শওগাত আলী সাগর লাইভ অনুষ্ঠান

কানাডায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার পরিচয় দিয়ে তথ্য বা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একদল প্রতারক। এসব প্রতারক চক্র থেকে বাঁচতে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের টেলিফোনে কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য বা অর্থ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, কানাডার সরকারি কোনো সংস্থা টেলিফোনে ব্যক্তিগত তথ্য চায় না বা অর্থ পরিশোধ করতে বলে না। তারা সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টরেন্টো থেকে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ নামে এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এই মতামত দেন।

এ সময় আলোচনায় অংশ নেন ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সাইবার ফ্রড এবং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন বিশেষজ্ঞ খালেদ শোয়েব, আইনজীবী ব্যারিস্টার জয়ন্ত সিনহা এবং সাংবাদিক কিশোয়ার লায়লা।

নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর জানান- ইমিগ্রেশন, সার্ভিস কানাডা, রেভিনিউ কানাডা এমনকি আরসিএমপির নাম ভাঙিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে টেলিফোনে নাগরিকদের প্রতারিত করছে। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এই প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করে দিতে এই আলোচনার আয়োজন করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সাইবার ফ্রড এবং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন বিশেষজ্ঞ খালেদ শোয়েব তার আলোচনায় বলেন, সারাবিশ্বে ১০ হাজারের বেশি কল সেন্টার থেকে টেলিফোন কলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। ইন্টারপোল এ ব্যাপারে সক্রিয় আছে। তবে নাগরিকদেরও সতর্ক হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কানাডাসহ পশ্চিমাদেশগুলোর থার্ড পার্টি আউটসোর্সিংয়ের সুযোগে এইসব দেশের নাগরিকদের নাম টেলিফোন নম্বর বেহাত হতে পারে। এই প্রতারণার নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বজুড়ে এবং তারা নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই নাগরিকদের প্রতারণা করছে। আগামী ১০ বছর পর প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। এতে প্রতারণাও বাড়বে। সেজন্য প্রস্তুতির দরকার আছে।

খালেদ শোয়েব বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি কোনো সংস্থা ফোন করলেই আতংকিত না হয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ করুন, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে কল ব্যাক নম্বর রেখে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে খোঁজ খবর নেন। প্রতারকরা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে গভীর আস্থার সঙ্গে কথা বলবে, কিন্তু তাতে বিভ্রান্ত হলে চলবে না।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার জয়ন্ত সিনহা সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কিভাবে নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করে বা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা কিভাবে জানায় তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টেলিফোনের মাধ্যমে কোনো আদালত বা আরসিএমপি গ্রেফতারি পরোয়ানার তথ্য নাগরিকদের জানায় না, সরকারি কোনো সংস্থা ক্রেডিট কার্ড, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা গিফট কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে না।

তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার ধরন সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় অনেকেই সরকারি সংস্থার টেলিফোন পেয়েই আতংকিত হয়ে পরেন। আতংকিত না হয়ে খোঁজ খবর নেওয়া ও টেলিফোনে অর্থ বা গোপনীয় তথ্যাদি কাউকে না দেয়ার জোড় পরামর্শ দেন তিনি।

সাংবাদিক কিশোয়ার লায়লা তার আলোচনায় নাগরিকদের বিশেষ করে নতুন আসা অভিবাসীদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সরকারি অর্থায়নে বিভিন্ন সেটেলমেন্ট সংস্থা নতুন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করছে। তারা প্রতারণার ধরন এবং করণীয় সম্পর্কে নতুন অভিবাসীদের তথ্য দিয়ে সচেতন করে তুলতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠন এবং ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপগুলোও কার্যকর সচেতনতামূলক ভূমিকা রাখতে পারে।

এমএইচএস