প্রতীকী ছবি

‘সাহাবী’ একটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সঙ্গী, সাথী। পরিভাষায় সাহাবী বলা হয়, যারা ঈমান অবস্থায় নবী করীম (সা.) -এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং মুমিন অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকেই ‘সাহাবী’ বলা হয়। (কাওয়াইদুল ফিকহ, সাইয়েদ মুফতি মুহাম্মাদ আমীমুল এহসান, পৃষ্ঠা-৩৪৬, আল ইসাবাহ ফি তাময়ীযিস সাহাবাহ ১/১৭৭)

সাহাবীগণের সংখ্যা লক্ষাধিক। নবী-রাসূরগণের পরই তাদের মর্যাদা। কোরআন ও হাদিসে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। তারা আল্লাহ তাআলার মনোনীত জামাআত বা কাফেলা। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যাদেরকে আমি মনোনীত করলাম। (সূরা ফাতিরা, ৩৫ :৩২)

এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তাআলা নবী-রাসূলগণের পর সমস্ত বিশ্ব ভূ-ম-লে আমার সাহাবীগণকে মনোনীত করেছেন। (মুসনাদে বাযযার, সূত্র : মাকামে সাহাবী, পৃষ্ঠ-৬০, মুফতি মুহাম্মাদ শফী রহ.; আল জামি লি আহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতবী, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠ-১৯৬)

সাহাবিরা যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁরা সত্য ও ন্যায়ের মাপকাঠি। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি তাঁদের একনিষ্ঠ ভালোবাসা, ইসলামের জন্য ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ তাঁদের চির স্মরণীয় করেছে ইতিহাসের পাতায়। তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য তারকাতুল্য ও অনুসরণীয়।

মুহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরাজি (রহ.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, রাসুল (সা.)-এর সাহাবি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সবাই জান্নাতবাসী হবেন—যদিও দুনিয়াতে তাদের কারো দ্বারা ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, এ কথা আপনি কোথা থেকে বলছেন? 

তখন এই আয়াত পাঠ করলেন, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথমে ঈমান এনেছে এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানরাজি তৈরি করে রেখেছেন, যার তলদেশে নহর বহমান। তাতে সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সাফল্য।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত :  ১০০; মাআরিফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৯১)

আল্লাহ রাসুল (সা.) ও তার সাহাবির জন্য যথেষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি এবং যেসব মুসলমান আপনার সঙ্গে রয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৪)

সাহাবিদের মর্যাদা এবং ফজিলত সম্পর্কে এসেছে অসংখ্য হাদিস। এক হাদিসে আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন ‘তোমরা আমার সাহাবিদের গাল-মন্দ করো না। কেননা তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচের সমান সাওয়াবে পৌঁছুতে পারে না।’ (বুখারি : ৩৩৯৭)

 জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘জাহান্নামের আগুন সে মুসলমানকে স্পর্শ করতে পারে না, যে আমাকে দেখেছে অর্থাৎ আমার সাহাবিরা কিংবা আমাকে যারা দেখেছে তাদের দেখেছে অর্থাৎ তাবেয়িরা।’ (তিরমিজি: ৩৮০১)

আরেক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে আমার সাহাবিদের কষ্ট দিল সে যেন আমাকে কষ্ট দিল, যে আমাকে কষ্ট দিল সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল; যে আল্লাহকে কষ্ট দিল অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৯৬৪১)।

এনটি