রমজান গুনাহ মাফ ও তাকওয়া অর্জনের মাস। এ মাসে বেশি বেশি আমল করে পরকালের পুঁজি সংগ্রহ করা উচিত। মুমিনদের জন্য রমজানে অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের সুযোগ দিয়ে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা। এ মাসে অল্প আমলেই অনেক বেশি ফজিলত।

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায় করলো। (শুআবুল ঈমান : ৩/৩০৫-৩০৬)

এ মাসে ফরজ আমলগুলোর পাশাপাশি নফলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কারণ কেয়ামতের দিন যখন মানুষের ফরজ ইবাদতে কোনও ঘাতটি দেখা দেবে আল্লাহ তায়ালা নফলের মাধ্যমে তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন বান্দার যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামাজ) খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যদি তার ফরজের (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে। -(আবু দাউদ ৮৬৪, তিরমিজি ৪১৩, ইবনে মাজাহ ১৪২৫)

নফল ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর রাসুলের কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল তাহাজ্জুদের নামাজ। এক হাদিসে তিনি বলেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা মহররমের। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩)

তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি আল্লাহর রাসুল এতোটাই গুরুত্ব দিতেন যে, শেষ রাতে নামাজে দাঁড়ালে শরীরের প্রতি কোনও ধরণের খেয়াল থাকতো না। তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত এতোটাই দীর্ঘ করতেন যে তার পা ফুলে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রাতে নামাজ আদায় করতেন; এমনকি তাঁর পা ফুলে যেত। আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত কষ্ট করেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৭)

রমজানে অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো তাহাজ্জুদের প্রতিও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। তিনি রমজানে অধিক পরিমাণে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে তিনি ইতেকাফ করতেন এবং রাত্রি জাগরণ করতেন। এ সময় তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও রাতে আমলের জন্য ডেকে দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তাঁর পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে তাহাজ্জুদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তবে তিনি অবশ্যপালনীয় বিষয় হিসেবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করবেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২১৯৭)

এনটি