গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকার কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে, যার বেশির ভাগই ধনীরা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই স্বাস্থ্যখাতের সংকট দূর হবে না। টিকা প্রাপ্তি ও গবেষণা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার যা করেছে, তার পেছনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই জড়িত। তারাই তৃতীয় বিশ্বের গবেষণা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত করছে।

শনিবার (৫ জুন) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য ; কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য : শোভন সমাজের সন্ধানে’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সরকার এখনও আড়াইশ বছর আগের কলোনিয়াল যুগেই আছে। আর সে কারণেই সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদ অর্থনীতির সবটুকুই খেয়ে ফেলছে। জোড়াতালির অর্থ বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, সরকারের সে ক্ষমতা নেই। সবই ধনীরা খেয়ে ফেলবে। এ জন্য আমাদের আগে গ্রামের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যেখানে বৃহৎ জনগোষ্ঠী থাকে। তারা যেটুকু ভিটামিন পাচ্ছে, তা দিয়ে করোনাকে ঠেকিয়ে রেখেছে।

আবুল বারকাত এ যুগের কার্ল মার্কস উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, কাল মার্কসের ভাবনা বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটের উপযোগী করে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তার তত্ত্বকাঠামো উপস্থাপন করেছেন, যার প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বকে আসলেই সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব। ড. বারকাত তার বইয়ে স্বাস্থ্যসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়ের কার্যকারণ এবং তা থেকে উত্তরণের যে পথনির্দেশনা দিয়েছেন, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, আবুল বারকাতের শোভন পথে গেলে বাংলাদেশ ইউরোপের মতো হবে আগামী ২০ বছরের মধ্যে। সেখানে চিকিৎসক গমগম করবে, নার্স গমগম করবে। রোগীরা সেবা পাবে। মানুষের মনে বাঁচার আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই স্বাস্থ্যখাত উন্নত হবে না। বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার হতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যন্ত্রপাতি কিনতে উৎসাহী, দেশীয় গবেষণায় বা ন্যায্য সেবা দিতে আগ্রহী নয়। রাষ্ট্রের সবকিছুতেই এখন সুশাসনের সংকট চলছে। সবাই মিলেই আমরা এটা অতিক্রম করব। কিন্তু এর জন্য আমাদের নতুন ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, কোভিড-১৯-এ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৈন্য ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে এখনও কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সরকারের সঠিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় স্বাস্থ্যখাত এখন বেসরকারি খাতের দখলে। মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এখন পণ্য। 

অধ্যাপক মোহাম্মদ এ. হান্নান বলেন, অধ্যাপক আবুল বারকাত কিংবা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো লোকেরা শুধু অর্থনীতিবিদ বা চিকিৎসক নন, তারা সত্যিকার অর্থে মানুষের দুর্ভোগের অবসান চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা।

আরএম/এসকেডি