জামায়াতের সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি উদ্বোধন লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ির লাল ফিতা কেটে

বক্তব্যের বিষয় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর’। অথচ জামায়াতের আমির তার আট পৃষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তব্যে কোথাও ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকার কথা বলেননি। সাবেক জাসদ সদস্য এবং বর্তমানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের দাবি, ‘জামায়াত এই করেছে, ওই করেছে’। কর্মসূচিও দিলেন অনেক। এসব কর্মসূচির উদ্বোধনের ধরনেও এনেছেন বৈচিত্র্য। জামায়াতের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা লাল ফিতা কেটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধন করে দিলেন বিস্ময়ের জন্ম!

মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, দলটি একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে ক্ষমা না চেয়ে বরং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান দিচ্ছে! তাদের পূর্বসূরিদের কৃতকর্মের জন্য জাতির সামনে ক্ষমা না চেয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের নামে চরম ধৃষ্টতা, ঔদ্ধত্য দেখিয়েছি এবং ৩০ লাখ শহীদকে অপমান করছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় দলটি একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয়।

তাদের মতে, ইতোমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামায়াতের প্রতিষ্ঠালগ্নের পাঁচ নেতার ফাঁসি হয়েছে। আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তব্যে জামায়াতের বর্তমান আমির মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া নেতাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। এর মানে, এখনও তারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেন না। তারা মনে করেন, ৭১ সালে তাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। সরকার যদি তাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সুযোগ দেয়, তার মানে সরকারও শহীদদের এই অপমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত!

তাদের পিতৃপুরুষরা খুন-খারাবি করেছে, এটার জন্য ক্ষমা চাইবে না? এটা তো জামায়াতের বোকামি। কারণ, তারা যে তাদের ভূমিকার জন্য, খারাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত নয়— সেটাই প্রমাণ করে

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তাদের পিতৃপুরুষরা খুন-খারাবি করেছে, এটার জন্য ক্ষমা চাইবে না? এটা তো জামায়াতের বোকামি। কারণ, তারা যে তাদের ভূমিকার জন্য, খারাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত নয়— সেটাই প্রমাণ করে। দলটির জন্য এটা বুমেরাং হবে। রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা হবে বলে মনে করি।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। এটা জামায়াতের চরম ধৃষ্টতা। তারা ৩০ লাখ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। তারা এখন সুবর্ণজয়ন্তী পালনের নামে জনগণকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। জামায়াতকে এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া কোনোভাবেই সরকারের জন্য ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে, এটা ৩০ লাখ শহীদের প্রতি অপমান ছাড়া কিছুই নয়। এটা করতে দিলে ৩০ লাখ শহীদের অবমাননা প্রক্রিয়ায় সরকারও যুক্ত হবে এবং দায়ী থাকবে।’

আমাদের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। এটা জামায়াতের চরম ধৃষ্টতা। তারা ৩০ লাখ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। তারা এখন সুবর্ণজয়ন্তী পালনের নামে জনগণকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। জামায়াতকে এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া কোনোভাবেই সরকারের জন্য ঠিক হবে না

শাহরিয়ার কবির, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমির তার বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেশবাসীর জন্য যা ভালো মনে করেছেন, সেটাই বলেছেন। কারও বানানো বক্তব্য দেননি। যিনি দল চালান, তার কাছে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। সেই অনুযায়ী তিনি বক্তব্য দিয়েছেন।’

গত ১ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তব্যে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরেও জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। জামায়াতে ইসলামী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তা সত্ত্বেও শত প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে রাজপথে প্রতিবাদমুখর থেকেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে পদার্পণের এই মুহূর্তে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলীকে। যারা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।’

করলাম তাতে কী? মানুষের সেবায় লাশবাহী গাড়ি লাগে না। প্রতিবেশীরা মারা গেলে, হাসপাতালে নিতে গেলে গাড়ি পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স তো সবার কাজে লাগে। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কী আছে

গোলাম পরওয়ার, জেনারেল সেক্রেটারি, জামায়াত

জামায়াত সূত্রে জানা যায়, একাত্তরের বিষয়ে দলটির ভেতরে দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষ একাত্তরে ভূমিকার বিষয়ে জাতির সামনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি জানায়। কিন্তু অপর পক্ষের কাছে কোণঠাসা তারা। দলটির শীর্ষনেতৃত্বে ওই পক্ষে থাকায় তারা পেরে উঠছেন না।

দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের প্রভাবশালী একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে জানান, ১৯৭১ সালের বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিক ক্ষমা’ চাওয়া নিয়ে ২০১৭ সালে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দেওয়া মতামত শুরা সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে ৪০ ভাগের মত ছিল ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে। ৬০ ভাগ বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এরপর বিষয়টি আর সামনে এগোয়নি।

তবে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হিসেবে দলের আমির হন শফিকুর রহমান। অনেকের ধারণা ছিল, মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তিনি আবারও এজেন্ডা আকারে সামনে আনবেন। কিন্তু তিনিও তা করেননি। ফলে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে এখনও বিভক্তি রয়ে গেছে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই বিষয়ে দলকে ক্ষমা চাইতে ব্যর্থ হওয়ায় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। ওই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার চিঠিতে বলা হয়েছিল, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজও দলের নেতারা ৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেননি। এমনকি স্বাধীনতার যুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেননি।

