ঈদের সময় শহর-গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে রাজনীতির মাঠ। আর সেটা যদি হয় নির্বাচনী বছরের ঈদ তাহলে তো আর কথাই নেই! আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি নিতে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঈদে বেশি এলাকামুখী হচ্ছেন রাজনীতিবিদরা।

রাজনীতির কৌশল নির্ধারণে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। ঈদকে কেন্দ্র করে এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময়, ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক পরবর্তী কর্ম-কৌশল ঠিক করার নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।  

আরও পড়ুন : বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব নির্বাচনী কৌশল নয় তো?

বিএনপির নেতারা বলছেন, দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতাদের ঢাকায় ঈদ না করে নিজ-নিজ এলাকায় যেতে। ঈদের আগে প্রত্যেক নেতাকে তার নিজ সংসদীয় আসনে হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সাহায্য করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করার পাশাপাশি ঈদ পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্ম-কৌশল ঠিক করার নির্দেশনা রয়েছে। আর দলের স্থায়ী কমিটির যেসব নেতা ঈদ ঢাকায় করবেন, তারা পরে নিজ-নিজ এলাকায় গিয়ে ঘুরে আসবেন।

দলটির নেতারা আরও বলেন, রমজানের কর্মসূচি ও ইফতার অনুষ্ঠানে যেভাবে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, একইভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানগুলোতে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আর নির্বাচনী বছর ঈদগুলোতে হামলা-মামলা বেশি হয়। গত দুটি (নবম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞাত তাই বলে। তারপরও এবারের ঈদে বিএনপির নির্দেশনা রয়েছে, যত বেশি পারা যায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করার। যাতে ঈদ পরবর্তী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে এই ধারণা জন্মায় যে, যতই হামলা-মামলা হোক না কেন, এবার আন্দোলনে বিএনপি সফল হবেই।    

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি সবসময় নির্দেশনা থাকে। ঈদেও সেই রকম কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে।

আরও পড়ুন : রমজানে বিএনপির কর্মসূচি : যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের ক্ষোভ-অসন্তোষ  

নোয়াখালীর নিজ সংসদীয় আসনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এলাকার যেসব নেতাকর্মী হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শাহজাহান বলেন, আশা করি, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে তা করতে পারবে। আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাই না।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিগত আন্দোলনে গুম ও শহীদ পরিবারের পাশে তিনি যেভাবে দাঁড়িয়েছেন একইভাবে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি নির্দেশনাও আছে। যাতে এবারের ঈদ তারা নিজ এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে উদযাপন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ঈদের সময় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা-মামলার শঙ্কা আছে। এরপর গ্রেপ্তারের ভয় আছে। আমরা নেতাকর্মীদের এলাকায় ঈদ করার নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে ঈদ পরবর্তী আন্দোলন সফল করা যায়।

তিনি আরও বলেন, ঈদের সপ্তাহ ১০ দিন পর থেকে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হবে। সেসব কর্মসূচি সফল করার পূর্ব প্রস্তুতি তো ঈদের মধ্যেই নিতে হবে। তাই দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে একদিকে এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদও করা হলো, অন্যদিকে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন : লক্ষ্য ‘জোর কূটনৈতিক তৎপরতা’ ও ‘বোঝাপড়া’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সূত্র বলছে, ঈদ,পূজা এসব সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো নির্বাচনী প্রচারণার বড় উপলক্ষ্য। কিন্তু আমাদের এখন মূল টার্গেট হচ্ছে আন্দোলন। তারপরও আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা একদম থাকবে না, বিষয়টি এমন নয়। দলের স্থায়ী কমিটি ও সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা হয়ত ঈদকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রাধান্য দেবেন না। কিন্তু যেসব আসনে দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, তারা তো যে যার মতো করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে। এলাকাভিত্তিক অনেক নেতাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এটা দোষের কিছু না। আর আমরা তো বলছি না যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। আমরা বলছি, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। 

দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নেতাদের ঢাকায় ঈদ না করে নিজ-নিজ এলাকায় যেতে। ঈদের আগে প্রত্যেক নেতাকে তার নিজ সংসদীয় আসনে হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সাহায্য করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করার পাশাপাশি ঈদ পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্ম-কৌশল ঠিক করার নির্দেশনা রয়েছে। আর দলের স্থায়ী কমিটির যেসব নেতা ঈদ ঢাকায় করবেন, তারা পরে নিজ-নিজ এলাকায় গিয়ে ঘুরে আসবেন।

এছাড়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের ওপর বিশ্বের যে চাপ আছে, তাতে আগামী নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হবে না বা তারা করতে পারবে না বলেও মনে হয় না। সরকারকে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। ফলে বিএনপি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেকটা সেরে নিচ্ছে।   

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না বলেছি, কিন্তু সরকারর দাবি মেনে নিলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ ‍নেব। আমাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠে সক্রিয় আছেন। সরকার দাবি মেনে নিলে নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আলাদা করে সময় দরকার হবে না।

এএইচআর/এসকেডি