কুয়ালালামপুর মসজিদ জামেকের বাইরে নামাজে অংশগ্রহণের দৃশ্য।

করোনা প্রভাবে মালয়েশিয়ায় নিষ্প্রাণ ঈদের নামাজ আদায় হয়েছে। লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করে ঈদের নামাজের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। ফলে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সতর্কতার সঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

এ ছাড়া সরকারের জারি করা বিধিনিষেধে বিদেশিদের মসজিদে প্রবেশ নিষেধ থাকায় বাইরে নামাজ আদায় করেছেন প্রবাসীরা। অনেকেই ঘরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আবার কেউ কেউ সূরাও গুলিতে নামাজ আদায় করেছেন।

সূরাও বায়তুল মোকাররামের খতিব হাফেজ মাওলানা ইকরামুল হক জানিয়েছেন, সরকারের বিধিনিষেধ মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরপর দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫০ জনের বেশি অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

এ দিকে দেশটিতে প্রায় আট লাখের বেশি বাংলাদেশি মহামারির বিপর্যয়ের মধ্যে নিষ্প্রাণ ঈদ উদযাপন করছেন। বিশেষ কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই সাদামাটা ঈদ পালন করছেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা।

করোনা মহামারি সঙ্কট ও পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার। অর্থনৈতিক সঙ্কটে তারা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। এ অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসীরা। ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। অনিশ্চিত সময়ে বছর ঘুরে আসা চিরচেনা ঈদের আবহে তারা ছন্দ মেলাতে পারছেন না।

গত বছরেও দুটি ঈদে খুশি বা আনন্দের একটুও রেশ লাগেনি মালয়েশিয়া প্রবাসী কয়েক লাখ বাংলাদেশির মনে।

বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে বড় বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হতো । কিন্তু করোনার কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় তা সম্ভব হয়নি। কয়েক হাজার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মাথায় উঠেছে হাত। করোনার ধাক্কায় ছন্দ মেলাতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এবারও করোনার কারণে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে গত বছর ছুটিতে দেশে যাওয়া প্রবাসীদের। তারা স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন কি না তাও অনিশ্চিত। অনেকে প্রবাসে কাটাচ্ছেন কর্মহীন অবস্থায় আর দিন গুণছেন সুদিনের প্রত্যাশায়।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেছেন, বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১২ মে থেকে আগামী মাসের ৭ জুন পর্যন্ত চলবে এমসিও। লকডাউনের মধ্যে অর্থনীতি সচল রাখতে অর্থনৈতিক ও উৎপাদন খাতগুলো যথারীতি খোলা থাকছে। আন্তঃজেলায় যাতায়াত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও সভা সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের অনুষ্ঠান, ঈদের নামাজ, মসজিদ ও উপাসনালয়গুলো বেঁধে দেওয়া সীমিত সংখ্যক উপস্থিতিতে পরিচালিত হতে পারে। অফিস ও প্রাইভেট সেক্টরে ৩০ শতাংশ স্টাফ কাজ করতে পারবে, বাকিরা বাসায় অফিসের কাজ করতে হবে।

এ দিকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ও মালয়েশিয়ান নাগরিকসহ সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি দেশে অবস্থিত প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার বলেন, এ মহাদুর্যোগের সময়ে যে কঠোর জীবন-যাপন পদ্ধতি চলছে, এর মধ্যেও ধর্মপ্রাণ প্রবাসী ভাই ও বোনেরা এক মাস রমজানের রোজা রেখেছেন। একমাস সিয়াম সাধনার পরে এসেছে ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে মালয়েশিয়া সরকার নিয়ম-কানুন দিয়েছে প্রবাসী ভাইয়েরা সেই নিয়মকানুন পালন করে ঈদ উদযাপন করবেন। তিনি সবার এবং প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করেছেন।

হাইকমিশনার বলেন, এখন এক কঠোর ও অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছে গোটা বিশ্ব, এ খারাপ সময় থাকবে না, আমাদের সুদিন আসবেই।

এসএম