আল্লামা আহমদ শফী

হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা আহমদ শফী ‘হত্যায়’ সংগঠনটির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে শফীপন্থিরা। বুধবার (২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। 

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে হেফাজতের শফী কমিটির সাবেক সাহিত্য সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

শফী হত্যা মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরীর গ্রেফতার চান কি না জানতে চাইলে হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা গ্রেফতারের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে পরিষ্কার করে বলেছি। আমরা বলেছি, যাদের নাম এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করছি। এছাড়া যাদের নাম আসেনি কিন্তু আমরা জানি তারা উসকানিদাতা ও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের গ্রেফতার চাই এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা মনে করি, পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে যা এসেছে সেটাই বাস্তব। এই তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে আসু ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।’

হেফাজতে ইসলামের শফিপন্থিরা এত দিন নিশ্চুপ ছিল কেন জানতে চাইলে ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কখনই নিশ্চুপ ছিলাম না। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। এখন যে কিশোর গ্যাংয়ের কথা শোনা যায়, তাদের একটি গ্যাং যদি এলাকায় পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তার অর্থ কি এই যে, সব মানুষ তার সাথে? এর অর্থ হলো পেশিশক্তি ব্যবহার করে কিছুক্ষণের জন্য তাদের অবস্থান মজবুত করেছে।’

আনাস মাদানীর হাট হাজারী মাদরাসার শিক্ষা সচিব পদে পূর্ণ বহালের বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আনাস মাদানী যে দায়িত্বে ছিলেন তাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না এবং আইনগত কোনো বৈধতা ছিল না। যা করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধ। তার সঙ্গে একটা জুলুম করা হয়েছে। দুই জন সদস্য মিলে ১৩ জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তা বৈধও নয়। সুতরাং আনাস মাদানী সেখানে পুনর্বহালের কোন প্রশ্নে নেই। কারণ তিনি তো সেখানে আছেনই। তবে শারীরিকভাবে সব সময় উপস্থিত নাও থাকতে পারেন।’ 

শফীপন্থিদের আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরীর কমিটির নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ। তার নাম উল্লেখ করে বাবুনগরীর কমিটিতে ছিলেন এমন নেতাদেরও আজকের সংবাদ সম্মেলনে দেখা যাচ্ছে। তারা কি চাপে পড়ে এখানে এসেছেন জানতে চাইলে ফয়জুল্লাহ বলেন, আমি মনে করি না, মধুপুরের পীর (আব্দুল হামিদ) মতো মানুষ চাপের মধ্যে নতি স্বীকার করে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তিনি প্রথম থেকেই আহমদ শফীর যখন হাসপাতালে ছিলেন তখনই আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। বাবুনগরীর কমিটিতে অনেকে পদ দেওয়া হয়েছিল। যারা নিজেরাও জানত না।  

লিখিত বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বলেন, আহমদ শফী পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। যারা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া শফীর রেখে যাওয়া সব দ্বীনি ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে তার বিরোধীদের অপসারণের দাবি জানান সরকারের কাছে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আল্লামা আহমদ শফী। তার মৃত্যুর ৩ মাস পর গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। এরপর ওই মামলার তদন্ত করে গত ১২ এপ্রিল আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হক ও আজিজুলসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল তৃতীয় জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

বাবুনগরীর আহ্বায়ক কমিটি ‘নিয়ম বহির্ভূত’

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের যে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে তা অবৈধ। শাহ আহমদ শফীর চরম বিরোধী ও বিদ্বেষীদের দ্বারা তিনি হেফাজতের কথিত আমীর হয়েছিলেন। তাকে জনগণ মেনে নিতে পারেনি। সেই কারণে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল বাবুনগরী।

গত ২৬শে এপ্রিল হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। যার মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।

এএইচআর/এইচকে