‘বাংলাদেশ এলডিপি’ নামে নিবন্ধন চায় এলডিপির একাংশ
সাবেক বিএনপি নেতা কর্নেল অলি আহমেদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি থেকে বেরিয়ে আসা একাংশ এখন ‘বাংলাদেশ এলডিপি’ নামে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নিবন্ধন চায়।
রোববার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দলটির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে একটি দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপসচিব আব্দুর হালিমের কাছে এ আবেদন জমা দেয়।
বিজ্ঞাপন
সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসে। নিবন্ধন পাওয়ার আশায় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল।
শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও কে এম নূরুল হুদার তিন কমিশন মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছিল। তাদের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।
বিজ্ঞাপন
অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) ভাঙন ধরেছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে। আব্দুল করিম আব্বাসীকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিব করা হয় শাহাদাত হোসেন সেলিমকে। সে সময় থেকে ভাঙনের কবলে পড়েছে দলটি। চলতি বছর কিছু নেতা অলি আহমেদের সঙ্গ ত্যাগ করে সেলিমদের সঙ্গে যোগ দেন।
এদিকে ১৬ বছর আগে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপি থেকে ৩৫ জন সংসদ সদস্য বেরিয়ে এসে অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপি গঠন করে। পরে ২০০৮ সালে দলটি ইসির নিবন্ধন পায়।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘২০১৯ সালে কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এতদিন একই নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ এলডিপি নির্ধারণ করেছি।’
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন শর্ত অযৌক্তিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন শর্ত পালন করা অনেক দুরূহ। তবুও আমরা প্রায় সব শর্তই পালন করেছি। একটা শর্ত আছে স্বাধীনতার পর থেকে যেকোনো একটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হবে। আমরা শর্তটি পালন করেছি। আমাদের দলে দুইজন সংসদ সদস্য আছে। এর মধ্যে আব্দুল করিম আব্বাসি ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, অন্যদিকে আব্দুল গণি তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।’এছাড়া ১২৭টি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নিবন্ধন দিক। নিবন্ধিত প্রায় অর্ধেক দলই কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না জানিয়ে তিনি অস্তিত্বহীন এসব দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জানান এবং সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার আবেদন জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নামে ২০ দলীয় জোটে ছিলাম। এখন আর সেভাবে জোটের অস্তিত্ব নেই। তবে বিএনপির নেতৃত্বে আমরা যুগপৎ আন্দোলন যুক্ত হবো।’
নতুন দলগুলোর কাছে গত ২৬ মে আবেদন আহ্বান করে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। পরে অবশ্যই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনুরোধ করে আসার পর নতুন দলের নিবন্ধনের সময় দুই মাস বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে ২৯ আগস্টের মধ্যে আবেদন করার যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেটি অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন করা নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। ওই সময় ৭৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। তবে কোনো দলকে ইসি নিবন্ধন দেয়নি। পরে আদালতের আদেশে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং একই বছরের ৯ মে বাংলাদেশ কংগ্রেসকে নিবন্ধন দেয় ইসি।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, এই দু’টি দলকে নিবন্ধন দেয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি। এ পর্যন্ত যে পাঁচ দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
এসআর/জেডএস