উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর লাখ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। সেখানে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অসংখ্য অভিবাসী। অধিকাংশ মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত হয় নিহতের পরিবার।

তবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস গত ১ বছর ৯ মাসে মৃত্যুজনিত ঘটনায় নিয়মিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আদায় করে ৪৬টি পরিবারকে দিয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) এ এস এম জাহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করলে এবং তা হাইকমিশনের নজরে এলে হাইকমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে। কর্মীর বকেয়া, দুর্ঘটনা, মৃত্যু ও ইন্স্যুরেন্সসহ ক্ষতিপূরণ আদায়ে দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই মরদেহ দেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (সকসো) থেকে নিয়মিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি গত ১ বছর ৯ মাসে মৃত্যুজনিত ঘটনায় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আদায় করে ৪৬টি পরিবারকে দিয়েছে দূতাবাস।

পাবনার চাটমহর উপজেলার রত্না খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার স্বামী (আহেদ আলী) মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে ২০২২ সালের জুনে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কর্মস্থলে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ি। একদিকে দুই শিশু সন্তান, অন্যদিকে ঋণের চাপে অসহায় হয়ে মানবেতর দিন কাটাই।

এমন সময় ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে পাশে দাঁড়ায় মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। আমরা দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

হাইকমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কুমিল্লার হোসনেআরা বেগম বলেন, ঋণ করে স্বামীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। হঠাৎ তার মৃত্যুতে তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। কি খাই, কীভাবে দিন কাটে বলতে পারি না। এর মধ্যে পাওনাদাররা প্রতিদিন টাকার জন্য চাপ দিত। দূতাবাসের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পেরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।

এদিকে ৪৬টি পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদের প্রতিবেশীরাও। তারা বলছেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সত্যিই ধন্যবাদ প্রাপ্য। মালয়েশিয়ার মতো বিদেশের প্রত্যেক দূতাবাসের উচিত এমন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

জানতে চাইলে দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর সৈয়দ শরিফুল ইসলাম জানান, দূতাবাস ধন্যবাদ প্রাপ্তির আশায় কিছু করে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই প্রবাসীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হাইকমিশন সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর।

এসএসএইচ