কোনো দেশে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেরণকারী এবং কর্মী গ্রহণকারী উভয় দেশকেই রিক্রুটমেন্ট (নিয়োগ), এমপ্লয়মেন্ট (কর্মে নিয়োগ) এবং রিপাট্রিয়েশন (প্রত্যাবর্তন) তিনটি মূল ধাপ পালন করতে হয়। তিনটি ধাপ পালনের জন্য কর্মী নিয়োগ ও প্রেরক দেশের নিজস্ব আইন বিধি পদ্ধতির সাথে আন্তর্জাতিক (আইএলও, আইওএম) নিয়মকানুন অনুসরণ এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কার্যক্রম রয়েছে। এসব অবশ্য পালনীয় নিয়মের বাইরে গেলেই ফোর্সড লেবার এবং মানবপাচার হয়। সম্প্রতি কিছু দেশ ফোর্সড লেবার এবং মানবপাচার সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করছে। এ দুটি অভিযোগ উঠেছে বিদেশি কর্মী নিয়োগের তিনটি ধাপকেই কেন্দ্র করে। লেবার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে রিক্রুটমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট এবং প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা করেই আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগের তিনটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। উভয় দেশের সরকার যে দ্বার উন্মোচন করে সেটা বাস্তবায়ন করে নিয়োগ কর্তা, রিক্রুটিং এজেন্সি, সরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন সংস্থা। ভালো, যৌক্তিক ও আইনি মাইগ্রেশন ব্যবস্থাপনায় শ্রম প্রেরণ ও শ্রম নিয়োজন দেশগুলোর দোহা রাউন্ড এবং কলম্ব প্রসেস আছে। এদিকে অনিয়মিত মাইগ্রেশন নিয়মিত শ্রম মাইগ্রেশনের জন্য হুমকি হয়ে আছে।

বিভিন্ন সংস্থার মতে, ব্যক্তি মাইগ্রেট হতে চায় এবং প্রচেষ্টা করে, ফলে কিছু ভালো মন্দ তথা মধ্যস্বত্ত্বভোগী এর সুবিধা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মৃত্যু ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক রেটিং অনুযায়ী দারুণভাবে মাইগ্রেশন ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে সচেতন দেশ আছে, আবার এসবের তোয়াক্কা করে না এমন দেশও আছে। কিছু দেশের নিজস্ব আইনকানুন কড়াভাবে অভিবাসীর ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করে। একজন অভিবাসী কর্মীর জন্য এতকিছু থাকলেও মোটাদাগে অসন্তোষ এবং অভিযোগ রয়ে গেছে। কারণ অভিবাসন স্রোতের বাঁকে বাঁকে নানা ধরনের বাধা এবং ধাঁধা বিদ্যমান।

নিয়মিত অভিবাসনের প্রথম প্রক্রিয়া রিক্রুটমেন্ট যা নিয়োগ কর্তার চাহিদার ভিত্তিতে শুরু হয়। সরকারের অনুমতি প্রাপ্ত নিয়োগকর্তা সে দেশের আইন নির্ধারিত কর্মীর বয়স, বেতন, আবাসন, সুযোগ-সুবিধা স্পষ্ট উল্লেখ করে চাহিদাপত্র ও ক্ষমতাপত্র ইস্যু করে। এজন্য নিয়োগকর্তা নিজ দেশে বা উভয় দেশে রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী বাছাই, পাসপোর্ট তৈরি, সিকিউরিটি চেক, মেডিকেল, এমপ্লয়মেন্ট চুক্তি সম্পাদন, বিএমইটির অনুমোদন, প্রশিক্ষণ, ব্রিফিং, ফ্লাইট টিকিট এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ রিক্রুটিং এজেন্সিকে এ কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছে। অনেক দেশ কর্মী নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত ভিসা ইস্যু করে, অনেক দেশ কোটা ইস্যু করে। যেভাবেই ভিসা হোক কর্মীর রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া বাংলাদেশে শুরু হয় গ্রাম থেকে। গন্তব্য দেশ পর্যন্ত কর্মীকে ধাপে ধাপে অর্থ খরচ করতে হয়। হয়রানির শিকার ও প্রতারিত হয়। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন এনজিও এবং অডিট সংস্থার জরিপে অভিবাসী কর্মীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ, ঋণে আবদ্ধ হওয়া এবং একই কারণে অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ফলে মালয়েশিয়া থেকে সে সকল শ্রমিকের দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য গ্রহণ বন্ধ করে। উৎপাদক তথা নিয়োগকর্তারা কর্মীর বাংলাদেশে হওয়া সে অতিরিক্ত খরচ ফেরত দিয়েছে। অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করেছে যা সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছে। জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন প্রত্যাশীকে গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত, থাকা, খাওয়া, পাসপোর্ট তৈরি, নিয়োগকারী দেশ হতে ইমিগ্রেশনের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল, ভিসা গ্রহণ, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স, ফ্লাইট টিকিট ক্রয়, বিমানবন্দর অতিক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীকে অর্থ দিতে হয়। অনেক কর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সির নাম জানে না, তারা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির নাম বলে।

