যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ডেনভারের ‘কলোরাডো কনভেনশন সেন্টারে’ অনুষ্ঠিত হয় ‘সুপারকম্পিউটিং কনফারেন্স (এসসি), ২০১৭’। সেই কনফারেন্সে—২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর—বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারগুলোর তালিকা প্রকাশ করে ‘টপ৫০০’ (TOP500)। চীনের সুপারকম্পিউটার ‘সানওয়ে থাইহু-লাইট’ (Sunway TaihuLight) তালিকার শীর্ষস্থানটি দখল করে। এ নিয়ে এই সুপারকম্পিউটার টানা চার বছর শীর্ষস্থানটি দখল করে। এই সুপারকম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছে চীনের নিজস্ব আর অ্যান্ড ডি চিপ (R&D chip)। সানওয়ে-র স্পিড ছিল তালিকার দ্বিতীয় স্থান দখলকারী সুপারকম্পিউটারের প্রায় তিন গুণ। এর মাধ্যমে চীনা সুপারকম্পিউটার দশম বারের মতো তালিকার প্রথম স্থান দখল করে।

দ্বিতীয় স্থান দখল করে চীনের আরেক সুপারকম্পিউটার থিয়ানহ্য-২এ (Tianhe-2A)। এ নিয়ে চতুর্থ বার তালিকার দ্বিতীয় স্থান দখল করে এই সুপারকম্পিউটার। আর তালিকার ৫০০ সুপারকম্পিউটারের মধ্যে চীনের ২০২টি সুপারকম্পিউটার স্থান পায়। বলা বাহুল্য, তালিকায় স্থান পাওয়া সুপারকম্পিউটারের সংখ্যার বিচারেও চীন শীর্ষস্থান দখল করে।

১৪৩টি সুপারকম্পিউটার নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কম্পিউটার পারফরমেন্সের সার্বিক বিচারেও এগিয়ে থাকে চীন। চীনা সুপারকম্পিউটারগুলোর মোট প্রসেসিং ক্যাপাসিটি ছিল তালিকায় স্থান পাওয়া কম্পিউটারগুলোর মোট প্রসেসিং ক্যাপাসিটির ৩৫.৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটারগুলো ২৯.৬ শতাংশ প্রসেসিং ক্যাপাসিটি নিয়ে থাকে দ্বিতীয় স্থানে।

সুপারকম্পিউটিং কনফারেন্সে টপ৫০০-এর শীর্ষ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার তিনদিন পর চীনের গবেষক দল ‘গর্ডন বেল প্রাইজ, ২০১৭’ (2017 Gordon Bell Prize) লাভ করে। হাই-পারফরমেন্স কম্পিউটিং (HPC) অ্যাপ্লিকেশন্স ফিল্ডে এটি বিশ্বের শীর্ষ পুরস্কার। এই গবেষক দল তাদের ‘ননলিনিয়ার আর্থকোয়েক সিমুলেশান অন সানওয়ে থাইহু-লাইট’ (Nonlinear Earthquake Simulation on Sunway TaihuLingt) প্রকল্পের জন্য এই পুরস্কার লাভ করে। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে, এই পুরস্কার লাভ করে সানওয়ে থাইহু-লাইট সুপারকম্পিউটার।

হাজার হাজার প্রসেসর সমৃদ্ধ মেইন ফ্রেম কম্পিউটারকে সুপারকম্পিউটার বলে। সুপারকম্পিউটারকে কখনো কখনো ‘কম্পিউটারের মাউন্ট এভারেস্ট’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। একটি সুপারকম্পিউটার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে; এর তথ্য ধারণক্ষমতাও থাকে অনেক বেশি। এতে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্রপাতিও হয় খুবই উন্নতমানের। চীনের জাতীয় কৌশলপত্রে সুপারকম্পিউটারকে রাখা হয়েছে উচ্চ প্রযুক্তি খাতে। বস্তুত, সুপারকম্পিউটার একটি দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। আর তাই, পৃথিবীর বহু দেশ সুপারকম্পিউটার খাতে এগিয়ে যেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনও এদের ব্যতিক্রম নয়।

বিশ্বব্যাপী নির্মিত সুপারকম্পিউটারগুলোর র‍্যাঙ্কিং করার ক্ষেত্রে টপ৫০০ (TOP500) হচ্ছে একটি নির্ভরযোগ্য সংস্থা। সংস্থাটি বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ সুপারকম্পিউটারের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ১৯৯৩ সাল থেকে সংস্থাটি এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে। বছরে তারা দু’বার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এ সংস্থা ব্যবহার করে লিনপ্যাক সুপারকম্পিউটিং বেঞ্চমার্ক টেস্ট (Linpack super-computing benchmark test)। সুপারকম্পিউটারের টপ৫০০ তালিকাকে সবচেয়ে প্রামাণিক র‍্যাঙ্কিং হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বিশ্বব্যাপী উৎপন্ন সুপারকম্পিউটারগুলোর পারফরমেন্স বিচার করতে এই র‍্যাঙ্কিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একসময় এই তালিকার শীর্ষে থাকতো যুক্তরাষ্ট্রের সুপারকম্পিউটারগুলো। কিন্তু সেটি এখন ইতিহাস।

