বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে সংলাপের আয়োজন অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন। এ উদ্যোগ নিতান্তই প্রচারসর্বস্ব। কেননা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।  

সাইফুল হক বলেন, ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপতির যে বিবেচনাবোধই থাকুক না কেন, সরকারের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর মতামত ও ইচ্ছার বাইরে সাংবিধানিকভাবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দিলেও তা তিনি করেন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে। প্রাসঙ্গিকভাবে গত দুটি সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠনের অভিজ্ঞতা আমরা স্মরণ করতে পারি। ২০১২ ও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল তা নজিরবিহীন দায়িত্বহীনতা ও কলঙ্কের স্বাক্ষর রেখেছে।

জোটের সমন্বয়ক বলেন, সরকার ও সরকারি দলের হয়ে কাজ করতে গিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অবশিষ্ট ন্যূনতম ব্যবস্থাই তুলে দিয়েছে। ভোটের মধ্য দিয়ে ভোটারদের পছন্দের দল ও প্রার্থীকে নির্বাচিত করার অধিকার তারা হরণ করেছে। একদিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে, আর অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা রাখতে গিয়ে শাস্তিযোগ্য ধারাবাহিক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে। 

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপ, সার্চ কমিটি ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারি দলের তালিকা ও ইচ্ছার বাইরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতিকে শেষ পর্যন্ত সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দিতে হবে। এ পরিস্থিতি দেশে নির্বাচন ও শাসনতান্ত্রিক গভীর সংকট কেবল আরও ঘনীভূত করবে এবং দেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।

সাইফুল হক বলেন, সংকটটি রাজনৈতিক। রাষ্ট্রপতির ওপর ভর দিয়ে বা তাকে সামনে রেখে এ সংকটের সমাধান হবে না। আমরা সংকট উত্তরণে সরকারকে অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং দেশে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে মতৈক্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানাই।

নির্বাচনের পূর্বে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের জরুরি প্রশ্নেও সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় আসার দাবি জানান তিনি।  

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া প্রমুখ।

এএইচআর/আরএইচ