খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ডা. এফ এম সিদ্দিকী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী।

শনিবার (১৯ জুন) রাত নয়টার দিকে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজার সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। ডা. বলেন, তার অবস্থা স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)। তবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। তাই বাসায় রেখে তার চিকিৎসা চলবে। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে খালেদা জিয়া কিছু জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হচ্ছিলেন। আমরা তার রক্ত পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছি। এ সংক্রমণ তার বর্তমান স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) অবস্থাকে বিনষ্ট করতে পারে। এ আশংকায় তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি যে খালেদা জিয়া স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)৷ মানে হচ্ছে তার যে আসল অসুখগুলো ছিল, সেটা স্থিতাবস্থায় এসেছে। আমরা বলছি না, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় এসেছেন। তার হার্ট ও কিডনি ও লিভারের জটিলতা যেগুলো কোভিডের কারণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল, সেগুলো থেকে উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতাগুলো এখনও রয়েই গেছে। 

ডা. সিদ্দিকী বলেন, তার চিকিৎসায় জন্য যে টেকনোলজি, প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া দরকার, সেগুলো আমরা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি। যে জন্য একটা রিস্ক (ঝুঁকি) থেকেই যাচ্ছে। এখন আমরা প্ল্যান (পরিকল্পনা) করেছি, তাকে বাসায় রাখব। কিন্তু এমনও হতে পারে তাকে আগামী দুই বা তিন সপ্তাহ পরে আবার হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লিভারের যে সমস্যা, এর জন্য যে চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় উন্নত যে টেকনোলজি (প্রযুক্তি) প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের দেশে নেই। তার লিভারের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। 

এর আগে রাত আটটা ৩৪ মিনিটে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান। 

এর আগে রাত আটটার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হারুন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।

ডা. সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার যে জটিলতাগুলো আছে সেগুলোর জন্য আমরা মেডিকেল বোর্ড থেকে কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা আমরা লিখিত আকারে তাদের (বিএনপি নেতা ও পরিবারের সদস্যদের)  কাছে দেবো।

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দেশে সম্ভব কি না প্রশ্ন করা হলে এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা একটা লেভেল পর্যন্ত তার চিকিৎসা চালিয়ে কতগুলো জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেমন তার যে লিভারের সমস্যা আমরা ধরতে পেরেছি। সেটা কোন স্টেইজে আছে এবং এমন সব সেন্টারে এসব অ্যাসেসমেন্ট হওয়া উচিত যেখানে আর্টিফিশিয়াল লিভার সাপোর্ট, আর্টিফিশিয়ালি অন্যান্য অ্যাডভান্স টেকনোলজি এপ্লাই করতে পারে। অসুস্থতা কিন্তু শুধু লিভারে থাকে না, খাদ্যনালীতে হয় যেটা প্রভাব ফেলে। যেটাতে মেজর কতগুলো কমপ্লিকেশন হতে পারে। সেই ধরনের টেকনোলজি বা সেই ধরনের অ্যাডভান্স টিট্রমেন্ট সাপোর্ট আমাদের বাংলাদেশে নাই বলে আমরা মনে করছি। আমাদের লিখিত প্রতিবেদনে সেটা বলেছি।

কেনো খালেদা জিয়াকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ছাড়া বাসায় নিয়ে আসা হলো তার কারণ উল্লেখ করে চিকিৎসক টিমের প্রধান বলেন, হাসপাতালে রাখাটা অনেক রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিন বার তার রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। প্রত্যেকটা ইনফেকশন হাসপাতালের অর্গানিজমে। অর্থাৎ আমরা যখন ব্লাড কালচার করি সেই জীবাণু দেখতে পাই। জীবানুগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় এটা কোত্থেকে আসছে।

খালেদা জিয়ার লিভারে অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘আগের যে অসুস্থতা ছিল তার সঙ্গে আমরা বিশেষ করে দেখেছি, লিভারের যে সমস্যাটা সেটা হচ্ছে ডি-কম্পোসেটেড। লিভারের ফাংশনটা মাঝে মাঝে কম্প্রোমাইজ হয়ে যায়। তখন তার এলবুমিন সিনথেসিস হয় এবং কিডনি দিয়ে এলবুমিন বেশি বের হয়ে যায়। এই দুটি কারণে তার রক্তে এলবুমিন কমে যায়। আর লিভারের জটিলতার একটা অংশ হিসেবে তার মাঝে মাঝে খাদ্যনালীতে মাক্রোস্পেসেফিক… হয়। যার জন্য তার হিমোগ্লোবিন কমে যায়।

বিদেশে নিয়ে যাওয়া জরুরি কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার হার্টের কিছু কিছু টিট্রমেন্ট ও  অ্যাডভান্সমেন্ট আমাদের দেশে আছে। কিন্তু কিডনি ট্রিটমেন্টের ওই ধরনের অ্যাডভান্সমেন্ট এখানে নেই। কিছু কিছু ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু লিভারের সমস্যা হয়ে যখন ডিকম্পোনসেশন হয়, সেই সমস্যার সার্বিক মূল্যায়ন করে স্টেটেজিং করে সেগুলোর আনুসাঙ্গিক যে চিকিৎসা দরকার, সেই টোটাল ট্রিটমেন্ট এবং সাপোর্ট আমাদের দেশে নেই।

এএইচআর/আরএইচ/এমএইচএস