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণে অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি বহুল আলোচিত। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে, দেশটির পার্লামেন্টে আলোচনা হয়েছে এবং সরকার কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে। এর আগে ২০০৬/০৭ সালে চাহিদার অতিরিক্ত কর্মী রিক্রুট করে মালয়েশিয়ায় এনে ডাম্পিং করা হয়েছিল। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়াকে জবাব দিতে হয়েছিল। তখনো রিক্রুটমেন্ট বন্ধ করে মালয়েশিয়া সরকার। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কখনোই শ্রম অভিবাসন নিয়মিত হয়নি। বারবার রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া মাইগ্রেশন ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের কর্মীরা কর্মস্থলে ফিলিপাইন, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান বা অন্যান্য দেশের কর্মীর অভিবাসন প্রক্রিয়া ও খরচ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে নিজের অসহায়ত্ব খুঁজে পায়। নেপাল বাংলাদেশের অনেক পরে কর্মী অভিবাসনে যুক্ত হলেও তুলনামূলক ভালো অভিবাসন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেছে।

২০২২ সাল থেকে নেপালে অভিবাসনের দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী নির্মূলের জন্য রিক্রুটিং এজেন্টসহ সকল পক্ষ অঙ্গীকার করেছে। রিক্রুটমেন্ট ক্ষেত্রে কর্মীর দেশের জীবন যাত্রা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ইত্যাদি কুপ্রভাব ফেলে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এসব ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের উন্নত মান অর্জন জরুরি।

এমপ্লয়মেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয় রিক্রুটমেন্ট এর পরই অর্থাৎ বিদেশি কর্মীকে নিয়োগকর্তা কর্তৃক বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিজস্ব আবাসনে আনার  মাধ্যমে। এরপর সে দেশের কানুন মোতাবেক দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নেওয়া, কাজে যোগ দেওয়া, থাকা, খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট, বেতন, ভাতা, চিকিৎসা ইত্যাদি হলো এমপ্লয়মেন্ট। অভিযোগ আছে রিক্রুটমেন্ট সময়ে কর্মীকে কাজ, বেতন এবং সুবিধা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা লোভ দেখানো হয় এবং কাজে এসে বাস্তবে মিল না পেলে কর্মী অসন্তুষ্ট হয়। অনিশ্চয়তায় ভোগে। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ার অতিরিক্ত খরচ ২/৩ বছরের নিয়োগ এমপ্লয়মেন্ট চুক্তির মধ্যে সে খরচ তোলা সম্ভব হয় না। কর্মী চরম হতাশায় ভোগে, খারাপ অবস্থায় শ্রম দিতে বাধ্য হয়, এমন কি পালিয়ে যায় অধিক আয়ের আশায়। পালিয়ে গিয়ে অবৈধ হয়ে  গ্রেফতার হয় এবং জেল জরিমানা শেষে খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হয়। এটা একজন যুবকের জন্য ট্রাজেডি বৈ কিছু নয়। আবার পালিয়ে গেলে নিয়োগকর্তাও শাস্তি পায় এমনকি ভবিষ্যতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি পায় না অর্থাৎ কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে যায়।

কর্মসংস্থানের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড আবাসন, কর্ম পরিবেশ, নিরাপত্তা, কর্মঘণ্টা, ভাতা, ইনটেনসিভ, পুষ্টিকর খাবার, চিকিৎসা, পরিবারের নিকট অর্থ প্রেরণ ইত্যাদি আছে। এসব সঠিকভাবে প্রতিপালন না করলে সে অবস্থাকে জোর জবরদস্তি শ্রম এবং মানবপাচার ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর কু-প্রভাব পড়ে কর্মী প্রেরণকারী দেশ এবং রিক্রুটিং এজেন্সির উপর।

