সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের সংলাপে বসতে যাচ্ছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফার এ সংলাপ শুরু হবে আগামী ২ অক্টোবর। প্রথম দিন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে প্রথম দফায় সংলাপ হওয়া প্রতিটি দলের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসবে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফার সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাবনা এসেছিল সেগুলোর সঙ্গে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনের আগে কোন কোন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে তা নিয়ে কয়েকটি পয়েন্টে আলোচনার জন্য লিখিত এজেন্ডা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও প্রশাসন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা রক্ষায় কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ আছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকার কী ধরনের হবে, তার কাঠামো কী হতে পারে এসব বিষয়ও লিখিত প্রস্তাবনায় রয়েছে। দ্বিতীয় দফার সংলাপে লিখিত এই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আলোচনা করবে বিএনপি।

আওয়ামী লীগকে সরিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমরা আন্দোলন করব না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী হওয়ারও লালসা নেই। ফলে বিএনপির নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রলোভন আমাদের দেখিয়ে লাভ হবে না। তাদের আগে পরিষ্কার করতে হবে, কীসের ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন হবে; তারা রাষ্ট্রের কী কী বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চায়; সেগুলো জনগণের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। তারপর তাদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করব

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিষয়টি নিশ্চিত করে  ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ২ অক্টোবর থেকে আমরা দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু করব। প্রথম দিন কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন : জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ নয়, সিপিবি-বাসদের অপেক্ষায় বিএনপি

দ্বিতীয় দফার সংলাপের এজেন্ডা কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্দোলন কীসের ভিত্তিতে হবে, সেটা তো সংলাপে তুলে ধরতে হবে। আন্দোলনের বিষয়বস্তু জনগণকেও জানাতে হবে। সেসব বিষয় নিয়ে এবারের সংলাপে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করছি। সেটা আর যেসব দল চায়, তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তারপর যুগপৎ আন্দোলন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এবারের আলোচনায় মোটা-দাগে তিনটা এজেন্ডা থাকবে। সেগুলো হলো, নিরপেক্ষ সরকার, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন ও খালেদা জিয়ার মুক্তি।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গুণগত কী কী পরিবর্তন আনবে সেটা যদি অন্য দলগুলোর সামনে তুলে ধরা না যায় তাহলে কোনো সংলাপ বা ঐক্যই কাজে আসবে না। অতীতে এ ধরনের সংলাপ বা ঐক্য হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই আগে পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। বিএনপিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, আমরা আগে যে ভুল করেছিলাম, সেগুলো আগামীতে হবে না। এবার আমরা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের বিচার, সংসদ সচিবালয়, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে গুণগত পরিবর্তন আনব। তাহলে যুগপৎ আন্দোলন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। অন্যথায় কিছুই হবে না।

আরও পড়ুন : সংলাপে যাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ, লক্ষ্য সরকারবিরোধী ‘ঐক্যে’ পৌঁছানো

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম দফায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া একটি দলের শীর্ষ নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে প্রথম দফার সংলাপে আমরা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছি। সেগুলো লিখিতভাবেও দিয়েছি। এর মধ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারসহ নানা বিষয় ছিল। এবার তারা কী প্রস্তাবনা তৈরি করেছে সেটি এখনো আমরা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে সরিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমরা আন্দোলন করব না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী হওয়ারও লালসা নেই। ফলে বিএনপির নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রলোভন আমাদের দেখিয়ে লাভ হবে না। তাদের আগে পরিষ্কার করতে হবে, কীসের ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন হবে; তারা রাষ্ট্রের কী কী বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চায়; সেগুলো জনগণের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। তারপর তাদের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করব।

সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংলাপে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে আমাদের পক্ষ থেকে সেটি এখনও ঠিক করা হয়নি। দলের বৈঠক করে তা ঠিক করা হবে।

আরও পড়ুন : বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী নয় ধর্মভিত্তিক দলগুলো

সরকার-বিরোধী বৃহত্তর যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ বছরের ২৪ মে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। প্রথম দফার ওই সংলাপে ২৩টি দল অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল জেএসডি, গণফোরামের একাংশ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দল (ডিএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ন্যাপ-ভাসানী ও বাংলাদেশ ন্যাপ।

এএইচআর/ এসকেডি