বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করায় বাঙালি জাতি আজ বিশ্বে অহংকারের জাতিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা, সাফল্য ও সাম্প্রতিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএ ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের উদ্বোধনও করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে বলেই আজ বাংলাদেশ আলোকবর্তিকা হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র পৃথিবীর জন্য প্রাসঙ্গিক— জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অমর্ত্য সেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শ এখনও পৃথিবীর জন্য প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে দিয়েছেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হওয়ার পরও একটি রাষ্ট্র কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে আমরা কখনওই এগিয়ে যেতে পারব না। এটা প্রমাণিত হয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী যে সরকারগুলো দেশ পরিচালিত করেছে, তারা দেশকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একাত্তরেও ছিল, এখনও আছে; তবে তারা শক্তিশালী নয়— এমন মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সামগ্রিক চিন্তাটা করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যেমন বলেছেন, ছয় দফা দিয়েছি, এটা এক দফায় পরিণত হবে। কীভাবে করবেন, সেটা তিনি জানতেন। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তখনও ছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অনেক ধরনের কর্মকাণ্ড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সংগঠিত, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এজন্যই ষড়যন্ত্র করে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি। অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আজও সেই জায়গাটা এখনও আছে। তবে তারা খুব বেশি শক্তিশালী নয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়। জয়বাংলা স্লোগানটা নিষিদ্ধ করা হয়। ৭ মার্চের ভাষণের ব্যাপারে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, এটার কোনো প্রয়োজন নাই। এটা প্রাসঙ্গিক নয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ২১ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- তিনজনই বাংলাদেশকে উল্টোপথে পরিচালিত করেছে। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই, এ স্লোগান দিতে গিয়ে অনেকের জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে দিয়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করানো হয়। একটা রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। তাদের সংসদে আনা হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচনে সংসদনেতা বানানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যায়নি। কারণ বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।’

মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কে এম তরিকুল ইসলাম ও নৌ অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেড এম জালাল উদ্দিন।

এইউএ/এমএআর/