সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ১০ দফা দাবিতে বুধবার (১১ জানুয়ারি) যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ‘গণঅবস্থান’ পালন করতে যাচ্ছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। দ্বিতীয় কর্মসূচিতে কয়েকটি নতুন দল ও জোটকে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে বিএনপি। গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে একই দাবিতে নতুন করে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

গত ৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ‘গণমিছিল’ বিএনপির পাশাপাশি পালন করেছিল ৭ দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘সমমনা জাতীয় জোট’ ও এলডিপি। সব মিলিয়ে ৩১টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে। বুধবার অনুষ্ঠেয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মোস্তাফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বাম ধারার ৫টি দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য’সহ আরও কয়েকটি দল।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ৩১টি দল অংশ নিয়েছিল। বুধবারের কর্মসূচিতে আরও কয়েকটি দল নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক এই আন্দোলনে আগামীতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ছাতার নিচে আসবে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।

আরও পড়ুন : বিএনপিকে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকালের গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে নতুন করে আরও দুই দিনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে স্মারকলিপি পেশ ও অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। আর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। ওই দিন পদযাত্রা ও অনশনের মতো জাতীয় কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকাল ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন : গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে ১০ বিভাগে যাচ্ছে বিএনপি

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারার প্রতিবাদে স্মারক লিপি পেশের কর্মসূচি দেওয়া হবে। মাঝখানে যেহেতু ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী, এ দুই দিন দলীয় কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ দিন পদযাত্রার মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিএনপি, অন্যান্য দল ও জোট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‌‘রাজনৈতিক বন্দি মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে’র দাবিতে প্রতিবাদী গণঅবস্থান করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আরামবাগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে গণফোরাম। বেলা ১১টা থেকে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনের সড়কে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে ১২ দলীয় জোট। এছাড়া একই দাবিতে আলাদা-আলাদা স্থানে একই কর্মসূচি পালন করবে সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।

আরও পড়ুন : ‘জেগে ওঠা’র বছর বিএনপির, শেষ ধাক্কা ফখরুলে

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১৫ অথবা ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

মঞ্চের আরেকটি সূত্র জানায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ১৬ জানুয়ারি কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের একটি শরিক দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ১৬ জানুয়ারির পর গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে কিছু ফলোআপ কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল, আবার বিভিন্ন বিভাগ থেকে ঢাকামুখী মিছিল বা পদযাত্রা করা নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ১০টি টিম বিভিন্ন সাংগঠনিক বিভাগে চলে গেছে। আর ঢাকার কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এএইচআর/এসকেডি