খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

রাজনৈতিকভাবে বহুদিন ধরেই প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের শক্ত অবস্থানের কাছে রীতিমতো অসহায় অবস্থায় রয়েছে দলটি। মূলধারার রাজনৈতিক দলটি দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকার কারণে সাংগঠনিকভাবেও হারিয়েছে শক্তি।    

বছর কয়েক আগে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি এখন হামলা, মামলা ও ধরপাকড়ের মধ্যেই টুকটাক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ সরকার পতনের যে আন্দোলন দলটির ছিল তা থেকে তারা এখন দূরে সরে এসেছে। এ দলেরই অনেক নেতা বলছেন, বিএনপি এখন যেসব ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আছে, তার সবগুলোই তৈরি করেছে সরকার। বিএনপির নিজস্ব কোনো দাবি বা ইস্যুতে এখন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে না। সরকার সেই আন্দোলনকে থামাতে গিয়ে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের আশ্রয় নিচ্ছে। এতে নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে আর প্রতিবাদে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বিএনপি। 

অবশ্য সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে বলেও দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, সেই ধারাবাহিকতায় আগামীতে আরও গতিশীল কর্মসূচি দেওয়া হবে।  

গত এক সপ্তাহে বিএনপি তিনটি ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করেছে। তার সব কয়টি সরকারের তৈরি করা বলে মনে করেন দলের অনেকে। বিএনপি সাম্প্রতিক যেসব ইস্যুতে মাঠে নেমেছে তার একটি ছিল নড়াইলের একটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হওয়া, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া আর সর্বশেষ নড়াইলেরই আরেকটি মামলায় খালেদা জিয়া ও   গয়েশ্বর চন্দ্রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া। 

যেই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব, সেটা করবো না? তার মানে কি আমরা আমাদের মূল আন্দোলন থেকে সরে গেলাম? সেটা অব্যশই না

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপি নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের উদ্যোগের খবরটি আসার পর আমরা প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করি। ওই কর্মসূচিতে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা ও নেতাকর্মীদের আটক করে, তখন আবার এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করি আমরা। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নড়াইলের একটি আদালত। এভাবে সরকার একের পর এক ইস্যু তৈরি করে, আর সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি। তবে, সামনের দিকে বিএনপির এ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি আরও কঠোর ও গতিশীল হবে। এছাড়া সরকারের দেওয়া ইস্যুর সঙ্গে বিএনপির নিজস্ব দাবি নিরপেক্ষ সরকার ও ‘গৃহবন্দি’ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও কর্মসূচি পালন করা হবে।

ক্ষমতাসীনদের তুলে দেওয়া ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলন করছে- এ দাবির সঙ্গে অবশ্য একমত নন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা সরকারের দেওয়া ইস্যুতে আন্দোলন করছি না। তবে যেই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব, সেটা করবো না? তার মানে কি আমরা আমাদের মূল আন্দোলন থেকে সরে গেলাম? সেটা অব্যশই না। আমাদের মূল আন্দোলন হচ্ছে এ সরকারের পতন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য। 

জিয়ার খেতাব বাতিলের চিন্তা করলে সরকারের হাত পুড়ে ছারখার হবে- এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় প্রেসক্লাবের সামনের এক সমাবেশ থেকে

তিনি বলেন, সরকার একটা বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা নিয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছি। এগুলো নিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতির বাস্তবতায় কর্মসূচি পালন করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের মূল কর্মসূচির সঙ্গে এসব কর্মসূচিও থাকবে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, করোনার কারণে অন্যান্য দলের মতো কয়েক মাস বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। ফলে এখন বিএনপির টার্গেট হচ্ছে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের দেওয়া এসব ইস্যুতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকা।

এক প্রশ্নের জবাবে এ নেতা বলেন, সরকার বিএনপির এ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই সহ্য করতে পারছে না। প্রেসক্লাবের হামলার পর কয়েকটি মামলা হয়েছে ইতোমধ্যে। সেই সব মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তারও শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া এখনও সরকারের মেয়াদ ৩ বছরের মতো আছে। ফলে এ দীর্ঘ সময় আন্দোলন টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চাই।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, এ বছর রাজনীতিতে গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী। সব রাজনৈতিক দল এ ইস্যুতে সারা বছর কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপিও এর বাইরে নেই। ইতোমধ্যে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গঠিত কমিটিগুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে কিভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে তা গুছিয়ে এনেছে। আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হবে বিএনপির সুর্বণজয়ন্তীর কর্মসূচি। সেমিনার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও গোল টেবিল বৈঠকসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন হবে সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে। তবে, সুর্বণজয়ন্তীর কর্মসূচি পালনের আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে বিএনপি।

বিএনপির সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এবং আড়ম্বরভাবে পালন করতে চাই। সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অর্থনৈতিক যে বিবর্তন সেইগুলোর প্রকৃত ইতিহাস নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরবো আমরা। দেশের মানুষকে ও বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানো আমাদের মূল পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, ১ মার্চ থেকে আমাদের কর্মসূচি শুরু হবে। তবে কর্মসূচির স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সুর্বণজয়ন্তীর ১ মার্চের কর্মসূচির জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হবে। সেখানে অনুমতি না দিলে মহানগর নাট্যমঞ্চ অথবা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জন্য আবেদন করা হবে। যেখানে অনুমতি পাওয়া যাবে সেখানেই বিএনপির সুর্বণজয়ন্তীর কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।

এএইচআর/এসএসএইচ