দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের কারণেই শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বেই অসম্ভবকে সম্ভব করে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে আমরাও পারি।’

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পদ্মা সেতুর বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি বাসভবন থেকে তিনি সম্মেলনে যুক্ত হন।

প্রসঙ্গত, করোনাকালেই বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতুতে বসানো হয়েছে সর্বশেষ স্প্যান। বেলা ১২টা ৩ মিনিটে সর্বশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় সেতুর বড় কাজের ইতি ঘটলো। বসানো হয়েছে সেতুর ৪১তম স্প্যান। মূল নদীতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে ৪১তম স্প্যান ‘টু-এফ’। ফলে সেতুর বন্ধনে আবদ্ধ হলো মাওয়া ও জাজিরার এপাড়-ওপাড়। সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। সেতুর ৪০টি স্প্যান স্থাপনে তিন বছর দুই মাস লেগেছে। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো (স্প্যান) স্টিলের। মূল সেতু অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। মাওয়া ও জাজিরার দুই পাড়ে ৪ কিলোমিটার সেতু বা ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা শেষ হয়েছে। দোতলা সেতুর স্প্যানের ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। ৪ লেনের সড়কপথটি ২২ মিটার চওড়া। নিচের তলায় চলবে ট্রেন। এখন সেতুতে সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। তা শেষ হলেই সড়কে যান ও রেলপথে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আগামী বছর (২০২১) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদ্মা সেতু চালুর করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালে মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয় জাপানি সংস্থা জাইকা। ২০০৭ সালে একনেকে পাস হয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। প্রথমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। কয়েক দফায় বেড়ে তা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে ৫ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।

এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয় সরকার। শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মূল সেতুর কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। এর কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদী শাসনের কাজও শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। কাজ করছে সিনোহাইড্রো করপোরেশন। নভেম্বর পর্যন্ত নদী শাসনের কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ বহু আগে শেষ হয়ে গেছে।

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে ৩ বছর ২ মাস লাগল। এর মধ্যে গত দুই মাসেই ১০টি স্প্যান বসেছে।

ঢাকা পোস্ট /এইউএ