নিয়োগকর্তা উত্তম হলে কোনো অভিযোগ হয় না। ফলে কর্মসংস্থান অটুট থাকে, কর্মীও পরিবারে অর্থ প্রেরণ করে। তাই বারবার দাবি এসেছে রিক্রুটমেন্ট যেন সঠিক ও সমর্থ নিয়োগকর্তার অধীনেই হয়। দূতাবাসের মাধ্যমে প্রি-এমপ্লয়মেন্ট সক্ষমতা যাচাই করার সুযোগ আছে। তেমনি পোস্ট এমপ্লয়মেন্ট অবস্থা যাচাই করাও জরুরি। এসব বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিতে স্পষ্ট প্রভিশন থাকলে ভালো।

নিয়মিত এমপ্লয়মেন্ট কর্মীর কাজ, বেতন, ভাতা ইত্যাদি নিয়ে সমস্যা হলে সে দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়ার অধিকার নিয়োগ চুক্তি, সমঝোতা এবং আইনে সুরক্ষিত আছে। কোনো সমস্যা হলে রিক্রুটিং এজেন্ট পাশে দাঁড়ায় না। রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট এবং নিয়োগকর্তার সমন্বয়ে উপযুক্ত ত্রিপক্ষীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারলে কর্মী উপকার পাবে। দেখা গেছে, ভারত ও ফিলিপাইনের কর্মীদের যেকোনো সমস্যা হলে সরাসরি বা পরিবার বা দূতাবাসের মাধ্যমে নিজ দেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করে, তখন নিজ দেশের রিক্রুটিং এজেন্ট সমস্যার সমাধান করে এবং দূতাবাস বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে। দুই দেশের দুই রিক্রুটিং এজেন্ট এবং নিয়োগকর্তা অর্থাৎ ত্রিপক্ষীয় দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের আইনেও উল্লেখ আছে রিক্রুটিং এজেন্সি সঠিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। ঘর থেকেই কল্যাণের শুরু এবং মূল শক্ত করার সময় এসেছে। 

কর্মীর কর্মসংস্থান এবং সেদেশে অবস্থান সমান। অবস্থানের একমাত্র শর্ত হলো নিয়োগকর্তা তথা ভিসা স্পন্সরের অধীনেই থাকবে এবং ভিসার শর্ত মেনে চলবে। না মেনে চললেই বিপদ তখন দূতাবাস গিয়েও কিছুই করতে পারে না। অভিবাসী কর্মী কর্তৃক সে দেশের সামাজিক সমস্যা বা উৎপাত হিসেবে চিহ্নিত হলে, এক সেক্টরের ভিসা নিয়ে অন্য সেক্টরে কাজ করলে, সেদেশের আইন কানুনকে ফাঁকি দিলে কর্মী সেদেশে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। এমনকি ভবিষ্যৎ কর্মী নিয়োগ বন্ধ হয়। যেমন, বিদেশি কর্মী কর্তৃক স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করার প্রবণতা থাকায় মালয়েশিয়া আইন করে বিদেশি কর্মীর বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। তাছাড়াও ধর্মীয় গোঁড়ামি বা অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করা, অবস্থানকারী দেশের সংস্কৃতি আচার ও ঐতিহ্যকে আঘাত বা অবমাননা করা হলেও বিদেশি কেউ সে দেশে অবস্থান করতে পারে না। এসব এমপ্লয়মেন্টের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিদেশে কর্মীর ভালো থাকা না থাকা নির্ভর করে তার নিজের উপর। তাই প্রশিক্ষণ দিয়েই রিক্রুটমেন্ট পর্যায় শুরু করা বাধ্যতামূলক করা যায়। কেননা সচেতন কর্মীই প্রবাসে ভালো থাকে। 

ভালো রিক্রুটমেন্ট প্রবাসী কর্মীকে শুধু ভালো এমপ্লয়মেন্ট দেয় না অন্যান্য অধিকারেরও সুরক্ষা দেয়। এমপ্লয়মেন্ট চুক্তি ভঙ্গ করলে, প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, অন্যায়, অবহেলা, অবমাননার শিকার হলে আইনত প্রতিকার পাওয়ার অধিকার আছে। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে বৈধ কর্মীর শ্রম আদালত, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আদালত এমনকি সিভিল আদালতে যেতে পারে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক টায়ার কোম্পানির কর্মীরা কম বেতন পাওয়ার অভিযোগ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আদালতে এবং আদালত কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়ে তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে।

