মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বহু সংস্কৃতির দেশ কানাডায় একের পর এক নির্মিত হচ্ছে শহীদ মিনার। তাই এ বছর উচ্ছ্বসিত প্রবাসী বাঙালিরা ভিন্ন অনুভূতি আর চেতনায় পালন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, মাতৃভাষার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা জাগিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োগ ঘটাতে হবে— এমন প্রত্যয় নিয়ে বাঙালির ঐতিহ্যের অহংকার শহীদ মিনার, ভাষা স্মৃতিসৌধ ভ্যাঙ্কুভারে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। গত বছর টরোন্টোর পরে বর্তমানে ম্যানিটোবায় ও উইন্ডসরে নির্মাণাধীন রয়েছে।

মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়ার এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলে ছিল মহান ভাষা আন্দোলন। প্রবাসী বাঙালিরা মনে করেন, শহীদ মিনার জাতীয় ঐক্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক। এ অহংকার বাঙালির জাতীয়তাবাদের চেতনা। একুশের মধ্যে যে বাঙালি জাতীয় চেতনা ও আবেগ আছে, তা প্রচণ্ড শক্তি হিসেবে এখনও বর্তমান।

কানাডার ব্যারিস্টার ও সলিসিটর চয়ানিকা দত্ত বলেন, শহীদ মিনার হলো ভাষার প্রতীক, প্রত্যেকের মাতৃভাষার প্রতীক। আমাদের জন্য, বাংলাদেশিদের জন্য মাতৃভাষাটা অনেক অনেক, অনেক কাছের একটা জিনিস।

কানাডার নতুন দেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যানারে এই শহীদ মিনার পশ্চিমের বহু সংস্কৃতির দেশে বাংলাদেশ হয়ে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমা সংস্কৃতিকে জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ভাবগাম্ভীর্য এবং সমৃদ্ধ অবস্থান।

কানাডার এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. বাতেন বলেন, শহীদদের রক্ত কখনও বৃথা যায়নি। ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও অন্যান্যরা ভাষার জন্য যে রক্ত দিয়েছেন, তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।

বিশিষ্ট কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, ‘একুশ’ বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিমূল। পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি, যাদের রক্ত দিয়ে ভাষার জন্য লড়াই করতে হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় সমৃদ্ধ হয়েই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির সঠিক ইতিহাসকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে।

বাঙালি জাতির অস্থিমজ্জায় ভাষায় ও সংস্কৃতিতে এবং ইতিহাসে যে চেতনা গাঢ় হয়ে মিশে আছে, তাকে ধ্বংস করা, কলুষিত করা সহজ নয়। একুশের মিছিল, একুশের স্লোগান, একুশের গান সেই অপশক্তিকে বারবার রুখে দিয়েছে, এখনও রুখবে এমনটাই মনে করেন কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এসএসএইচ