অস্ট্রেলিয়ায় বর্ষবরণের আয়োজন যেন চোখ ফেরানো দায়!
পৃথিবীতে বর্ষবরণের হিসেবে নিউজিল্যান্ড’র পর অস্ট্রেলিয়ার ঘড়ির কাঁটা পৌঁছে যায় নিউ-ইয়ার এর ঘরে, যেটি দ্বিতীয় দেশ হিসেবে (সবার আগে) বর্ষবরণ। যে আয়োজনকে ঘিরে থাকে বাড়তি উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস; আনন্দে উদ্বেলিত হতে থাকে দলীয় আয়োজনও। অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বর্ষবরণের স্পট ঘুরে লিখেছেন নির্জন মোশাররফ।
অস্ট্রেলিয়ায় বর্ষবরণ মানেই অভিনব সব আয়োজন, উৎসাহ, উদ্দীপনা। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১২টা ছোঁয়ার আগেই শুরু হয় প্রচলিত কাউন্ট-ডাউন। সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন অপেরা হাউস, হারবার ব্রিজসহ আশপাশের মোট ত্রিশটি স্পটে, পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে অনেকে হাজির হন, সঙ্গে ছোট বিছানা বা মাদুর, একটু শুয়ে বসে থাকা, খোশ গল্প, আনন্দ আড্ডা, দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর, তবুও নেই উচ্ছ্বাসের কমতি। অন্যদিকে মেলবোর্নে মূল শহরে থাকে চিরচেনা এই আয়োজন, বিকেল গড়াতেই পছন্দের জায়গা পেতে তৎপর হয়ে ওঠেন দর্শনার্থীরা, একই দৃশ্য পার্থ, এডিলেড, ব্রিসবেনসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য মেট্রো শহরে।
সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত গেলেই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মুহুর্মুহু শব্দ ও বর্ণিল আতশবাজির ঝলমলে দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রতিটি মেট্রো শহরে মূল আকর্ষণ থাকে রাত রাত ১২টায়। আকাশজুড়ে দেখা মেলে আলোর মিছিল, চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। এ যেন ক্ষণিকের বিলাসিতা, মাথা উঁচু করে তাকানো, যেন কৃত্রিম রংধনু, এক অভিনব আয়োজন।
বিজ্ঞাপন
প্রায় নয় টন আতশবাজির চোখ ধাঁধানো আয়োজনে আলোকিত হয় প্রশান্ত পাড়ের সিডনি। যার জন্য খরচ হয় প্রায় সাত মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। পাব, বার, ক্লাবেও দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পূর্ণ আবহে পালিত হয় নববর্ষের জমকালো উদযাপন
প্রায় ৯ টন আতশবাজির চোখ ধাঁধানো আয়োজনে আলোকিত হয় প্রশান্ত পাড়ের সিডনি। সবাই যেন খুঁজে পায় কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণ, বছর ঘুরে এলো বর্ষবরণ। চোখ জুড়ানো এ বর্ষবরণে দেখা মেলে প্রায় বারো লখেরও বেশি দর্শনার্থীর। সকাল থেকে অপেরা হাউস, হারবার ব্রিজসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। হোটেল মোটেলগুলো বুকড থাকে মাসব্যাপী। সিডনির মূল শহরের ৩৫টি ছাদ ও ৭টি গ্রাউন্ড সাইট থেকে প্রদর্শনী হয় এসব আতশবাজি। পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে নানা পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলা হয় ।
বিজ্ঞাপন
নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসুক অতিথি পর্যটকরা প্রকাশ করেন উল্লাস। ৩৫ বছর বয়সী ফ্রান্সের নাগরিক কেভিন বলেন, তিনি দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। প্রেয়সী নিয়ে উঠেছেন অপেরা হাউসের পাশে বহুতল হোটেলে, এই পিক সিজনে তাকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ অর্থ, খরচ বেশি হলেও এই নান্দনিক আয়োজনে মন জুড়িয়ে যায় বলেন তিনি।
আরও পড়ুন
উন্মুক্ত স্থানে সেলফি জোন ও রক ধাঁচের কনসার্টে মেতে থাকতে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ানদের। নববর্ষের আগে ছবি তোলা নিয়ে দেখা যায় এক ধরনের প্রতিযোগিতা, তাছাড়া বারবিকিউ যেন চাই চাই। প্রিয়জনকে নিয়ে নেচে গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হন সবাই, সেই সঙ্গে থাকে মদ পানের হিড়িক, আনন্দে উদ্বেলিত হতে থাকে দলীয় আয়োজনও। তরুণ-তরুণীদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে জমজমাট হয়ে ওঠে নাইট ক্লাব ও রেস্তোরাঁ। উৎসুক জনতার সার্বজনীন এই উৎসবে অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।
পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বিলাসী টুরিস্টরা আসেন এই নান্দনিক বর্ষবরণের সাক্ষী হতে। ভার্চুয়ালি এই আয়োজনে চোখ রাখে প্রায় একশকোটি দর্শক। এই একদিনকে ঘিরে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে অস্ট্রেলিয়া, যার বড় অংশ আসে পর্যটন ও টিভি স্বত্ব থেকে।
নতুন বছরের এই আয়োজনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে বছরব্যাপী পরিকল্পনা করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে নাগরিকদের তারুণ্যতার স্বাদ দিতে এ আয়োজনে দেওয়া হয় উৎসাহ, এমনকি বছরের প্রথম দিনকে গণ্য করা হয় ছুটির দিন হিসেবে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষবরণ এমনই নান্দনিক, চমকপ্রদ যেন চোখ ফেরানো দায়!
এমএ