চীনের কোনো সুপারকম্পিউটারের ওই তালিকায় প্রবেশের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৫ সালের জুনে। এর প্রায় ১৫ বছর পর, ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর, চীনা সুপারকম্পিউটার থিয়ানহ্য-১ (Tianhe-1) বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির সুপারকম্পিউটার হিসেবে টপ৫০০ তালিকায় স্থান পায়। তার প্রায় ৬ বছর পর, ২০১৬ সালের ২০ জুন, তালিকায় স্থান পাওয়া সুপারকম্পিউটারের সংখ্যার বিচারে প্রথম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীন। সেই বছর চীনের ১৬৮টি সুপারকম্পিউটার তালিকায় স্থান পায়। মাত্র দুই দশক আগেও চীন সুপারকম্পিউটার খাতে ছিল অখ্যাত একটি দেশ। কিন্তু ঠিক দুই দশকের প্রচেষ্টায় এ খাতে দেশটি ছাড়িয়ে যায় বিশ্বের সকল দেশকে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি কোনো দেশের ‘কোমল শক্তি’ (soft power)-এর একটি শক্তিশালী সূচক। আর কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে এই কোমল শক্তিকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয় সুপারকম্পিউটার। আধুনিক যুগে সুপারকম্পিউটার বড় ধরনের ও জটিল কম্পিউটিংয়ের কাজে ক্রমবর্ধমান হারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ধরনের জটিল ও বড় কম্পিউটিংয়ে অতীতে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর লেগে যেত। সুপারকম্পিউটার এর বিপুল গণনা-ক্ষমতার (computing power) মাধ্যমে, অসম্ভব দ্রুতগতিতে, জটিল উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। ফলে গণনার সময়ও অনেক কম লাগে। আজকাল বিভিন্ন উপাত্ত ও গাণিতিক পরিভাষা (algorithm) তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সঠিক ও উন্নত। এতে সুপারকম্পিউটারের গণনার ফলও হয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সঠিক।

আজকাল বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উৎপাদনে ব্যাপকভাবে সুপারকম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মতো, চীনের জনগণও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুপারকম্পিউটারের সুবিধা ভোগ করছে। আবহাওয়ার কথায় ধরা যাক। আবহাওয়ার পূর্বাভাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন আমরা পুরো সপ্তাহ বা তারও বেশি সময়ের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারছি এবং সে অনুসারে নিজেদের কর্মসূচি আগেভাগে ঠিক করে নিচ্ছি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রথমত নির্ভর করে আবহাওয়া উপগ্রহগুলোর ওপর। এসব কৃত্রিম উপগ্রহ বায়ুমণ্ডলীয় উপাত্ত সরবরাহ করে। সেসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এসব জটিল ও বিপুল তথ্য-উপাত্ত সুপারকম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার আরও নিখুঁত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে সুপারকম্পিউটারের ব্যবহার বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুতগতির রেল ও নতুন জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও সুপারকম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিগ ডেটা (big data), ক্লাউড কম্পিউটিং (cloud computing) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছে। অন্যান্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবেষণায়ও ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ও হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুপারকম্পিউটারকে বলা হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ‘সুপার ব্রেইন’ (super brain)। এই সুপারকম্পিউটার চীনের কৌশলগত বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।

সাধারণভাবে একটি দেশ সুপারকম্পিউটারের গতিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০ বছরে যে অগ্রগতি অর্জন করে, চীন অর্জন করেছে তার ৫০ গুণ। সুপারকম্পিউটার খাতের উন্নয়নে শক্তিশালী জাতীয় নীতি, প্রয়োজনীয় সম্পদের বরাদ্দ ও চীনা বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এটা সম্ভব করেছে। ‘দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য জাতীয় কর্মসূচি, ২০০৬-২০২০’-এ ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, পিফ্লপস্‌ (PFlops) ক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকম্পিউটার নিয়ে গবেষণা কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ২০১১ সালে চীনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ও অ্যাপ্লিকেশন সেবা খাতের পরিবেশ উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সুপারকম্পিউটারের প্রয়োগ বাড়ানো এবং কম্পিউটার শিল্পের সম্প্রসারণ। এদিকে, চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনায় বলা হয়, চীন এক্সাস্কেল (Exascale) সুপারকম্পিউটার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য এইচপিসি (High Performance Computing—HPC) সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে এবং এইচপিসি ইকোসিস্টেম (ecosystem) গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পরিকল্পনা অনুসারে, চীন ২০১৭ সালের মধ্যে ৬টি জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও চালু করে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, থিয়েনচিন জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র; ছাংশা জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র; চিনান জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র; কুয়াংচৌ জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র; উসি জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র এবং শেনচেন জাতীয় সুপারকম্পিউটার কেন্দ্র।

