বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর কাছে এ স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। 

যা আছে স্মারকলিপিতে 

‌‘বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার দাবিতে স্মারকলিপি’ শীর্ষক এ স্মারকলিপিতে আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘আপনি সবিশেষ অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের সাবেক ৩ বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহত্তম জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- এর সম্মানিত চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ।’ 

এতে বলা হয়, ‘কারাগারে অন্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মুক্তির বিষয়ে দাখিল করা আবেদন ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে দুটি শর্তে- ক. তিনি ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং খ. উক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির আদেশ দিলেও পরবর্তীতে এই আদেশ বিগত ১৫/০৯/২০২০, ১৫/০৩/২০২১ ও ১৯/০৯/২০২১ তারিখে প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন প্রজ্ঞাপনে একই শর্তে ৬ মাস করে বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশ অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা মোতাবেক বর্তমানে বাসায় অন্তরীণ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’ 

বেগম খালেদা জিয়া অতি সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকাস্থ এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তিনি বাসায় ফেরার পর আবারও অসুস্থ হলে গত ১২ নভেম্বর এ হাসপাতালে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। আমাদের সর্বশেষ তথ্য মতে, তিনি বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটে ভর্তি আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

ইতোমধ্যে তার চিকিৎসায় দায়িত্বরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অভিমত দিয়েছেন বলেও এতে দাবি করা হয়। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা আইনজীবীরা দেশের সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীর এই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। দেশের আইনের শাসন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে বেগম খালেদা জিয়ার যুগান্তকারী ভূমিকা বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই আইনাঙ্গনের মানুষ হিসেবে আমরা মনে করি, তার জীবনরক্ষার্থে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।’

এতে বলা হয়, ‘ইতোমধ্যে আমরা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসহ অন্যান্য বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে দেখেছি। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১-এর ১ উপধারা মোতাবেক বেগম খালেদা জিয়াকে দুটি শর্তে মুক্তি দিয়েছেন এবং বাসায় থাকা অবস্থায় তিন দফায় তার মুক্তির আদেশ বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি অদ্যাবধি কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। ৪০১ (১) ধারা মতে, সরকার যেকোনো সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অথবা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১-এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশ দ্বারা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন।’ 

এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই বলেও স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়। বলা হয়, ‘বরং সরকারের এই সিদ্ধান্ত আইনানুগ হবে।’ 

‘অতএব, উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহোদয়ের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার্থে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে সদাশয় সরকার মহানুভবতার পরিচয় দেবেন।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল আইনমন্ত্রীর কাছে এ স্মারকলিপি জমা দেন। 

প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, নীতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তৈমুর আলম খন্দকার, ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী।

এসএইচআর/ওএফ