২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যার জন্মদিনটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এই মহামারি বিচক্ষণতার সাথে মোকাবিলা করছে। করোনায় দেশে এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে করোনায় বিশ্বের অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় অতি ঘন জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু হার কম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বাধীন সরকার করোনার ভ্যাকসিন দেশের মানুষের জন্য বিনা পয়সায় যে রকম সহজলভ্য করেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে তা তুলনাহীন। শুধু করোনা ভ্যাকসিনই নয়; সরকার এই সময় কর্মহীন হয়ে পড়া এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য এবং আর্থিক সহায়তার ফলে সামাজিক সুরক্ষার দিকটি মুখ থুবড়ে পড়েনি।

করোনার ঢেউয়ে সারা বিশ্বে প্রতি ৩ জনে ১ জন কাজ হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং নতুন শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা জোরদার করার পাশাপাশি বিদেশগামী শ্রমিকদের দ্রুত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। করোনায় বিশ্বের অনেক দেশ নাকাল হলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা পর্যবেক্ষকদের নজরে পড়েছে। 

দুই দশক আগেও বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে প্রণয়ন করা হতো, আজ সেখানে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

পর্যবেক্ষকগণ আঞ্চলিক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডেভিড ব্রিউস্টার গত ১০ জুন ‘A rising Bangladesh starts to exert its regional power’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

ডেভিড ব্রিউস্টার বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি আফ্রিকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও দারিদ্র্য পীড়িত দেশ সুদানকে এ বছরের জুনে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা এবং আফ্রিকার অপর দেশ সোমালিয়ার দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ৮ দশমিক ২১ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।

দুই দশক আগেও বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে প্রণয়ন করা হতো, আজ সেখানে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রভাবশালী দেশ হওয়ার পথে এ মাইলফলক আমাদের গর্ব ও অহংকারের।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের সকল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ সুপ্রশস্ত হয়। এ সময় বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের সকল স্তরের জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন, শিল্পকারখানার উন্নয়ন, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দারিদ্র্যের হার কমে আসে, মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়, গড় আয়ু বেড়ে যায়, স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হয়, দেশের সকল নাগরিকের শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।

সামাজিক সেবার মান বৃদ্ধি পায় এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যে কারণে পুরো বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দেশের সকল স্তরের মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে বিধায় মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়, জীবনমান উন্নত হয়। ডিজিটালাইজেশনের সুবাদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতেরও দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে যায়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন, শিল্পকারখানার উন্নয়ন, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

মানুষের স্বপ্ন ও কল্পনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শত বছরের  মহাপরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলে নতুন ভূমি জাগবে। দেশের আয়তন বাড়বে। আর এর সবই সম্ভব হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনায়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এই মেয়াদকালেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা উন্নত ডিজিটাল স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে সফল হন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মেগা প্রজেক্টগুলো শুরু করেন। এগুলো চালু হলে নিঃসন্দেহে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশ ও জনগণের জীবনমান উন্নীত হবে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারে ও দলে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। সব বাধা পেরিয়ে ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। জাতীয় জীবনে ঘনিয়ে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকেও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন।

ইতিমধ্যে দুর্নীতি বন্ধের অনুশাসন জারি করেছেন। আর এতেও আকাশচুম্বী সফলতা আসবে বলে দেশের প্রতিটি নাগরিক বিশ্বাস করে। দেশ পরিচালনায়, দেশের ও জাতির কল্যাণে ও উন্নয়নে তার চিন্তা চেতনা, স্বপ্ন কল্পনার বাস্তবায়ন, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের সদিচ্ছার কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রার কান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাচ্ছি।

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ ।। অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়