রমজান মাস এলেই দেশে বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। রমজান যত কাছে আসে দেশের মানুষের মাঝে দাম নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা তত বাড়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সময় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে থাকেন। এর বিপরীত চিত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে এ সময় নিত্যপণ্যের দাম থাকে নিয়ন্ত্রণে।

এসব দেশে প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম ও মানে নজরদারি করে সরকারি সংস্থা। গ্রাহকের সন্তুষ্টির জন্য কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। পণ্যের অফার আর মূল্য ছাড়ের মাধ্যমে কে কত কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারে সেই চেষ্টা দেখা যায় সর্বত্র। মাছ, মাংস, ফল, শাক-সবজি থেকে শুরু করে চাল, তেল, চিনি, দুধসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি হয় সীমিত লাভে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় ছাড়ের বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি মানুষের বাসা বাড়িতে পর্যন্ত বিতরণ করা হয় মূল্য ছাড়ের লিফলেট।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বড় বড় চেইন শপ, সুপার মার্কেট থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানে রমজানকে কেন্দ্র করে চলে জমজমাট বেচাকেনা। অনলাইনে অর্ডার করলেই বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় পছন্দের জিনিসপত্র। এসব দেশে যেখানে রমজানে ৪০/৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়, তখন দেশের বাজারে অস্থিরতা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কুয়েত প্রবাসী আব্দুস সাত্তার বলেন, রমজান মাস আসলে কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে। আর আমাদের দেশে উল্টো রমজান আসার আগেই দাম চড়া হয়। প্রবাসীদের বেতন তো বাড়েনি, এমনিতেই পরিবারের সব খরচ চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কষ্টটা দ্বিগুণ হয়। আরব দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা উচিত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের।

আরেক প্রবাসী মোহাম্মদ বশির বলেন, কুয়েতসহ আরব দেশগুলো খাবারের ব্যাপারে খুব সচেতন ও সর্তক। প্রতিনিয়ত মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থার লোকেরা খাদ্যের মান পরীক্ষা করে, দাম যাচাই করে। কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলেই জরিমানা অথবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। আমাদের দেশে যে যার ইচ্ছে মতো দামে বিক্রি করে। ম্যাজিস্ট্রেট এলে দাম কমিয়ে দেয়, চলে গেলে আবার আগের মতোই বিক্রি শুরু করে। আমাদের দেশে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে তবেই ন্যায্য দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবে মানুষ।

মোহাম্মদ আশরাফুল রিয়াদ বলেন, গত বছর থেকে মহামারি করোনার কারণে দেশে ও প্রবাসে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। কষ্টে দিন কাটছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ। এখন সরকারের উচিত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি বাড়ানো।

প্রবাসীরা মনে করেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় যদি নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করে তাহলে দেশের বাজার স্বাভাবিক থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ চান তারা।

এসএসএইচ