ছবি : সংগৃহীত

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সরকারের তৎপরতায় ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে,  বিএনপি এবং তার সহযোগী গোষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি বিদেশি শক্তিকে বাংলাদেশের উপর স্যাংশন আরোপ করার জন্য যে অনুরোধ জানিয়ে আসছে, তার প্রকৃত ফলাফল কী হতে পারে।

শেখ হাসিনার সরকার দেশে-বিদেশে অবস্থানকারী এই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করতে পেরেছে। এই ষড়যন্ত্রের সকল নথিপত্র এবং তথ্য প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্সিগুলো এবং আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা ইতিমধ্যে অধিকতর তদন্তে নেমেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সর্বাধিক গুরুত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি কর্তৃক লবিস্ট নিয়োগের যাবতীয় নথিপত্র এবং তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছে। এই সকল নথি-পত্রে দেখা যায় যে, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক স্যাংশন আরোপের লক্ষ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্টদের দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে লবিস্ট নিয়োগ এবং লবি কার্যক্রম বৈধ হলেও বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অথবা রাজনৈতিক দল সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত লবিস্টদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারে না। এই ধরনের কাজ সন্দেহাতীতভাবে মানি লন্ডারিং

নথি সমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্টদের সাথে প্রত্যেকটি চুক্তিতেই মূল 'ফরেন প্রিন্সিপাল' হিসেবে বিএনপির নাম রয়েছে এবং বিএনপি'কে 'ফরেন পলিটিক্যাল পার্টি' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চুক্তিগুলোতে 'ফরেন পলিটিক্যাল পার্টি'র ঠিকানা লেখা হয়েছে, 'বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, ২৮, ১ ভিআইপি রোড, ঢাকা ১২০৫, বাংলাদেশ'। এই ট্রাঞ্জেকশনগুলোতে যে সকল বাংলাদেশি এবং তাদের এজেন্ট জড়িত, তাদের সকলেরই তথ্য বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে পেয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশে-বিদেশে তাদের সকল ব্যাংক একাউন্ট এবং অন্যান্য তথ্যাদি ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সকল কর্মকাণ্ডে আরও কারা কারা জড়িত সে বিষয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।

এছাড়া, বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে স্বাক্ষর করে যে সকল চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন, তার মর্মার্থ হচ্ছে, বিএনপি এবং তার সহযোগীরা বাংলাদেশের উন্নয়নঅর্থনীতি এবং এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। এমনকি তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত নন। মির্জা ফখরুলের পত্রে সেই ইঙ্গিতই রয়েছে। এই পত্র সমূহে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি যে অপরাধ করেছেন, সেটি আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) এর বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ অপরাধ। 

বাংলাদেশ বিরোধী এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্বরত বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ইতিমধ্যে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি অনেকেই ভুলে গেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের (যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট) পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস বাংলাদেশ সময় গতকাল নিউ ইয়র্কে এক বক্তৃতায় তাদের সেই ষড়যন্ত্রের কথা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর কোনো স্যাংশন আরোপ করছে না।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে, তারা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি জানান, বর্তমানে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটি একটি সংস্থার কিছু ব্যক্তির ওপর, পুরো সংস্থার ওপর নয়। তারা সেটি খতিয়ে দেখছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসম্যান জানান, একটি স্বার্থান্বেষী মহল আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জোরালোভাবে লবিং করছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের কথা অনুযায়ী এটি করবে না, এটি সম্ভব নয়। তার এই বক্তব্যে কিছু ষড়যন্ত্রকারী ছাড়া বাংলাদেশের সকল জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

দৃশ্যত বিএনপি এবং তার সহযোগীদের উদ্দেশ্য সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের এই কর্মকাণ্ডের মাসুল দিতে হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এবং তার জনগণকেই। কারণ কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন হলেই সেই দেশে সরকার পরিবর্তন হয় না। বর্তমানে ৩১টি দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন রয়েছে। কিন্তু এই সকল স্যাংশনের কারণে কোনো রাষ্ট্রেই সরকার পরিবর্তন হয়নি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাহলে কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে? ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ এবং তার জনগণ। তাদের এই রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এদেশের সতেরো কোটি মানুষ বিপদে পড়তে পারে। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে এদেশের অর্থনীতি।

গত ১৩ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা অনেক পরিশ্রম, কষ্ট, মেধা, সাহসিকতা এবং অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বের নেতৃত্বের একটা জায়গায় নিয়ে আসছেন। তিনিই বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন। তার নেতৃত্বেই আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনীতি। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় আজ ২৫৫৭ মার্কিন ডলার যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের রূপরেখা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা এবং যাবতীয় প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস থেকে। এই রপ্তানি আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

আমাদের প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ তৈরি পোশাক খাতে সরাসরি কাজ করছে। পরোক্ষ ভাবে কয়েক কোটি মানুষ এই সেক্টরের সুবিধাভোগী। আমাদের জিডিপির প্রায় ১১ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কোনো ষড়যন্ত্র হলে সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের গার্মেন্টস খাত। এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে পুরো অর্থনীতি ধসে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই রকম ষড়যন্ত্র সফল হতে দিতে পারি না।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সরকার এদেশের মানুষকে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা এটি বারবার ভুলে যায় যে, প্রায় দশ বছর ধরেই তারা লবিস্টের মাধ্যমে বিদেশি শক্তির উপর নির্ভর করে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্রই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এবারও তিনি ষড়যন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিমধ্যে পিছু হটতে শুরু করেছে। এবার আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটন করব।

ড. সেলিম মাহমুদ ।। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