কানাডার ক্যালগেরিতে বসবাসরত বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংখ্যালঘু স্বার্থরক্ষা কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সংঘাত রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ সেল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তারা বলেছেন, এই কাউন্সিল দেশের সংখ্যালঘুদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে তাদের সুরক্ষার উপায় সরকারকে পরামর্শ দেবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সরকারের কার্যক্রম নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করে বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশটির স্থানীয় সময় রোববার (২৮ মার্চ) সকালে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় এ দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের শাল্লায় সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া মন্দির এবং ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণসহ হামলায় আহত গ্রামবাসীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।

সভায় বক্তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে শাল্লা, নাসির নগরসহ প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্মূল করার ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান। 

ড. শান্তনু বনিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর, প্রবাস বাংলা ভয়েসের প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল, রূপক দত্ত, কিরন বনিক শংকর, জয়দীপ স্যানাল, সুব্রত বৈরাগী, জয়ন্ত বসু, শুভ্র দাস, নবাংশু দাস, প্রাণবেন্দ্র সেনগুপ্ত, তন্ময় তালুকদার, মানবেন্দু সরকার, খোকন শিকদার, খোকন দেবনাথ, গৌতম চৌধুরী, দেবাশীষ রায় প্রমুখ।

নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বিভিন্ন সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দেশের যেকোনো নাগরিকের ওপর হামলাই ফৌজদারি অপরাধ- সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ ধরনের ঘটনার সরাসরি বিচার হওয়ার কথা। অথচ প্রতিটি হামলার ঘটনার পরই নানা কূটচাল চালিয়ে বিতর্ক তুলে বিচারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, সব ধরনের বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াই করে করেই বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর ও সুবর্ণজয়ন্তীর এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিতর্ক এবং ভাবনাগুলো মানুষ হিসেবে আমাদের ছোট করে দেয়।

প্রবাসী সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল বলেন, অপরাধীদের কোনো ধর্ম নেই। যেকোনো মূল্যে এসব অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

কিরণ বণিক শংকর বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্র বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করে আসছে। আর বিভিন্ন ছল-ছুতোয় হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করে চলছে। বর্তমান সরকার এবং সাধারণ জনগণ যদি তাদের কঠোর হাতে দমন না করে এর পরিণাম ভয়াবহ রূপ নেবে আর তা শুধু হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বাংলাদেশকে কোনো ভাবেই আমরা আফগানিস্তান বানাতে চাই না।

রুপক দত্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশ ও জাতির শত্রু। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যে ধর্মেরই হোক না কেন, এরা কখনও উন্নয়ন আর প্রগতির সহায়ক নয়। শাল্লার ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো কোনোভাবেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

জয়ন্ত বসু বলেন, সব ধরনের বিদ্বেষ ও হানাহানির ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুন্দর, মানবিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই। যেখানে সবার সমানাধিকার সুরক্ষিত থাকবে। আমি মনে করি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সবার দায়িত্ব একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং দেশের উন্নয়নের জন্য একযোগে কাজ করা।

সুব্রত বৈরাগী বলেন, শাল্লার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনায় জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জয়দীপ স্যানাল বলেন, বাংলাদেশের জন্মের ৫০ বছর আর তার জনকের জন্মবার্ষিকীর এই মার্চ মাসে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাই আসুন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা এবং মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে এক হই। মুক্তিযুদ্ধের শক্তি নিয়ে সবাই মিলে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি, জনমত গড়ে তুলি এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করি, যাতে এ ধরনের লজ্জার ঘটনা জাতিকে আর কখনও দেখতে না হয়।

শুভ্র দাস শুভ বলেন, মাতৃভূমির প্রতি সব দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও যখন প্রবাসে থেকে ভাবতে হয় আমাদের পরিবার, মা, আত্মীয়-স্বজন হিন্দুধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন- সেটা খুবই পীড়াদায়ক। আমরা অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে- এই প্রত্যাশা করছি সরকারের কাছে।

এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বক্তারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের বাণী সংবলিত ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল পরিবর্তন করেন। একইসঙ্গে তারা কানাডাসহ বিশ্বের দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান।

এসএসএইচ