সিলেটে ১১ মাস কার্গো বন্ধ, হতাশ প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
প্রায় এক বছর ধরে কার্গোতে পণ্য যাচ্ছে না সিলেটে। সর্বশেষ যেবার গিয়েছিল, তাও কাস্টমসে কাগজপত্রের জটিলতায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে যায়। দীর্ঘদিন ধরে দেশে পণ্য পাঠাতে না পেরে দিশেহারা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কার্গো ব্যবসায়ীরাও।
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব এড়াতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। তার আগেই শেষবার কার্গো বিমান যায় সিলেটে। সেবার প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে পাঠানো পণ্যসামগ্রী সিলেট বিমানবন্দরে আটকা পড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশি কার্গো ব্যবসায়ীরা। কবে নাগাদ প্রেরণকারী প্রবাসীদের মালামাল তাদের পরিবার বুঝে পাবে তার কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় প্রতিনিয়ত বিরূপ মন্তব্যসহ নানাভাবে হেয় হতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় অনেক কার্গো ব্যবসায়ী পণ্য প্রেরণকারীদের ভয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে হতাশায় ভুগছেন পণ্য প্রেরণকারী প্রবাসীরাও।
বিজ্ঞাপন
এদিকে সিলেট বিমানবন্দরে আটকে পড়া প্রবাসীদের পাঠানো পণ্যসামগ্রী খালাসের দাবিতে সম্প্রতি দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে আমিরাতে কার্গো এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করেছেন।
কার্গো ব্যবসায়ীরা জানান, ওমান, দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, আজমান ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শ্রমিকের বাড়ি সিলেটে। তারা দীর্ঘদিন ধরে মালামাল পাঠাতে পারছেন না। সর্বশেষ গত বছর সিলেটে কার্গোতে পাঠানো ৬০ টন পণ্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেসময় কাস্টমস জানিয়েছিল, এসব মালামালের কাস্টমসের কাগজপত্র না থাকায় সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অথচ নিলামের বিষয়ে পণ্যের মালিককে কোনো ধরণের সতর্কবাণী বা জরিমানা দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। এতে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রবাসী কার্গো ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কার্গো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালের মার্চে দুবাই থেকে সর্বশেষ কার্গো ফ্লাইট সিলেটে যায়। ওই ফ্লাইটের মালামাল আটকে গিয়েছিল। তারপর থেকে আমরা সিলেটে আর কোনো পণ্য পাঠাতে পারিনি। ব্যবসাও করতে পারিনি। প্রাথমিক অবস্থায় সিডিউল ফ্লাইটগুলো চালু হলেও কার্গো ফ্লাইট চালু হয়নি। বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরণের নির্দেশনা না আসায় আমরা সিলেটের কার্গো ব্যবসা শুরু করতে পারছি না।
তিনি বলেন, সর্বশেষ যেই মালামালগুলো পাঠিয়েছিলাম, সেগুলোও আটকে আছে। আমাদের অনুরোধ, একটা সহজ ব্যাগেজ রুল করে দেওয়া হোক যাতে সুন্দরভাবে প্রবাসীদের মালামাল সংগ্রহ করে পাঠাতে পারি। আমরা দুবাই সরকার থেকে অনেক টাকা দিয়ে ব্যবসার লাইসেন্স নিয়েছি, প্রতিটি দোকানে আমাদের তিন-চার জন কর্মচারী আছে, আমাদের বাঁচতে দিন। অনেক কার্গো ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে বসে আছে বলেও জানান তিনি।
কার্গো ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমি তিন-চার বছর ধরে দুবাইয়ে থাকি ও প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে কার্গোর মালামাল পৌঁছে দেই। তবে করোনায় মার্চে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আগে আমি যেসব মালামাল দেশে পাঠিয়েছিলাম, সেগুলোর কোনো খবর নেই। প্রবাসীরা প্রায় ১১ মাসেও সিলেটে এগুলো পায়নি। হঠাৎ শুনলাম নিলামে দিয়ে দিয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি, সিলেটের কার্গোর ব্যাপারটা যাতে দেখে।
দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ ইরফানুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছরের ২০ মার্চের দিকে আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জন্য কার্গোর মাধ্যমে ৫০ কেজি মালামাল পাঠাই। তবে কার্গো থেকে জানানো হয়, সার্ভিস বন্ধ থাকার কারণে তারা আমার পণ্য আমার পরিবারকে পাঠাতে পারেনি। পরে জানতে পারলাম, আমার নিজের পয়সায় কেনা মালামাল সরকার নিলাম করে দিয়েছে। এটার যদি কোনো জরিমানা আসতো তাহলে আমরা দিতাম। কিন্তু আমাদের কোনো কিছু না জানিয়ে নিলাম করা হয়েছে। দুই মাসের জমানো টাকা দিয়ে মালামালগুলো আমি দেশে পাঠিয়েছিলাম।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে কার্গোতে মালামাল বহনের চেয়ে বাংলাদেশে খরচ দ্বিগুণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ খরচ কমাতেও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেন তারা।
জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, একজন প্রবাসীর দেশে যেতে সব মিলিয়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকার লোকসান হয়। দুবাইয়ে বসবাস করেন সিলেটের এমন অনেক প্রবাসী আছেন, যারা গত ৮-১০ বছর ধরে দেশে যেতে পারেন না। তারা কার্গোতে মালামাল পাঠাতেন। তবে সিলেটে এ সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মালামাল পাঠাতে পারছেন না। এছাড়াও বাংলাদেশে কার্গোতে মালামাল পাঠানোর খরচ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যেমন সমুদ্রপথে পাকিস্তানে কার্গোতে পণ্য পাঠাতে প্রতিকেজি মালামালে সাড়ে ৩ দিরহাম (বাংলাদেশি ৮৮ টাকা), ভারতে প্রতিকেজি ৬ দিরহাম (বাংলাদেশি ১৪৫ টাকা)। অথচ বাংলাদেশে প্রতিকেজি খরচ হয় ১৫ দিরহাম বা ৩৫০ টাকা। আমরা সরকারকে অবিলম্বে পরিবহন খরচ কমানোর আবেদন জানাচ্ছি।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে সিলেটে এয়ার কার্গো পরিচালনার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা চালু রয়েছে। যারা এটা পরিচালনা করেন (কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী) যখন চাইবেন তখনই চালু রাখতে পারবো। বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই।
এসএসএইচ