মাহমুদুর রহমান মান্না

৭ আগস্ট থেকে চলমান গণটিকা কর্মসূচি গণপ্রতারণায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, এটি করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সোমবার (৯ আগস্ট) নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাকিব আনোয়ার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

মান্না বলেন, সরকার জনগণের জীবন নিয়ে খেল-তামাশা করছে। সরকারি হিসাব মতে যেখানে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন, সেখানে তারা সোয়া কোটি ডোজ টিকা নিয়ে কর্মসূচির নামের আগে ‘গণ’ জুড়ে দিয়েছে। গণ শব্দের অর্থই বদলে দিয়েছে সরকার। গণটিকার নামে নতুন এক নাটিকার অবতারণা করেছে তারা। প্রতিদিন এসব টিকা কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু কয়েকশ টিকা দেওয়ার পর বাকিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যেও আবার আওয়ামী কোটা আছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ কোটা আছে। এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার রীতিমতো সার্কাস করেছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে টিকা নিতে আগ্রহী সাধারণ জনগণ।

ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, সরকার বলেছে এ মাসের শেষে এক কোটি ডোজ টিকা আসবে। এ টিকা তো এখন যারা প্রথম ডোজ পাচ্ছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দিতেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তারপর কি হবে সেই ব্যাপারে সরকারের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। তারা বলছে, দেড় কোটি ডোজের টাকা চীনকে অ্যাডভান্স করা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছে। কবে নাগাদ অ্যাডভান্স করা দেড় কোটি টিকা আসবে, কত টাকায় চুক্তি হয়েছে, কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে - সেসব তথ্য সুস্পষ্টভাবে জনগণকে জানাতে হবে। বাকিদের সঙ্গে কি কথা হয়েছে, কোনো চুক্তি হয়েছে কি না, সেসব প্রতিষ্ঠান/দেশ থেকে কত টাকায় টিকা কেনা হচ্ছে – সেসব তথ্যও জানাতে হবে। সরকার জনগণের টাকায় টিকা কিনবে আর জনগণ সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না, সেটা তো হতে পারে না। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য একবার এক চুক্তি করে দেশের মানুষের জীবনকে, দেশের অর্থনীতিকে এতগুলো দিনের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছিলেন।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে মান্না বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ মিলিয়ে মোট ছাত্র আছে প্রায় ৩২ লাখ। শিক্ষক এবং স্টাফ মিলিয়ে সংখ্যাটা ৩৫ লাখ হবে। আপনারা তো দিনে ৩০ লাখ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে টিকা কেন্দ্র করে একদিনে না পারেন, দুই দিনে এ ৩৫ লাখ টিকা দিয়ে দেন। আমি এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে, শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমি সরকারের কাছে আগেই দাবি করেছিলাম, ‘অবিলম্বে টিকার বিষয়ে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। কবে, কীভাবে, কোথা থেকে টিকা আসবে, কীভাবে এবং কবে নাগাদ ১৩ কোটি মানুষকে তা দেওয়া হবে, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানান। আইইডিসিআর যেভাবে প্রতিদিন বুলেটিন আকারে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর তথ্য প্রদান করে, সেভাবে প্রতিদিন টিকার আপডেট বুলেটিন আকারে প্রচারের ব্যবস্থা করেন।’ সরকার এখন পর্যন্ত তা আমলে নেয়নি। কিন্তু সবাইকে অন্ধকারে রেখে টিকা কার্যক্রম তথা সার্বিক করোনা সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই এখনই দেশের জনগণকে বাঁচাতে, দেশের অর্থনীতি তথা দেশকে বাঁচাতে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

এমএইচএন/এসএসএইচ