বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া / ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চুপ তার পরিবার, দল ও চিকিৎসকরা। ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে বিএনপি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্যকে ফোন করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যদের মেডিকেল বোর্ডে তার ব্যক্তিগত তিন চিকিৎসক রয়েছেন। তারা হলেন- ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. আল মামুন। রোববার (১৬ মে) এই তিন চিকিৎসককে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এমনকি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়ে তাদের মেসেজ দিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।  

অন্যদিকে, ভাই শামীম ইস্কান্দার বোন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ 

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনারা যতটুকু জানেন, আমিও ততটুকুই জানি।’ এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। তারা সাধারণত মহাসচিবের (মির্জা ফখরুল) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি নিজেও কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসা নিচ্ছি। আর দেশনেত্রী তো সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। ফলে, হাসপাতালে তাকে দেখতে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ সিসিইউতে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই।’ 

তবে, একটি সূত্র জানায়, গত ৩ মে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তখনও তার করোনা পজিটিভ ছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি বলতে দুটি পজিটিভ দিক রয়েছে। একটি- করোনা নেগেটিভ হওয়া, দ্বিতীয়টি- এখন অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়াই তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকা। 

সূত্র আরও জানায়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, আর্থ্রাইটিসের কারণে খালেদা জিয়ার হাত-পা ফুলে যাওয়া এবং ব্যথার যে সমস্যা ছিল তা এখনও আছে। এসব সমস্যার তেমন কোনো উন্নতি নেই বললে চলে। এছাড়া তার হৃদরোগের ঝুঁকি তো আছেই। নিয়মিত তার যেসব পরীক্ষা হচ্ছে সেগুলোর রিপোর্ট আশাব্যঞ্জক ভালো আসছে না। ফলে, তাকে চিকিৎসকরা সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তরের সাহস পাচ্ছেন না।

এভারকেয়ার হাসপাতালে ডিউটি ম্যানেজার সিনময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিসিইউতে চিকিৎসাধীন, এতটুকুই বলতে পারি। এছাড়া তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা ব্রিফ করেন। আমরা রোগীর গোপনীয়তা রক্ষায় কিছু বলতে পারি না। 

তবে, হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই খালেদা জিয়াকে দেখতে যান ভাই শামীম ইস্কান্দার এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর বাইরে দলের অন্য নেতাদের হাসপাতালে না যেতে চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। 

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিষয়টি তো ডাক্তাররা দেখেন।’ অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তারকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গত ১১ মে বিএনপির পক্ষে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সেদিন তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এখনও বিপজ্জনক অবস্থায় আছেন। তার কিডনিতে সমস্যা আছে। হার্টেও সমস্যা রয়েছে। 

গত ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। এরপর ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৩ মে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। 

এএইচআর/আরএইচ