৯০ দশক থেকে প্রতি বছর রমজান মাসজুড়ে চলে ‘ইফতার রাজনীতি’। সেটার পূর্ণতা পায় ঈদের দিন। এদিন রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ঈদের নামাজের পর তৃণমূলের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন। সারাবছর নেতাকর্মীদের খোঁজ না নিলেও ঈদের দিন তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। ঈদের সালামিও দিতেন। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে গত বছর থেকে তা বন্ধ আছে।

এবার অধিকাংশ নেতা ঢাকায় স্বেচ্ছায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থেকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। কেউ কেউ আবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে অথবা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঈদ পালন করবেন।

জানা গেছে, কোভিড পরবর্তী জটিলতায় চিকিৎসা নিতে গত ২৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর মধ্যে গত ৩ মে থেকে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। ঈদেও তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া

বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১ মে থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তার শারীরিক অবস্থা ভালো হলেও ঈদের দিনও তিনি হাসপাতালে থাকবেন বলে জানা গেছে। ফলে দুই নেত্রীকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে।

ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দেখা করতে যাওয়ার কথা। রওশন এরশাদের সঙ্গে তার ছেলে সাদ এরশাদ নিয়মিত দেখা করতে যান। ঈদের দিনও তিনি দেখা করতে যাবেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এবার দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। দলটির স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ নেতা করোনা পরবর্তী বিভিন্ন রোগে এখনও ভুগছেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের অনেকের একই অবস্থা। ফলে এবারের ঈদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বেশিরভাগই নিজ নিজ নির্বাচনীয় এলাকায় ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন না।

দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলের নেতারা ঢাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে বিধিনিষেধ চলছে। যদিও সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে বিধিনিষেধ সেভাবে কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া হাসপাতালে। তার শারীরিক অবস্থা এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়। কখন কী ঘটে বলা যায় না। তাকে হাসপাতালে রেখে নেতাদের এলাকায় গিয়ে ঈদ উদযাপন করা দৃষ্টিকটুও দেখায়। ইতোমধ্যে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ফলে, নেতাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

আরও পড়ুন : আসলে কেমন আছেন খালেদা জিয়া

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম ঈদের দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দেখার পর দলের স্থায়ী কমিটির অল্প কয়েকজন নেতাকে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন

ঈদে ঢাকায় থাকছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য তো অসুস্থ। যে কারণে হয়তো দু-একজন সদস্যকে নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে যেতে পারি।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস কোভিড পরবর্তীতে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। তারা বাসায় থাকছেন। আমিও ঈদে ঢাকায় থাকব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঈদের দিন সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ যাবেন। তবে, তিনি এলাকায় গেলেও ঘর থেকে বের হবেন না। এ বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের দিন সকালে এলাকায় যাব। তবে ঘরেই থাকব। কেউ আসলে দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত সময়ে বিদায় জানাব। 

আরও পড়ুন : সাড়ে ৩ বছর ধরে হাঁটতে পারেন না খালেদা জিয়া

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনা ধরা পড়েছে। আমার বাড়ি তো সীমান্তবর্তী এলাকা চুয়াডাঙ্গায়। রাজনীতিবিদরা তো এলাকায় গেলে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, সরকারের বিধিনিষেধ কার্যকর না হলেও রাস্তায় শৃঙ্খলা নেই। সবকিছু মিলিয়ে এবার ঈদে ঢাকায় থাকছি। 

ঢাকায় ঈদ করছেন জাপার অধিকাংশ নেতা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারসহ অধিকাংশ নেতা এবার ঢাকায় ঈদ করবেন।

৩০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জাপার চিফ প্যাট্রন রওশন এরশাদকে

জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার তো এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ঢাকায় থাকব। বাসার পাশের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করার সম্ভাবনা আছে।

জাপার চেয়ারম্যানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা এবার ঢাকায় ঈদ করছেন। রওশন এরশাদ ঈদে হাসপাতালে থাকছেন। তবে, তিনি শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ আছেন। 

জানা গেছে, রাজনীতিবিদের মধ্যে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দীর্ঘদিন স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি আছেন। এ দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি আছেন।

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন

এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জীবনে এমন অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। গত বছর থেকে ঘরবন্দি আছি। মাঝে অল্প কিছুদিন মতিঝিলের অফিসে গিয়েছিলাম। এর বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি। এবারের ঈদেও বেইলি রোডের বাড়িতে থাকব।

একই কথা বলেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। তিনি বলেন, কোথাও যাওয়ার তো উপায় নেই। ঈদে ঢাকায় থাকতে হবে। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঢাকার বারিধারার বাড়িতে ঈদ উদযাপন করব। 

এএইচআর/এসকেডি/এমএআর/