ভালো রিক্রুটমেন্ট ও এমপ্লয়মেন্ট প্রবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করে। যেমন, মালয়েশিয়ার সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন ২০১৯ সাল থেকে বিদেশি কর্মীদের কর্মকালীন দুর্ঘটনা বা কর্মস্থলের পরিবেশের বা কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী অস্থায়ী অক্ষমতা, স্থায়ী অক্ষমতা, মেডিকেল সুবিধা, পারিবারিক সুবিধা, পুনর্বাসন সুবিধা এবং মৃত্যু হলে লাশ পরিবহন ও দাফন করার খরচ দিচ্ছে। স্থায়ী অক্ষমতার কারণে কর্মী দেশে থেকেও সারাজীবন আর্থিক সুবিধা পাবে। পারিবারিক সুবিধার ক্ষেত্রে স্ত্রী, ২১ বছর বয়সের কম সন্তান / ভাই-বোন, কেউ না থাকলে বাবা-মা, বাবা-মা না থাকলে দাদা-দাদী সুবিধা পাবে। বিধবা স্ত্রী, পিতামাতা, দাদা-দাদী সারাজীবন দেশে থেকেই মালয়েশিয়া সরকারের আর্থিক সুবিধা পাবে। তবে কর্মী সঠিক নিয়মকানুনের মধ্যে না থাকলে কোনো অধিকার আদায় করা যায় না। অর্থাৎ কর্মীর উপর নির্ভর করছে।

রিপাট্রিয়েশন বা দেশে ফেরত প্রেরণ যা বিদেশি কর্মীর শেষ ধাপ। এমপ্লয়মেন্ট কনট্র্যাক্ট শেষ হলে ভিসা স্পন্সর কর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায়। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ অনুযায়ী দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সির। অর্থাৎ ভিসা স্পন্সর ও প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি দেশে ফেরত নিশ্চিত করবে। অনেকে বলে থাকেন কর্মী পালিয়ে গেলে কোনো দায় থাকে না কিন্তু পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বেশি বিপদে ও ঝুঁকিতে থাকে আর পালিয়ে যাওয়া মানে নিজ পরিবারে প্রত্যাবর্তন নয় বরং সব থেকে বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত হয়। তাদের বন্দি করে রাখা, জিম্মি করা, মুক্তিপণ আদায়, দাসত্বের শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়। লাপাত্তা কর্মী সম্পর্কে ভিসা স্পন্সর পুলিশ ও ইমিগ্রেশনে রিপোর্ট করে। ফলে সে কর্মী যেকোনো সময় গ্রেফতার হয়, বিচারে জরিমানা ও জেল হয় এবং জরিমানা না দিতে পারায় অতিরিক্ত সময় জেল খাটতে হয়। যারা গ্রেফতার এড়িয়ে চলে তাদেরকেও দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য পুলিশ বা ইমিগ্রেশনে আত্মসমর্পণ করতেই হয়। নিজেকে জরিমানা এবং ফ্লাইট টিকিট ক্রয় করতে হয়। একই কারণে নিয়োগকর্তাকেও শাস্তি পেতে হয়। রিপাট্রিয়েশনের উপর নির্ভর করছে পরবর্তী বিদেশি কর্মী নিবে কি না। সংগত কারণেই তাকেই আগে দেশে ফেরত আনতে রিক্রুটিং এজেন্সির দায় ও দায়িত্ব দুটোই আছে।

এমপ্লয়মেন্ট চুক্তিতে কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরত যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রিপাট্রিয়েশন খরচ অর্থাৎ ফ্লাইট টিকিট নিজেকে দিতে হয়। স্বাভাবিক নিয়মে ভিসা স্পন্সর ইমিগ্রেশনে আবেদন করে ফাইনাল এক্সিট পারমিশন নিয়ে কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে যারা যায় তারা শাস্তি পায় এবং জেল খাটার পরেও ডিটেনশন সেন্টারে অপেক্ষা করে বিমান টিকিটের জন্য। প্রয়োজনে দূতাবাস ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেয় কিন্তু টিকিট নিজেকেই সংগ্রহ করতে হয়।

এই তিন ধাপের মধ্যে একটি ধাপ বাংলাদেশে হওয়ায় বাংলাদেশের সকল অথরিটির প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হচ্ছে কি না, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না এসব দেখে। পরবর্তী  দুটি ধাপ এমপ্লয়মেন্ট এবং রিপাট্রিয়েশন নিয়োগকারী দেশে হয়ে থাকে এবং অবজারভেশন করার দায়িত্ব রয়েছে দূতাবাসের উপর। তবে আইনে তিনটি ধাপেই রিক্রুটিং এজেন্টের দায় দায়িত্ব রয়েছে। যা সকলের আন্তরিকতায় নিশ্চিত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই সুঅভিবাসন সম্ভব। 

আহমাদুল কবির ।। মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক