বাঙালি সংস্কৃতি ও অনুপ্রেরণার বাতিঘর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মদিন উপলক্ষে কানাডার ক্যালগেরিতে প্রবাসী বাঙ্গালীদের উদ্যোগে ‘আজ সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ’ শিরোনামে এক সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র, নোবেল বিজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। যার কারণে বাঙালির অস্তিত্বে মিশে আছেন তিনি। অনুষ্ঠানে তাঁর বিভিন্ন গানের সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে বাঙালির আবহমান বাংলার কৃষ্টি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় সত্ত্বাকে তুলে ধরা হয়।

বরফাচ্ছন্ন কানাডার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের পাগলা হাওয়ার উন্মাদনায় প্রকৃতি যখন উন্মাতাল ঠিক তখনই কর্মময় একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালিরা আনন্দ উৎসবে মেতেছিল অন্যরকম এক মিলন মেলায়। 

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী তীর্থ সাহা ও রিতা কর্মকার সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সুরের মূর্ছনায় প্রবাস জীবনে বাংলার রূপ, প্রকৃতি ভালোবাসা ও নির্মল আনন্দের অবগাহনে ভিন্ন এক আমেজে প্রবাসীদের হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল জীবনের আনন্দ জয়গানে। 

যুগের পর যুগ কবিগুরুর গান, কবিতা, সাহিত্য মানুষের মনে সাহস যোগায়, মনকে করে শান্ত। বাঙালি জীবনের যত ভাবনা, বৈচিত্র্য তার পুরোটাই লেখনী, সুর আর কাব্যে তুলে ধরেছেন কবিগুরু। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা-সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা দেয়। আর তাইতো প্রবাস জীবনে বাঙালিদের মাঝে এই আয়োজন রবীন্দ্র চর্চার ধারাকে অব্যাহত রেখে আরও সমৃদ্ধি করবে এমনটাই মনে করছেন সংগঠকরা।

লেখক, কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, কবি গুরুর অসাধারণ গান আমাদের জীবনবোধের অনুপ্রেরণা যোগায়, তার সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তা আমাদের ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিল্পী, কলাকুশলী ও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি ক্যালগেরিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।

সংগঠক সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, খুবই ভালো লাগছে প্রবাসে এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে পেরে। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ এবং তার বিশাল সাহিত্য কীর্তির জন্য তিনি আমাদের রক্তস্রোতে আজও মিশে আছেন।

অন্যতম সংগঠক খায়ের খোন্দকার রুবেল বলেন, ব্যাপক সাড়া পেয়েছি সুধীজন ও দর্শকদের কাছ থেকে। আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ, আমরা অভিভূত। আপনাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় আমাদের এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

সংগীত শিল্পী তীর্থ সাহা বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘হে নূতন’ গানে চির নতুনের মধ্যে দিয়ে নিজের পৃথিবীকে আগমনের শুভক্ষণকে ব্যক্ত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনের এ আযোজন উপভোগ করার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

সংগীত শিল্পী রীতা কর্মকার বলেন, আমাদের অস্তিত্বে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, সুরে কোথায় নেই তিনি। তিনি বিশ্বের দরবারে বাঙালিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও শিখিয়েছেন।

অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পন্সর বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ইকবাল রহমান বলেন, রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীর মতো এমন প্রগতিশীল ও সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতেও এমন সৃষ্টিশীল যেকোনো কর্মকাণ্ডে আমরা কমিউনিটির পাশে থাকব।

অনুষ্ঠানে যন্ত্র সহযোগিতায় ছিলেন অমিত কুমার মুহুরি, সুমন চক্রবর্তী, বাপ্পী দেবরয় এবং দিয়া চক্রবর্তী।

বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বায়নে রূপ দিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগ-যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ রূপকার। রবীন্দ্রনাথ চর্চার মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সর্বোচ্চ বিকাশের পথ উন্মুক্ত হতে পারে এমনটাই মনে করছেন এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আইএসএইচ