। সেই থেকে স্বৈরতন্ত্রকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তিনি রাজপথে সোচ্চার ছিলেন।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক বচন নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুণগত একটি পরিবর্তন আসে।

অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তারপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নেতৃত্বের চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জনগণ একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন লালন করে এসেছে তা তিমিরেই থেকে গেল। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে বিএনপি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে চরমভাবে হেরে গেছে আওয়ামী লীগের কাছে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কোনো রাজনৈতিক বচন নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুণগত একটি পরিবর্তন আসে।

২০০১-এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একইদিন একই সময়ে ৫০০ বোমা হামলা করে নিজেদের শক্ত অবস্থান তারা জানান দিয়েছিল। তাদের পথের মূল বাধা শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে অনেক হামলার চেষ্টা করা হয়েছে; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে শক্তিশালী গ্রেনেড হামলা। আহত হলেও দলীয় অসংখ্য নেতাকর্মীর ভালোবাসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান কিন্তু ওই ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছে ২৪ জনকে।

অপরদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের তত্ত্বাবধানে তার আবাসস্থল হাওয়া ভবনকে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিল তারুণ্যের একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। সেই রূপকল্প বাস্তবায়ন রাজনৈতিক কোনো কথার ফুলঝুরি নয়; আজ তা প্রমাণিত সত্য। আর ভিশনের গতিধারা চলমান আছে বলেই জনগণের রায় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় আছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এরূপ আপসহীনতা ও আস্থাশীলতার কারণেই বিশ্বের বুকে শান্তিকন্যা শেখ হাসিনা সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তার নেতৃত্ব আজ বিশ্বনেতাদের কৌতূহল এবং আগ্রহের বিষয়েও পরিণত হয়েছে। বিশ্বের নামীদামি সংবাদ মিডিয়াগুলোর একাধিক জরিপে ইতিমধ্যে বিশ্বনেতাদের তালিকায় শেখ হাসিনার নাম সামনের সারিতে স্থান করে নিয়েছে।

আমরা দেখেছি অন্ধকার থেকে আলোরপানে, হতাশা থেকে আশারপানে সমগ্র জাতিকে দক্ষতার সঙ্গে ধাবমান করে তোলার স্বাপ্নিক-মন্ত্রে উজ্জীবিত করে চলেছেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা তার সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন- এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।

‘অন্ধকারের সিন্ধুতীরে একলাটি ওই মেয়ে
আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিল আকাশপানে চেয়ে’

রবীন্দ্রকাব্যের চরণ দুটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্যই অনেকটা প্রযোজ্য। কারণ তিনি আশাহীন, আলোহীন, ভরসাহীন, ভগ্নহৃদয় বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রাজনীতির কঠিন-কঠোর বিপদসঙ্কুল ও বন্ধুর পথটিকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রম, ধৈর্য, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর দূরদর্শী প্রজ্ঞায় তিনি বিপদসঙ্কুল পথকে করেছেন জয়। সমকালীন পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় বর্ণিত রবীন্দ্রভাষ্যটি তাই তার জন্যই খাটে।

আমরা দেখেছি অন্ধকার থেকে আলোরপানে, হতাশা থেকে আশারপানে সমগ্র জাতিকে দক্ষতার সঙ্গে ধাবমান করে তোলার স্বাপ্নিক-মন্ত্রে উজ্জীবিত করে চলেছেন শেখ হাসিনা।

নানা প্রতিকূলতার অন্ধকার-আচ্ছন্নতা ছিন্ন করে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত’ দেশে উন্নীত করার অভিযাত্রা ক্রমেই তাকে বাংলাদেশের ‘জননেত্রী’ থেকে মানবপ্রেমী বিশ্বনেতায় পরিণত করেছে। এমন নেতার জন্মদিন তাই বাঙালির এক বিশেষ উদযাপনেরও দিন।

ফরিদুন্নাহার লাইলী : কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক সংসদ সদস্য