প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বৃহস্পতিবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রোজিনা ইসলামকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষাকর্তা। রোজিনার গ্রেফতারের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মানবাধিকার ও নাগরিক মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে এবং নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করেছে। এই ঘটনা আরও প্রমাণ করেছে সরকার সত্য গোপন করতে চায়। শুধু তাই নয়, সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চাইতে দুর্নীতি লুকাতে তৎপর বেশি।

তারা আরও বলেন, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য জানার অধিকার জনগণের আছে। জনগণকে তথ্য না জানানো চুরি, দুর্নীতি, জবাবদিহিতাকেই উৎসাহিত করে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে দুর্নীতি, অনিয়মের তথ্য বের করে আনা কোনো মতেই চুরি না। আর এটা সাংবাদিকতার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের বেশ কয়েকটি দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানী রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এজন্যই তাকে সচিবালয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়; যা সভ্য দেশে অকল্পনীয়।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন রোজিনাকে নির্যাতন করা হয়নি বরং রোজিনাই অতিরিক্ত সচিবকে খামচি দিয়েছে, থাপ্পর মেরেছে। এটি আমলাদের পক্ষে মন্ত্রীর নির্লজ্জ সাফাই গাওয়া এবং এতে প্রমাণ হয় ‘চোরের সাক্ষী গাঁট কাটা।’ 

মন্ত্রী বলেছেন, সচিবালয় কি কোনো উন্মুক্ত স্থান? তাছাড়া সচিব, একান্ত সচিবের কক্ষে যে বিনা অনুমতিতে ঢোকা যায় না তার প্রমাণ ঘটনার দিন সচিবের সাথে সাংবাদিকরা সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি সাক্ষাৎ দেননি। ফলে তথ্য চুরির ঘটনা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট। আর যদি ঘটনা সত্যিই হয় তাহলে এই ঘটনার জন্য প্রধান আসামি হওয়া উচিত স্বাস্থ্য সচিবের। কারণ, তিনি রাষ্ট্রীয় গোপন নথি কেন একান্ত সচিবের টেবিলে উন্মুক্ত জায়গায় রাখবেন।

বক্তারা বলেন, ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের আইন ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট’, যা স্বাধীন দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় যুক্ত করা হয়েছে। সেই কুখ্যাত আইনে রোজিনাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রোজিনাকে হেনস্তাকারী আমলা ও পুলিশের শাস্তি; ব্যর্থ ও দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সংবাদপত্র-সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, বাসদ মার্কসবাদী নেতা মানস নন্দী, ইউসিএলবি নেতা নজরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ নগর নেতা জুলফিকার আলী।

এমএইচএন/এনএফ