দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বিখ্যাত নদীর পাড়ে পূজা পরিষদের আয়োজনে রথযাত্রা উদযাপন করা হয়েছে। রোববার (৩ জুলাই) দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একমাত্র সংগঠন ‘পূজা পরিষদে’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ রথযাত্রার সার্বজনীন উৎসব।

বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় সকাল ১০টায় নিজস্ব মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের পূজা ও ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন এবং কীর্তন করা হয়। পূজার পৌরহিত্য করেন শ্রী সঞ্জীব গোস্বামী।

রাজধানী সিউলের প্রাণকেন্দ্রে পূজা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং মন্দির অঙ্গন থেকে জগন্নাথ দেবের রথ টেনে নিয়ে হান নদীর ধারে যান এখানকার উদ্যোগী বাংলাদেশিরা। তাদের সঙ্গে কোরিয়া, নেপাল ও ভারতের ভক্তদের উপস্থিতিও এই উদ্যোগকে বিশেষভাবে বর্ণময় করে তুলে।

বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা এই আনন্দ উৎসবে সামিল হন। তাদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্যবসায়ী ডেভিড একরাম উপস্থিতি এবং দেওয়া বক্তব্যে উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা ব্যস্ত সময়ের এই স্বল্প পরিসরের উদ্যোগীদের উৎসাহিত করেছে। তিনি তার বক্তব্যে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেন। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলিত হওয়ার উৎসবগুলোর মধ্যে রথযাত্রা অন্যতম বলে সবার শান্তি কামনা করেছেন।

অনুষ্ঠানে আসা অতিথি ও ভক্তদের মধ্যে পূজা পরিষদের আহ্বায়ক ড. হাসি রাণী বাড়ৈর বক্তব্য সবার মনে আশার সঞ্চার করে। বাংলা ও বাঙারির বহু ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবকে সার্বজনীন করে গড়ে তোলার দৃঢ়তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সবাই বিবেচনা করেন। শাশ্বত বাঙালির এমন ধর্মীয় ও সামাজিক পার্বণগুলোকে বিশ্বসমাজে প্রতিফলিত করার মধ্য দিয়ে যে জাতীয় ঐতিহ্যের কিছু মাত্র তুলে ধরার এবং এর বিকাশ ও আধুনিকায়নের প্রত্যয় পরিলক্ষিত হয়, সর্বোপরি তা অনুসরণীয় বলে উপস্থিত ভক্তবৃন্দের অনেকেই মন্তব্য করেন।

অতিথি আপ্যায়নের তদারকি এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন শ্রী এম এ পার্থ কুমার দে। এছাড়াও সমগ্র উৎসবের নানাবিধ ব্যবস্থাপনা, রথের আয়োজন ও নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব শ্রী আশুতোষ অধিকারীর নেতৃত্বে যারা অংশ নেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজনের উল্লেখ এখানে অনিবার্য। সাম্প্রতিক কোভিডের হঠাৎ কিছুটা উন্মত্ত সময়ে স্বল্প সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যারা সক্রিয়ভাবে এ উদ্যোগে সাফল্য এনে দেন তাদের মধ্যে সুফল দত্ত, সঞ্জীব গোস্বামী, পার্থ কুমার দে, দুর্জয় কুমার রাজ, মিঠুন ঘোষ, শিবু ঘোষ, মিঠুন ঘোষ অন্যতম। বেলা ১টায় প্রচণ্ড দাবাদহ মাথায় নিয়ে ভক্তদের রথ টেনে নিয়ে চলেন হান নদী অভিমুখে।

রাজধানী সিউলের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া হান নদীর তীরে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাসে স্বস্তির অবকাশে এ উদ্যোগ আরও আনন্দমুখর হয়ে উঠে স্থানীয় কোরীয় উৎসুক জনগণের চকিত উপস্থিতিতে। নদীর পাড়ে হিম শীতল বাতাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠানে আসার মূল্যবান অনুভূতি ও মতামত প্রদান করেন ড. কেশব কুমার অধিকারী, ড. সবুজ চন্দ্র সূত্র ধর, ড. নিপা ভৌমিক, পি. এইচ. ডি. গবেষক বিবেক ধিমুলে, পি. এইচ. ডি. গবেষক চন্দ্রিকা পাল, শ্রী পার্থ কুমার দে, সঞ্জীব গোস্বামী, দুর্জয় কুমার রাজ, মিঠুন ঘোষ, শিবু ঘোষ, পি. এইচ. ডি. গবেষক অনুপম চক্রবর্তী প্রমুখ। স্পন্সর হিসেবে সহযোগিতা করেন এশিয়ান রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী আবদুল মতিন এবং ইয়াংসান জেলা অফিস।

পরিশেষে আগত অতিথিদের মূল্যবান সময় এবং অংশগ্রহণের জন্য পূজা পরিষদের আহ্বায়ক ড. হাসি রাণী বাড়ৈ সমাপ্তি বক্তব্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। পূজা পরিষদের অফিসে অনুষ্ঠান শেষে একটি সংক্ষিপ্ত তাৎক্ষণিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরও বর্ণময় ও কোরীয় সমাজে এবং সামগ্রিক বাংলাদেশিদের মধ্যে সার্বজনীন ও জনপ্রিয় করে তোলার ওপর আলোকপাত করাসহ অনুষ্ঠানের মূল্যায়ন এবং কতিপয় সাংগঠনিক বিষয়ও আলোচিত হয়।

লেখক : দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সাংবাদিক।