বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো সিরামিক পণ্য আমদানি ও বিপণন শুরু করেছে মুন্নু মালয়েশিয়া এসডিএন.বিএইচডি। 

এ উপলক্ষে বুধবার (১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ারের সঙ্গে মুন্নু মালয়েশিয়া এসডিএন.বিএইচডির সিইও ও ডিরেক্টর মাহবুব আলম ও কে-লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল এসডিএন বিএইচডির’র ডিরেক্টর এবং যুগ্ম মহাসচিব বিএমসিসিআই দাতো গুনাহলাম সুব্রামানিয়াম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা সিরামিক পণ্য বাজারজাতকরণে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের উদ্বোধন করেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার। এ সময় হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও কাউন্সেলর (বাণিজ্যিক) মো. রাজিবুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।

হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার বলেন, রফতানিবাজার হিসেবে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মালয়েশিয়ায় রফতানিবাজার অধিকতর সম্প্রসারিত হলে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশেও রফতানির দ্বার উন্মোচিত হবে। এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকমিশন নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ, মালয়েশিয়ার ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি (ডিএফ, কিউএফ) লিস্টে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলা ও ইভেন্টে অংশগ্রহণ। এছাড়া মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে নিয়মিত রোডশো ও ব্র্যান্ডিং-অনুষ্ঠান আয়োজন ইত্যাদি।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের মোট রফতানি ছিল ২৩২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে রফতানি বাজার ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য ক্রমবর্ধমানভাবে প্রসারিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রফতানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১১ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯১ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৪০ দশমিক ০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৩৫ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০০ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়ার বাজারে সিরামিকের পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, হিমায়িত মাছ, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, মসলা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, আলু, টেবিলওয়্যার ও হালাল খাদ্যপণ্য রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কৃষিজাত পণ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে মালয়েশিয়ায়।

একইভাবে মালয়েশিয়া থেকে পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪০৬ দশমিক ৭০, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯০৩ দশমিক ১০, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০৮৪ দশমিক ১০, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২৮৭ দশমিক ৫০, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯৫২ দশমিক ৩০, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০১৭ দশমিক ৫০, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪১০ দশমিক ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আমদানিজাত পণ্যগুলো হলো- ভোজ্যতেল, পেট্রোলিয়ামপণ্য (গ্যাসোলিন), ইলেকট্রনিক সামগ্রী, রাসায়নিক, ইস্পাত, রাবার, আসবাব ইত্যাদি।

ওএফ