খালেদা জিয়া /ফাইল ছবি

এক বছর আগে আজকের এই দিনে (২৫ মার্চ) কারোনাভাইরাসের কারণে শর্ত সাপেক্ষে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শর্ত সাপেক্ষে পাওয়া কারামুক্তির এক বছর পূর্ণ হলো আজ (বৃহস্পতিবার)। করোনাভাইরাসের মধ্যে গত বছর এই দিনে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের সাজা স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মুক্তি পান। 

এরপর থেকেই তিনি গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজা’য় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। মুক্ত হলেও সরকারের দেওয়া শর্তের কারণে গত এক বছরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে আগামীতেও তার রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত।

বিএনপি নেতারাও বলছেন, চাইলেও খালেদা জিয়ার পক্ষে শিগগির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। এতে বড় বাধা সরকার। কারণ তার সাময়িক মুক্তির সময়েই সরকারের দেওয়া দুই শর্তের অন্যতম ছিলো, এ সময় তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন ও বিদেশে যেতে পারবেন না।

তারা আরও বলছেন, রাজনীতিতে ফিরতে হলে প্রথমে আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্তি বা জামিন পেতে হবে। কিন্তু সরকার ‘কোর্টকে ব্যবহার’ করে সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে। আর বর্তমানে তার শারীরিক যে অবস্থা, সেখানে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত। সেটা তিনি নিজেও বোঝেন। এ কারণে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে তারেক রহমানকে দলে প্রস্তুত করছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনারা এটাকে কারামুক্তি বলছেন কেন? বলেন সাজা স্থগিত করার এক বছর। এটাকে কারামুক্তি বলা যাবে না, কারণ দেশনেত্রী কারামুক্ত নন।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে আগে তাকে মুক্ত করতে হবে অথবা জামিন নিতে হবে। সেটা এখনও পাইনি, আর সরকারও দিচ্ছে না। সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রমাণ হচ্ছে, তারা আদালত নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন যেন বেগবান হতে না পারে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই কারণে তারা ম্যাডামকে সম্পূর্ণ মুক্ত করছে না।   

নেতাকর্মীরা চান খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় থাকুন। কিন্তু একদিকে তিনি বন্দি, অন্যদিকে অসুস্থ। আমাদের এসব মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ২০১৮ সালে কারাগারে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া নিজের উত্তরসূরি প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কারাগারে যাওয়ার আগে নিজের উত্তরসূরি তারেক রহমানকে সহযোগিতা করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের বলে যান। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর দল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছেড়ে দেন তারেক রহমানের ওপর। সর্বশেষ জামায়াতকে সুর্বণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে না রাখার সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়া মতামত দিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল তারেক রহমানের।

তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার যে শারীরিক অবস্থা ও যে টেনশনের মধ্যে আছেন, তাতে ফেরা সম্ভব নয়

বদিউল আলম মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক, সুজন

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে দলের নেতৃত্ব চলে যায় তারেক রহমানে হাতে। তখন দলের মধ্যে তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেনি সিনিয়র কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে একজন নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিতে না পেরে দল থেকে পদত্যাগও করেন। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। এখন পুরো দলের হাল তারেক রহমানের হাতে। গত বছর থেকে দলের সর্বস্তরে সরাসরি তার নেতৃত্ব চলছে।  

খালেদা জিয়ার আগামী দিনে রাজনীতিতে ফেরার সম্ভবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলে উল্লেখ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আমরা মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার যে শারীরিক অবস্থা ও যে টেনশনের মধ্যে আছেন, তাতে ফেরা সম্ভব নয়।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো, মানসিকভাবে চাঙা
বিএনপি নেতা ও ডাক্তাররা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। এখনও তার আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যা রয়েছে। আগের মতোই তিনি হুইল চেয়ার এবং কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তবে, মানসিকভাবে তিনি চাঙা আছেন। দিনে বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর রাতে দুই ছেলে তারেক ও কোকোর সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে গল্প করে সময় কাটছে খালেদা জিয়ার।

ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। একা একা এখনও চলাফেরা করতে পারছেন না। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে তিনি মানসিকভাবে শক্ত আছেন

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস-চেয়ারম্যান, বিএনপি

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী ফাতেমা থাকেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনি ও তার ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বেশি দেখা করতে যান। এছাড়া ভাই, ভাতিজা ও ভাগ্নেসহ পরিবারের আরও অনেক সদস্য দেখা করেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, তার চিকিৎসা চলে বড় ছেলের স্ত্রীর (জোবাইদা রহমান) তত্ত্বাবধানে। আর দেশের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে গিয়ে দেখে আসেন। খালেদা জিয়ার বাসায় রান্না হয়। আমরাও বাসা থেকে খাবার নিয়ে যাই। অসুস্থ থাকায় খুব একটা খেতে পারেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেন। 

এএইচআর/ওএফ