# প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ
# ১০ ডিসেম্বরের আগে রাজধানীতে বড় বড় কর্মসূচি
# ঢাকার প্রবেশ পথগুলো থাকবে আ.লীগের দখলে
# বিরোধীদের ঘরেই অবরুদ্ধ করে রাখার পরিকল্পনা

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ ঘোষণা দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ পরিচালিত হবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। ওই দিনটিকে তারা সরকার পতন আন্দোলনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। এই ‘১০ ডিসেম্বর’ ইতোমধ্যে দেশে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেদিন আসলে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে; কাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

‘১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে’- বিএনপির এমন ঘোষণা ক্ষমতাসীনরা আমলে নিচ্ছে আবার নিচ্ছেও না! ওইদিন ঢাকাকে নিজেদের দখলে রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ আবার বিএনপির এই ঘোষণার পেছনে কোনো ‘রহস্য’ আছে কি না তাও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে দলটি। আপাতত বিএনপির ঘোষণাকে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ হিসেবে দেখছে তারা। বড় ধরনের ‘হুমকি’ মনে করছে না।

‘১০ ডিসেম্বর’ কী হতে যাচ্ছে বা বিএনপির ঘোষণা নিয়ে কী ভাবছে ক্ষমতাসীনরা- এমন প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার কাছে। তাদের মতে, এটা মূলত বিএনপির ফাঁকা আওয়াজ। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে বা রাখতে তারা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ‘১০ ডিসেম্বর’কে সামনে এনেছে। ওইদিন আসলে কিছুই হবে না বলে মনে করেন তারা।

তবে নানাভাবে ঢাকার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কৌশল নিয়েছে সরকারি দল। গতকাল (১১ নভেম্বর) আওয়ামী যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীতে সুবর্ণজয়ন্তী সম্মেলন করেছে যুবলীগ। ‘১০ ডিসেম্বরে’র আগে ক্ষমতাসীনরা রাজধানীতে আরও বেশকিছু সমাবেশ-সম্মেলন করবে। এর মধ্যে আছে ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন এবং ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। এসব সমাবেশ ও সম্মেলনের মাধ্যমে রাজধানীতে নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও চাঙা রাখার চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন>> প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ জয়-লেখক!

‘১০ ডিসেম্বর’ কী হতে যাচ্ছে বা বিএনপির ঘোষণা নিয়ে কী ভাবছে ক্ষমতাসীনরা- এমন প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার কাছে। তাদের মতে, এটা মূলত বিএনপির ফাঁকা আওয়াজ। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে বা রাখতে তারা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ‘১০ ডিসেম্বর’কে সামনে এনেছে। ওইদিন আসলে কিছুই হবে না বলে মনে করেন তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। তবে যে কৌশলই অবলম্বন করুক সেটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। সেটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’  

‘বিএনপির কৌশলে’ কী রয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ‘অফ দ্য রেকর্ড’-এ বলেন, বিএনপি মূলত তৃণমূলে দুটি বার্তা পাঠিয়েছে। একটি হচ্ছে- ১০ ডিসেম্বর তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় বসবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বিএনপি সেই আসনে বসবে। তার নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া। আরেকটি বার্তা হলো, অতি শীঘ্রই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। সরকারই তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দেবে। এই দুই বার্তা বিএনপি জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও মহানগরের নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে। 

আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি এবং তাদের মরিয়া ভাব কিছুটা হলেও ভাবনায় ফেলেছে ক্ষমতাসীন দলকে। পরিকল্পিতভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ করেও বিএনপির সমাবেশগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশালের সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হওয়ায় বিএনপির বিভাগভিত্তিক সামনের সমাবেশগুলোতে লোক-জমায়েত কঠিন করে তোলার পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দল।

তবে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিশেষ নজর এখন ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশের দিকে। এই সমাবেশের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনা যাতে বেশি দূর না গড়ায় এবং ‘সরকার দুর্বল হয়ে গেছে’ এমনটা যাতে প্রকাশ না পায়, সেটি দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের স্থানীয়ভাবে জায়গায় জায়গায় অবরুদ্ধ করে রাখার পরিকল্পনা চলছে। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে।

আরও পড়ুন>> ক্ষমতার বলয়ে ১৩ বছর, আওয়ামী নেতৃত্বে নতুন মুখ কম

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, স্বাভাবিকভাবে তারা কর্মসূচি দিতেই পারে। কর্মসূচি দিলে কর্মীরা সতেজ থাকে। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি না থাকলে সেই দলটি নিস্তেজ হয়ে যায়। সে কারণে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কর্মসূচি থাকতেই পারে। বিএনপি এখন বেশ সতেজ, তারা আন্দোলন নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমার দলের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত, তারাও রাজপথে মিছিল-মিটিং, জনসভা, সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত আছে। সামনেও সভা-সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।’        

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, তারা জানতে পেরেছেন ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিপুল মানুষ এনে সরকারকে চাপে ফেলে দেবে বিএনপি- এমন একটা প্রচারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে একেবারে বিনা বাধায় সমাবেশ করতে দিলে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগতে পারে। সরকার চাপে পড়ে বিএনপিকে জায়গা দিতে বাধ্য হচ্ছে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে। দলের হাইকমান্ডের কাছে মাঠ পর্যায়ের নেতারা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরাও জানতে চাইছেন ওইদিন আসলে কী হতে যাচ্ছে? কেউ কেউ কৌতূহল থেকে জানতে চাইছেন, আবার কারও কারও মুখে দুশ্চিন্তার ছাপও আছে।

‘বিএনপির কৌশলে’ কী রয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ‘অফ দ্য রেকর্ড’-এ বলেন, বিএনপি মূলত তৃণমূলে দুটি বার্তা পাঠিয়েছে। একটি হচ্ছে- ১০ ডিসেম্বর তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় বসবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বিএনপি সেই আসনে বসবে। তার নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া। আরেকটি বার্তা হলো, অতি শীঘ্রই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। সরকারই তাকে দেশে আসার সুযোগ করে দেবে। এই দুই বার্তা বিএনপি জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও মহানগরের নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে। এটাই তাদের ‘কৌশল’। মূলত এই দুই বার্তা দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠকে সক্রিয় করেছে। ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের সক্রিয় করেছে। আগে সমাবেশে লোকসংখ্যা না হলেও বর্তমানে বিএনপির সমাবেশে বেশ ভালো লোকজন দেখা যাচ্ছে।

‘১০ ডিসেম্বর’ নিয়ে আওয়ামী লীগ কতটা প্রস্তুত- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে রাজপথ দখলে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির নয়। আর এই অপশক্তি যদি মাঠে বের হয়, আমরা শক্ত হাতে তাদের দমন করব; শক্ত হাতে মোকাবিলা করব।’

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় বলেছেন, ‘বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর রাস্তায় বের হবে। ওইদিন তারা নাকি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিজয় মিছিল করবে। তার মানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নামবে। এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেবো না।’    

এমএসআই/জেএস