বাবার স্মৃতি হাতড়ে এবার পার হবে কানাডা প্রবাসী ইসমাত জেরিনের ঈদ আনন্দ

প্রবাসীদের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিয়েছে বিশ্ব মহামারি করোনা। স্বজনদের পরম মমতার আলিঙ্গন থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। নানা জটিলতায় ঈদ উৎসব এমনকি প্রিয়জনদের শেষ মুহূর্তেও বাংলাদেশে গিয়ে কাছ থেকে দেখা করতে পারছেন না। গত দুই বছরে অনেক প্রবাসী হারিয়েছেন প্রিয় স্বজনদের। হাজার চেষ্টা করেও শেষ বিদায়ে অংশ নিতে পারেননি তারা।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব করতে হলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে দুই দেশের সরকার। কানাডার সরকার বিমানে ওঠার ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে আসার পর কোয়ারেন্টাইন তো আছেই। আবার কানাডায় ফিরে ফের কোয়ারেন্টাইন— এসব কারণে বিচলিত প্রবাসী বাঙালিরা।

করোনাকালে তাই সবাই মুঠোফোনে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছেন প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে। ব্যথিত হৃদয়ে ভার্চুয়ালি দেখে নিচ্ছেন প্রিয় স্বজনদের; কখনো সেটা ঘরে আবার কখনো হাসপাতালের বেডে। সবারই মাঝে একটা শঙ্কা, এই বুঝি শেষ দেখা। এমন চরম বাস্তবতায় দিনযাপন করছেন কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা।

করোনা অতিমারির মধ্যেও দু-একজন যে দেশে যাচ্ছেন না তা নয়, কিন্তু সেই সংখ্যা হাতে গোনা। এর মধ্য যোগ হয়েছে বিমান যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা।

অন্যদিকে, কানাডায় প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার সঙ্গে লড়াইও করছেন অনেকে। নিজ শরীর এবং দেশে থাকা বয়স্ক মা-বাবার কথা ভেবে অনেকে দেশে যাচ্ছেন না। সবকিছু মিলে এ এক অন্যরকম প্রবাসজীবন, বাঙালিরা যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। স্মৃতির আলপনা, হারানো প্রিয়জনদের কথা, আর তাদের ছবি দেখে এবার কাটবে প্রবাসীদের ঈদ।

কানাডার আলবার্টা হেলথ সার্ভিসেসের হিউম্যান রিসোর্স কো-অর্ডিনেটর ইসমাত জেরিন বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর বাবাকে হারিয়েছি। করোনার এই সময়ে নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত দেশে যেতে পারিনি। প্রবাসজীবনের এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। হয়তো আগের মতো আমার জীবনে আর ঈদ আসবে না।

দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগের মাধ্যমে এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন প্রবাসীরা 

কানাডার অ্যাভম্যাক্স এভিয়েশনের হিউম্যান রিসোর্স কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ রাকিবুল কাইয়ুম বলেন, গত মাসে বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও মায়ের কাছে যেতে পারছি না, এর চেয়ে কষ্ট প্রবাসজীবনে আর কী হতে পারে?

কানাডার বারাকা এ্যপায়েরলের স্বত্বাধিকারী আরিফা রব্বানী বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা যে কী তা প্রবাসজীবনে মর্মে মর্মে আমরা উপলব্ধি করছি। আপনজনদের শেষ বিদায়টুকুও দিতে পারছি না। আমি এক সপ্তাহের ব্যবধানে বোন-ভাগ্নিকে হারিয়েছি। এখন বুঝি প্রবাসজীবন কী? আমরা আর কোনো আপনজন হারাতে চাই না।

এক দিন করোনামুক্ত হবে বিশ্ব। অচিরেই মিলন ঘটবে আপনজনদের। স্বজন হারানোর বেদনা ও আর্তনাদে আর যেন ভারী না হয়ে ওঠে প্রবাসজীবন, পবিত্র এই ঈদের দিনে পরম করুণাময়ের কাছে এমন প্রত্যাশা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

এমএআর/