তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো আমাদের নেতাকর্মীদের গুণ হলো খোঁচা দিলে জ্বলে ওঠে। তারা আমাদের খোঁচা দিয়েছে, আমরা জ্বলে উঠেছি। আমরা রাজপথে নেমেছি। আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই তারা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করেছে। তারা এখন যদিও বা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বাহানা করছে, সুযোগ পেলেই তারা আবার নাশকতা করবে এবং জনগণকে ছোবল মারবে। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাব, সতর্ক থাকতে হবে। রাজপথে নেমেছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকব। কাউকে দেশে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই, আছে শুধু একমাত্র পাকিস্তানে। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে অনুকরণ করে না। উল্টো পাকিস্তান এখন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। সব সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশেও নির্বাচনকালীন সময়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন। তার সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আর নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

তিনি বলেন, বিএনপি আজ সমগ্র বাংলাদেশে আটটি জায়গায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি এবং তার জোট ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছে। তারা ঘোষণা দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করে দেবে। আগ বাড়িয়ে আবার ঘোষণা দিয়েছিল ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নাকি দেশ চলবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কথা ছিল বিএনপি ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ করবে। তারা যাতে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করতে পারে সেজন্য আমরা বললাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না গেলেও বাণিজ্য মেলার মাঠ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার মাঠে যান। ওনারা বললেন, নয়াপল্টনের অফিসের সামনে সমাবেশ করবেন। কোনোভাবেই নয়াপল্টন থেকে সরবে না। শেষ পর্যন্ত গরুর হাটের মাঠে সমাবেশ করলো। আর তাদের অফিসে পাওয়া গেল তাজা বোমা, দুই লাখ পানির বোতল, কয়েক টন চাল। তার মানে, তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকা শহরে বোমাবাজি করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।

তিনি বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ঢাকা শহরে আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব। আমরা ঢাকা শহরজুড়ে সতর্ক পাহারায় ছিলাম। তারা যে মাঠে সমাবেশ করল সেখানে মানুষ ধরে সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার। আশপাশের জায়গাসহ ধরে নিলাম ৪৫ হাজার মানুষের একটি সমাবেশ করলেন। ফেসবুকে মানুষে বলে, ঘোড়ায় তিনটা ডিম পেড়েছে। আবার ঘোড়ার ওপর লিখে দিয়েছে ১০ তারিখ বিএনপি ঘোড়ার ডিম পেড়েছিল।

হাছান মাহমুদ বলেন, এরপর বিএনপি দিল হাঁটা কর্মসূচি, পদযাত্রা। মানুষ বলে, বিএনপির মনে হয় দম ফুরিয়ে গেছে। এজন্য এখন মিছিলের পরিবর্তে হাঁটা শুরু করছে। দুর্মুখেরা বলছে, বিএনপি ভবিষ্যতে হামাগুড়ি দেওয়া শুরু করবে। জেলে যাওয়ার আগে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস বক্তৃতা করেছেন সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব। আওয়ামী লীগের ভিত বহু গভীরে। আওয়ামী লীগকে কেউ ধাক্কা দিলে সে নিজে পড়ে যায়। তারা ধাক্কা দিতে গিয়ে কোমর ভেঙে পড়ে গেছে। এখন তারা বলছেন, আমরা কাউকে আর ধাক্কা দিতে চাই না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে চাই।

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনে আসুন। নির্বাচনকে বয়কট করবেন, নির্বাচনকে ভয় পাবেন, আপনাদের নির্বাচনের ট্রেনে তোলার দায়িত্ব আমাদের নয়। বিএনপি চায় এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা তাদের ক্ষমতায় বসানো নিশ্চিত করবে। সেই ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। বাংলাদেশে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে সমগ্র পৃথিবী কর্তৃক একটি প্রশংসিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি পূর্ণ শক্তি দিয়ে আসন পেয়েছিল ২৯টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডান-বাম, অতিডান-অতিবাম, তালেবানসহ সবাইকে নিয়ে ঐক্য করে তারা আসন পেয়েছিল মাত্র ছয়টি। তাই তারা বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনেও তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই তারা এখন নানা বাহানা করছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে এতে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য নঈম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

এমআর/এসএসএইচ/