দেশে-বিদেশে পৃথক দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’ বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

লিভার জটিলতা, রক্তক্ষরণসহ নানা রোগ নিয়ে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে, ফুসফুসের জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রওশন এরশাদ ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৩০ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। এর আগে ১৩, ১৭, ২৩ ও ২৮ নভেম্বর চার দফায় তার রক্তক্ষরণ হয়। বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রক্তক্ষরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সঙ্গে লিভার জটিলতার চিকিৎসাও চলছে। 

তার চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে চিকিৎসা করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে নেওয়ার অনুমতির দাবি জানানো হচ্ছে সরকারের কাছে। 

গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা জানান, তিনি সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত। এর চিকিৎসা বিদেশের কিছু উন্নত সেন্টার ছাড়া সম্ভব নয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডাম এখনও সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। প্রতিদিনই মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসে, সবার পরামর্শ অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে।

রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া / ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কেমন— জানতে চাইলে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন নেই।’ চিকিৎসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসা থেকে পাঠানো তরল জাতীয় খাবার খালেদা জিয়াকে খেতে দেওয়া হচ্ছে।

গত ১২ নভেম্বর থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। এর আগেও দুই দফায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।  
 
রওশন এরশাদের অবস্থা আগের মতোই

রওশন এরশাদের অক্সিজেন সেচুরেশন কমে যাওয়া এবং বার্ধক্যজনিত বেশকিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে গত ২৫ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আইসিইউতে নেওয়া হয়। এখনও তিনি সেখানে আছেন। তবে, অক্সিজেনের সমস্যা কিছুটা কমেছে।

রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ঢাকা পোস্টকে জানান, তার আম্মা এখনও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। অবস্থা আগের মতোই।

গত ৫ নভেম্বর বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রওশন এরশাদকে থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়। সেখানে তার সঙ্গে আছেন ছেলে ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও ছেলের বউ মাহিমা এরশাদ।

থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে রওশন এরশাদকে / ফাইল ছবি

গত ১৪ আগস্ট রওশন এরশাদের ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়। হাসপাতালে থাকাকালে গত ২০ অক্টোবর আবারও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দ্বিতীয় দফায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

এর আগে টানা ২৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ২৩ মে বাসায় ফেরেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সংসদে গত দুই মেয়াদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন।

এএইচআর/এমএআর/