২০০৯ সালের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে ইসির দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে দলটি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে তা শুনানির অপেক্ষায়

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা যা জানেন, সেটা ঠিক নয়। আপনার কোথায় জানলেন? কে বলেছেন? যিনি বলেছেন, তার কাছে জিজ্ঞাসা করেন। আমি জানি না। আমাদের দলে ৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রস্তাব ওঠেনি। আপনার এই কথা আমার কাছে নতুন। দলে এমন কোনো প্রস্তাব কখনও আসেনি।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভাষণ দিচ্ছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি জেলার আমির ঢাকা পোস্টকে বলেন, একাত্তরে দলের ভূমিকার প্রশ্নে করণীয় নিয়ে অনেক আগে সারাদেশ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছিল। তারপর সেই মতামত কেন্দ্র জমা হয়। এখন ওই বিষয়ে করণীয় কী, সেটা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করবেন। এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নাই।

তিনি আরও বলেন, দলের ভেতরে ‘ক্ষমা চাইতে আগ্রহী’ অংশটি এখনও সক্রিয়। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় কি না, সে চেষ্টা আবারও শুরু হতে পারে। তবে, কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

অতীতে তারা হত্যা, সন্ত্রাস, খুন করেছে। আবারও কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে? আমার কাছে সে রকমই মনে হচ্ছে। না হলে লাল ফিতা কেটে কেউ অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করে নাকি

এম এ আউয়াল, চেয়ারম্যান, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি

স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে গণজাগরণ মঞ্চ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দলটিকে নিষিদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এখনও বিচারাধীন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০১৮ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। আদালতের আদেশে ইসি নিবন্ধন বাতিল করায় দলীয় প্রতীকে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও জামায়াত দল হিসেবে এখনও সক্রিয়। 

২০০৯ সালের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে ইসির দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে দলটি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে তা শুনানির অপেক্ষায়।

যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী তাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ ছাড়া কিছুই নয়। এটা হচ্ছে গরু মেরে জুতা দান। জামায়াত যে ভণ্ড তা আরেকবার জাতির সামনে প্রমাণ করল

আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দেশের কোনো সংস্থার শীর্ষপদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়।’ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সরকার চাইলে দল হিসেবে জামায়াতেরও বিচারের উদ্যোগ নিতে পারে।’ 

আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এছাড়া জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে ২৫ বিশিষ্ট আলেমের করা একটি মামলা এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জামায়াতের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মানে জাতির সঙ্গে তামাশা করা। কারণ তারা একদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের স্মরণ করছে, অন্যদিকে একাত্তরের ভূমিকার জন্য এখনও ক্ষমা চায়নি। দেশের অস্তিত্ব মেনে না নিয়ে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে তারা। এটা জাতির সঙ্গে পুরোপুরি তামাশা। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জামায়াতমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। এ বিষয়ে আদালতসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াত ৭১ সালের গণহত্যাকারী। এজন্য তাদের বিচার করতে হবে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যেটা বঙ্গবন্ধুর সরকার করেছিলেন।’

এদিকে, জামায়াতের সুবর্ণজয়ন্তী কর্মসূচির উদ্বোধনের ধরনে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন অনেকে। দলটির প্রথম সারির নেতারা গত ৩ মার্চ ‘লাল ফিতা কেটে’ লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ির উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে যা রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটা অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। কয়েকদিন পরে লাল ফিতা কেটে কবরের উদ্বোধন করবে কি তারা?

অনেকে এমনও বলছেন, ‘লাল ফিতা কেটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অতীতের সন্ত্রাস, খুন-খারাবি কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে কি দলটি? তবে, জামায়াত বলছে, ‘মানবতার কল্যাণে ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতে তাদের এই কার্যক্রম।’

লাল ফিতা কেটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির জেনারেল সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘করলাম তাতে কী? মানুষের সেবায় লাশবাহী গাড়ি লাগে না। প্রতিবেশীরা মারা গেলে, হাসপাতালে নিতে গেলে গাড়ি পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স তো সবার কাজে লাগে। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কী আছে?’

এ প্রসঙ্গে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, ‘এ নিয়ে কী বলব! অতীতে তারা হত্যা, সন্ত্রাস, খুন করেছে। আবারও কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে? আমার কাছে সে রকমই মনে হচ্ছে। না হলে লাল ফিতা কেটে কেউ অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করে নাকি?’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এটা হচ্ছে জামায়াতের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আমি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, “যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী তাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ ছাড়া কিছুই নয়। এটা হচ্ছে গরু মেরে জুতা দান। জামায়াত যে ভণ্ড তা আরেকবার জাতির সামনে প্রমাণ করল। তারা প্রতারক, মুনাফেক। তাদের মুখে এক, অন্তরে আরেক।”

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধের কাজ চলছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের নিষিদ্ধ করা হবে।’

এএইচআর/ওএফ/এমএআর