বিজ্ঞাপনের বাজার দখলে যা করতে হবে
আশরাফুল আলম খোকন
চ্যাবন প্রাস কিংবা রুপা স্যান্ডো গেঞ্জি- এই রকম অনেক পণ্যের বিজ্ঞাপনই বাংলাদেশি কোনো টিভিতে চলে না কিন্তু বাংলাদেশে চলে। অথচ দেশি কোনো পণ্য দেশের বাজারে বিখ্যাত হতে হলে অনেক টাকার বিজ্ঞাপন দেশি মিডিয়াতে দিতে হয়। এতে মিডিয়া যেমন লাভবান হয় তেমনি সরকারও অনেক টাকার রাজস্ব পায়। কিন্তু বিদেশি পণ্য দেশি মার্কেটে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছে এক পয়সা বিনিয়োগ ছাড়া।
বাংলাদেশি প্রাণের জুস একসময় ভারতের আসাম, ত্রিপুরা কোলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এবং তা হয়েছিল বাংলাদেশি মিডিয়ার কল্যাণে। ভারত সরকার এমন ব্যবস্থা করলো যে, ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেলই বন্ধ হয়ে গেল। ভারতের বাজার ধরে রাখতে প্রাণ কোম্পানি বাধ্য হলো ভারতে ফ্যাক্টরি করে সেখানকার মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের জনবহুল বাজারও যেকারো জন্যই লোভনীয়। সবাই তার পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে চাইবে। বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে সরকার সঠিক কাজটিই করেছেন। এতে দেশি মিডিয়া লাভবান হবে। তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের নিউজ ও স্পোর্টস চ্যানেলগুলোর বিষয় একটু ভিন্নভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
কিন্তু আমাদের দেশি মিডিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিজ্ঞাপনের বিশাল একটা অংশ চলে যায় ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইদানিং আবার শুরু হয়েছে অনলাইন মুভি চ্যানেল। এরা সবাই পার্শবর্তী দেশ ভারতে অফিস বানিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করে। এমনকি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো যারা এক সময় বাংলাদেশে ব্যাপক বিজ্ঞাপন দিতো তারাও এখন বাইরের দেশ থেকে পরিচালনা করে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ ও দেশের মিডিয়া।
বিজ্ঞাপন
এক সংবাদে দেখেছিলাম শুধু নেটফ্লিক্স বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর দুইশ কোটি টাকা নিয়ে যায়। অথচ দেশে ওদের কোনো স্টেশন নেই। এর সাথে ইদানিং যুক্ত হয়েছে আরও কিছু মুভি অ্যাপ। সবই এক প্রকার অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা করে। যতই নামমাত্র ভ্যাট ট্যাক্স সরকার পাক আদতে সবই ফাঁকি। সরকারের উচিত এইসব প্লাটফর্মকে বাধ্য করা তারা যেন বাংলাদেশে স্টেশন করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু অবশ্যই তা বন্ধ করে দিয়ে নয়। সরকারের উচিত হবে দেশ থেকে যারা বিজ্ঞাপনদাতা তাদেরকে বাধ্য করা। তারা যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো বিজ্ঞাপন না দেয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে স্টেশন স্থাপন করবে। তাহলেই দেখবেন সবাই বাংলাদেশে ‘এসেই’ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করবে।
আশরাফুল আলম খোকন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপপ্রেস সচিব।