যুক্তরাজ্যে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, ইউকের সদস্যরা প্রথমবারের মতো তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন। রোববার (৩ জুলাই) পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যামের একটি হলে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে মো. হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মো. আতিকুর হোসাইন নির্বাচিত হয়েছেন।

গত রোববার সকালে ইস্টহ্যামের ভোট কেন্দ্রে শত শত টাঙ্গাইলবাসী ভোট দিতে আসেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সারি বেঁধে ভোট দিতে দেখা যায় তাদের।

রাজধানী লন্ডনে বেশিরভাগ সদস্যদের বাস হলেও ব্রিটেনের অন্যান্য শহর থেকেও সদস্যরা এসেছিলেন ভোট দিতে। পশ্চিম লন্ডনের সাউথ হল, নটিংহাম, লোটন ও ম্যানচেস্টার থেকে সদস্যরা এসে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন। রোববারের ওই নির্বাচন ব্রিটেনের টাঙ্গাইলবাসীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। কে টাঙ্গাইল সদরের আর কে বাসাইলের বা সখিপুরের বা কালিহাতির তা ভুলে যায় সবাই। কার পৈতৃক ভিটা মধুপুর, গোপালপুর বা ভূয়াপুর অথবা কার ঘাটাইল, দেলদোয়ার, নাগরপুর বা মির্জাপুর তা সেখানে মুখ্য ছিল না। সেখানে সবাই টাঙ্গাইলবাসী সেটাই ছিল তাদের মূল পরিচয়। 

ব্রিটেনে কে কোথায় কীভাবে আছে তাই উঠে আসে মিলন মেলার আড্ডা-আলোচনায়। এছাড়া নির্বাচনের পর ব্রিটেনের টাঙ্গাইলবাসীর বিপদে আপদে এগিয়ে আসার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তারও পরিকল্পনা করে নির্বাচন দিতে আসা ভোটাররা। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মির্জা রফিকুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটার তালিকা নিয়ে কিছুটা সমস্যা থাকলেও আশা করা যায় আগামীতে নির্বাচিত কমিটি এই সমস্যার সমাধান করবে। 

সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল করিম মুক্তার জানান, ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, ইউকের ভোটাররা এসে ভোট দিচ্ছেন। এ নির্বাচন সংগঠনের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আশা করি আগামীতেও এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচন উপলক্ষে সারাদিনই শত শত টাঙ্গাইলবাসীর পদচারণায় মুখরিত ছিল ভোটকেন্দ্র। সঙ্গে ছিল দেশীয় খাবারের নানা আয়োজন। রাত ৯টায় ভোট দেওয়া বন্ধ হলে নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দেন মাগরিবের নামাজের পর ভোট গণনা হবে। তখন থেকেই শুরু হয় প্রার্থীদের প্রতীক্ষার পালা। মাগরিবের নামাজের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সহকারী নির্বাচন কমিশনার সোহরাব হোসেন সরকার, মো. এছহাক মিয়া ও আব্দুস সবুর ভোট গণনা শুরু করেন। ভোট গণনা শেষে তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফলাফল ঘোষণা করেন রাত ১১টার দিকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মির্জা রফিকুল ইসলাম ফলাফল পড়ে শোনান। তিনি জানান, আগামী দুই বছরের জন্য টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, ইউকের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য মোট ৩০০ জন ভোটার তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। মো. হুমায়ুন কবির ২০৩ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শাহজাহান আলী (ফাইজুর) পেয়েছেন ৮৮ ভোট। আর আরেকজন সভাপতি প্রার্থী নুরুল ইসলাম তোতা পেয়েছেন ৫ ভোট। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. নাজমুল হক খান ১৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুদ রানা পেয়েছেন ৮০ ভোট। অপর প্রার্থী রকিবুল ইসলাম তালুকদার (লিটন) পেয়েছেন ৭৪ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মো. আতিকুর হোসাইন আসাদ ১৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবলী শহীদ খোশনবিশ পেয়েছেন ১৪৫ ভোট।

নবনির্বাচিত সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমি প্রথমেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি, তিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, ইউকের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা আমাকে আগামী দুই বছরের জন্য যে দায়িত্ব দিলেন আমি যেন তা যথাযথভাবে পালন করতে পারি।  

ওএফ