ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্তর্ভুক্ত মাল্টা দ্বীপ থেকে আরও ১৫৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাল্টা প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি। খবরটি জানাজানি হলে প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, এসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে মাল্টায় প্রবেশ করেছেন।

এর আগে ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয় মাল্টা থেকে। বিশেষ একটি বিমানে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে মাল্টা সরকার। তবে অভিযোগ উঠেছে, এসব বাংলাদেশিকে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো সহযোগিতা করছে না বরং তাদের পাঠাতে আউট পাস দিয়ে মাল্টা সরকারকে সহায়তা করা হয়েছে। 

মাল্টায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক ও মানবিক আশ্রয় চেয়েছিলেন দেশটির সরকারের কাছে। অন্যদিকে, মাল্টায় কোনো দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস না থাকায় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দূতাবাস অবগত রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাল্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান জানান, আমরা ১৫৮ বাংলাদেশিকে পাঠানোর খবরটি নিশ্চিত হয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের রাখার জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শও করেছি। আইনের মাধ্যমে তাদের রাখা সম্ভব তবে এথেন্স দূতাবাস কোনো সহযোগিতা না করলে কাজটি করা অসম্ভব। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদূত ও কাউন্সিলর মাল্টায় অবস্থান করছেন, যতটুকু জেনেছি আউট পাস দেওয়ার জন্য। তিনি এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে সোমবার এথেন্সে অবস্থিত গ্রিস বাংলাদেশ দূতাবাসের জরুরি বিভাগে ফোন করা হলে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ ও কাউন্সিলর মো. খালেদ মাল্টার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফ্রান্সে অবস্থিত সামাজিক সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমাদের সংগঠন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ইউরোপে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সর্বাত্মক স্বার্থরক্ষার জন্য। তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চুক্তি অনুযায়ী ৯৩ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে জনপ্রতি ১০ হাজার ইউরো দিয়ে দেশে পাঠানোর কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত একজনকেও তা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়নি। দীর্ঘ কয়েক বছর ওই বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে মাল্টায় অবস্থান করছেন। তার মধ্যে কিছু বাংলাদেশি জেল খেটে বের হয়েছেন।

এর আগে ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মো. খালেদ বলেছিলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়। ‘স্ট্যান্ডার অপারেটিং প্রসেডিওর ফর রিটার্ন অব ইরেগুলার বাংলাদেশি ন্যাশনাল লিভিং ইন ইউরোপ’ নামে এ চুক্তির আওতায় যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী অনিয়মিতভাবে ইউরোপে বা মাল্টা প্রবেশ করে এবং আইনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করার পরও তারা যদি বৈধ হতে না পারে, সেক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেবে।

এ ব্যাপারে মাল্টা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। কত কষ্ট করে জমি বিক্রি করে, ধার দেনা করে এসে ফেরত চলে গেলে প্রবাসীদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে। তবে আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক টাকা খরচ পড়বে,
মাথা পিছু প্রায় দুই লাখ টাকা করে লাগবে। সমস্যা হলো ১৫৮ জন বাংলাদেশি। এটা দূতাবাসের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা চাই তারা মাল্টা থেকে কাজ করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করবে।

বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে অস্ট্রিয়া থেকে আয়েবার অন্যতম সহ-সভাপতি আহমেদ ফিরোজ মাল্টা যান। সেখানে গিয়ে তিনি বিস্তারিত জেনেছেন। পরে রোববার মাল্টার স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে আয়েবা সহ-সভাপতি সংগঠন থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং পুরো ঘটনাটি সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের অবহিত করবেন বলে জানান। এ সময় আলোচনায় অংশ নেন- মালটা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজেম আলী স্বপন, সহ-সভাপতি মুন্সী জাকারিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব দাস, প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, শাওন, মিল্টন, শহিদসহ মাল্টা বাংলাদেশ কমিউনিটির আরও অনেকে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বুধবার (২৩ জুন) মাল্টা বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে এথেন্স বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এসএসএইচ