কম্পিউটার চিপ (chips) রফতানির উপর কতিপয় দেশের নিষেধাজ্ঞার ফলে, চীনে সুপারকম্পিউটার গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু চীনা বিজ্ঞানীরা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার কল্যাণে চীনা ব্রান্ডের সিপিইউ (CPU) তৈরিতে সক্ষম হন। ফলে, ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে এসে, চীনে স্থানীয়ভাবে তৈরি চিপ ব্যবহার করে সুপারকম্পিউটার তৈরির কাজ শুরু হয়। স্বীকার করতে হবে যে, চীন এখনো কম্পিউটার প্রসেসর, ইন্টারনেট, সিস্টেম সফটওয়্যার, প্যারালাল প্রোগ্রামিং, স্ট্যান্ডার্ড সেটিং, ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে, সাম্প্রতিককালে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ফলে, চীনের বিজ্ঞানীরা মূল বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি (core electronic devices), উচ্চমানের জেনেরিক চিপ (high-end generic chips) ও মৌলিক সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে সক্ষম হন। তারা স্থানীয়ভাবে লুংসন (Loogson) ও ফেইথ্যং (FeiTeng)-এর মতো সিপিইউ তৈরিতেও সক্ষম হন। এগুলো আন্তর্জাতিক পেটেন্টও পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় চীনের বিজ্ঞানীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি করেন বিশ্বের দ্রুততম সুপারকম্পিউটার এবং জিতে নেন সুপারকম্পিউটার খাতে বিশ্বের সেরা পুরস্কার। মাত্র কয়েক বছর আগে চীন যেখানে ছিল সুপারকম্পিউটার জগতে দর্শক, সেখানে এখন চীন তৈরি করছে বিশ্বের সেরা সুপারকম্পিউটার। এ অগ্রগতি অবিশ্বাস্য।

প্রায় ৪০ বছর আগে পদার্থবিদ রিচার্ড ফেইনম্যান (Richard Feynman) কোয়ান্টাম কম্পিউটার’ (Quantum Computer)-এর ধারণা দিয়েছিলেন। পরে ‘কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি’ (Quantum Supremacy) টার্মটিরও আবির্ভাব ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন কম্পিউটার বিজ্ঞানী উঠে পড়ে লাগেন এই কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি সবার আগে অর্জনের জন্য। অবশেষে, ২০১৯ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝিতে গুগল (Google) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি’ প্রযুক্তি আয়ত্তের ঘোষণা দেয়। বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’ (Nature)-এ প্রকাশিত হয় এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র। গুগলের দাবি অনুসারে, সংস্থার বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রসেসর আবিষ্কার করেছেন, যেটি ২০০ সেকেন্ডে যেটুকু গণনা বা ক্যালকুলেশন করতে পারবে, তা করতে বিশ্বের সেরা সুপারকম্পিউটারের ১০ হাজার বছর লাগবে। অবশ্য, গুগলের দাবির কয়েকদিনের মাথায় একে ‘সঠিক নয়’ বলে আখ্যায়িত করে আইবিএম (IBM)। আইবিএম দাবি করে, গুগল যাকে ১০ হাজার বছরের কাজ বলছে, সেটা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে মাত্র আড়াই দিনেই করা সম্ভব; এক্ষেত্রে গুগল অনেক বাড়িয়ে দাবি করেছে। 

গুগলের ‘কোয়ান্টাম সুপ্রেমেসি’ অর্জনের দাবির প্রায় এক বছর পর, ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘ইনডিপেন্ডেন্ট’ (Independent)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, চীনের বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছে, যেটি বিশ্বের সেরা সুপারকম্পিউটারের চেয়ে ১০০ ট্রিলিয়ন গুণ (১ ট্রিলিয়ন=১০০০ বিলিয়ন, এক বিলিয়ন=১০০ কোটি) বেশি গতিতে গণনা করতে সক্ষম। আর একই সময়ে সিনহুয়া চীনের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, চীনের প্রোটোটাইপ কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুগলের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চেয়ে ১০০০ কোটি গুণ বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন। চীনা বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেন, তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে যে সেটআপ ব্যবহার করা হয়েছে, তা গুগলের সেটআপের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।  

সানওয়ে থাইলাইট সুপারকম্পিউটার বিশ্বের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের পুরস্কার জিতেছে টানা কয়েকবার। আর এই সুপারকম্পিউটার তৈরি করেছেন প্রায় ১০০ জন তরুণ বিজ্ঞানী, যাদের গড় বয়স ২৬। এত অল্প বয়সে তারা বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাদের হাত ধরে চীনের সুপারকম্পিউটার তথা কোয়ান্টাম কম্পিউটার আরও অনেক পথ অতিক্রম করবে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

[চীনের ‘সুপারকম্পিউটার’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা অপেক্ষা করুন ‘নয়াচীনের সাফল্যের মুকুটে সাতটি পালক’ শীর্ষক বইটি প্রকাশের। বইটি খুব শিগগির বাংলাদেশের বাজারে আসবে।–লেখক]

আলিমুল হক ।। বার্তা সম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)